স্মারক নোটকে ১০০ টাকার নতুন নোট বলে দাবি

Published on: April 22, 2024

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ব্যাংক নোটের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, এটি বাংলাদেশের নতুন ১০০ টাকার নোট! তবে ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, আলোচিত ব্যাংক নোটটি ২০২২ সালের ২৬ জুন “পদ্মা সেতু” উদ্বোধনকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত একটি স্মারক নোট (Commemorative note), যা দিয়ে বাজারে কোন লেনদেন করা সম্ভব নয়। তবে, সংগ্রহের স্বার্থে যে কেউ টাকার বিনিময়ে এই স্মারক নোটটি কিনতে পারবেন। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লেখ্য, বিভিন্ন বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগেও ২৫ টাকা, ৪০ টাকা, ৫০ টাকা, ৬০ টাকা, ৭০ টাকা, এবং ১০০ টাকার স্মারক নোট ইস্যু করেছিল। যেহেতু আলোচিত ১০০ টাকার স্মারক নোটটি বিনিময়যোগ্য নয়, সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোর দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে। 

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিটি যথাযথ কিনা তা যাচাই করতে আমরা আলোচিত ১০০ টাকার নোটটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি। আমাদের পর্যবেক্ষণে উক্ত নোটটির সম্মুখভাগের (Obverse) কেন্দ্রে “একশত টাকা” এবং তার নিচে যথাক্রমে, “স্মারক নোট” এবং “বিনিময়যোগ্য নয়” কথাগুলো লেখা পাওয়া যায়। তাছাড়া, নোটটির বিপরীত (Reverse) অংশে উপরে ডানপাশে “Padma Bridge – The symbol of national pride” লেখাটির নিচে ইংরেজি বড় অক্ষরে “COMMEMORATIVE NOTE” (স্মারক নোট) লেখা রয়েছে। পরবর্তীতে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে স্মারক নোট সম্পর্কিত তথ্যের জন্য অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ১০০ টাকার নোটের অনুরূপ একটি নোট খুঁজে পাওয়া গেছে, যা ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ইস্যু করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে আগ্রহী ক্রেতারা ১০০ টাকার স্মারক নোটটি ক্রয় করতে পারবেন। 

এছাড়া, ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে বেশকিছু সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ১০০ টাকার স্মারক নোট অবমুক্তকরণ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। এমন কয়েকটি সংবাদ পড়ুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

অন্যদিকে, বাজারে প্রচলিত ১০০ টাকার ব্যাংক নোটের সম্মুখভাগে লেখা থাকে “চাহিবামাত্র ইহার বাহককে একশত টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে।” অর্থাৎ, উক্ত নোটটি বিনিময়যোগ্য বা যা দিয়ে লেনদেন করা সম্ভব। 

কিছুদিন আগে ঢাকা মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে ইস্যুকৃত পঞ্চাশ টাকার একটি স্মারক নোটকে নতুন পঞ্চাশ টাকার নোট বলে দাবি করা হয়েছিল। সেই সময় ফ্যাক্টওয়াচ বিষয়টি নিয়ে কাজ করে এবং দাবিটিকে বিভ্রান্তিকর বলে রায় দিয়েছিল। ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগেও বিভিন্ন উপলক্ষ, যেমন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণ জয়ন্তী, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, মেট্রোরেল উদ্বোধন, শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর ইত্যাদি উপলক্ষে ২৫ টাকা, ৪০ টাকা, ৫০ টাকা, ৬০ টাকা, ৭০ টাকা, এবং ১০০ টাকার স্মারক নোট ইস্যু করেছিল। 

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ১০০ টাকার নোটটি আসলে একটি স্মারক নোট যা দিয়ে কোনরকম লেনদেন করা সম্ভব নয়। 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিটিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh