যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ কী বাংলাদেশের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে?

Published on: January 11, 2024

যা দাবি করা হচ্ছেঃ  সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ফলাফল বাতিলের বার্তা দিয়েছে। ভিডিওটিতে আরো দাবি করা হচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বীকার করেছেন যে গত ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য হয় নি।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্তঃ দাবিগুলো বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ফলাফল বাতিলের বার্তা দেয়া নিয়ে যে দাবিটি করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য উৎসের কথা উল্লেখ করা হয় নি। মূলধারার সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসন্ধান করে এ ধরনের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। দ্বিতীয়ত, ইসি প্রধান হাবিবুল আওয়াল বিষয়ক দাবিটি মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা নির্বাচন কমিশনের বরাতে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে ইসি সচিবের একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়, তবে সেখানে তিনি নির্বাচন সুষ্ঠ বা গ্রহণযোগ্য হওয়া নিয়ে কোনো ধরণের মন্তব্য করেন নি।

গুজবের উৎস:

শেয়ারকৃত ফেসবুকে ভিডিওটি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

শেয়ারকৃত ভিডিওটির উল্লেখিত দাবির সত্যতা যাচাই করতে কিছু প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ফলাফল বাতিলের বার্তার যে দাবিটি করা হয়েছে, সেটিরও কোনো সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য উৎসের কথা উল্লেখ করা হয় নি। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে কোনো বার্তা দেয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।

তবে, নির্বাচনে সব দল অংশ না নেয়া ও ভোটের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক, বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার এবং আটকাবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ফলাফল বাতিলের বার্তার যে দাবিটি সেটি বিভ্রান্তিকর।

অন্যদিকে, ইসি প্রধানের “স্বীকারোক্তি” সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হলে, মূলধারার গণমাধ্যম থেকে কোনো ধরণের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। অনুসন্ধানে “মুখোমুখি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল” শিরোনামে “DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়” ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ৮ জানুয়ারি, ২০২৪ এ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সামগ্রিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইসি প্রধান হাবিবুল আওয়ালের সাক্ষাৎকার নেন। তবে সেখানে ইসি প্রধানকে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এমন কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায় নি।

উল্লেখ্য, ভিডিওটিতে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, “RTV” এর একটি লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। এর সূত্র ধরে গুগল রিভার্স ইমেজে সার্চ করা হয়। সেখানে, গত ৭ই জানুয়ারি ২০২৪ এ আরটিভির ফেসবুক থেকে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায় ।

“দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল নিয়ে ব্রিফ করছেন ইসি সচিব” শিরোনামে প্রকাশিত এই লাইভ ভিডিওটি মূলত গত ৭ই জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে ফল প্রকাশ নিয়ে। মূল লাইভ ভিডিওটিতে, ইসি সচিব জাহাংগীর আলম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সামনে ফলাফল প্রকাশ করছিলেন। ভাইরাল ভিডিওতে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রেস বিফ্রিং এর ফাঁকে অনেক ধরণের আলাপচারিতা শোনা যায়, তবে সেখানে ইসি সচিব নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে “স্বীকারোক্তি” দিয়েছেন এমন শোনা যায় নি।

তাই সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল ভিডিও এর দাবিগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh