৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের টাকা সৌদি সরকার দিচ্ছে না

Published on: January 29, 2023

“সৌদি আরবের অর্থায়নে নতুন নির্মিত নান্দনিক চৌদ্দগ্রাম গ্রান্ড মসজিদ।”– এমন শিরোনামে একটি মসজিদের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি বাংলাদেশ সরকারের ৫৬০ টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের আওতাধীন একটি মসজিদ। শুধুমাত্র এই মসজিদটিরই নয় বরং, এই পুরো প্রকল্পের সম্পুর্ণ অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার, সৌদি সরকার নয়। শুরুতে সৌদি সরকারের অর্থায়ন করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

আওয়ামী লীগের  ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি অংশ ছিল প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি উন্নত মসজিদ নির্মাণ করা । সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সারা দেশে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর পর নিজস্ব অর্থায়নে এটি সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

২০২১ সালের ১০ জুন  শেখ হাসিনা ৫৬০ টি মডেল মসজিদের মধ্যে প্রথম দফায় ৫০ টি মসজিদ উদ্বোধন করেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১৬ জানুয়ারি আরও ৫০ টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় দফার এই ৫০ টি মডেল মসজিদের মধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া মসজিদটির নাম খুঁজে পাওয়া যায়।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্ট গুলোতে দাবি করা ছচ্ছে যে, এই প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে সৌদি সরকার। তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, সারা দেশে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করার পর সৌদি সরকারকে অনুরোধ করা হয় এই প্রকল্পে অর্থায়ন করার জন্য। তখন সৌদি আরব ৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা প্রদান করার আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রকল্প হাতে নেওয়ার ১ বছরের মধ্যেও সৌদি অর্থায়ন না পাওয়ায় বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করে।

২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথম দফায় উক্ত প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক ( জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। একনেক থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর এই প্রকল্পে সৌদি সরকার অর্থায়ন করবে কি না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। এমতাবস্থায়, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর একনেক ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় এই প্রকল্পের সংশোধনীর অনুমোদন দেয়। একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর একনেকের ওয়েবসাইটে প্রকল্পটির সংশোধিত অনুমোদন প্রকাশিত হয়। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, প্রকল্পটি সম্পুর্ণভাবে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে।

তাছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের ওয়েবসাইটে এই ৫৬০ টি মডেল মসজিদের নির্মাণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের টেন্ডার খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে অর্থের উৎস হিসেবে সুনির্দিষ্ট ভাবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকারের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। তার একটি নমুনা নিচে দেয়া হলঃ

অন্যদিকে, দ্য ওয়াশিংটন টাইমসে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে ৫৬০ টি মডেল মসজিদের অর্থায়ন সংক্রান্ত সৌদি আরবের তৎকালীন সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রী ড. আওয়াদ আল-আওয়াদের একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। সেখানে তিনি বলেন,মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদি সরকার অর্থায়ন করার কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। বাংলাদেশে সরকারের কাছ থেকে অফিসিয়ালি প্রকল্পে অর্থায়ন করার অনুরোধ পাওয়ার পরেই চুক্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিবেচনা করবে সৌদি সরকার। এই ধরনের কোনো চুক্তি চূড়ান্ত হলে অবশ্যই উভয় দেশে তা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে“।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মূলধারার কিছু সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তিতে সৌদি সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়ন করতে অস্বীকার করে। কিন্তু তারা কোনো সোর্স ব্যবহার করেনি। আবার, কিছু সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়, সৌদি আরব এখনো অর্থায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়নি।

প্রকৃতপক্ষে, সৌদি সরকার এই প্রকল্পে অর্থায়ন করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও কোনো চুক্তি সই করেছিল কি না সে ব্যাপারে অন্য কোনো সোর্স থেকে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, দুই দেশের মধ্যে মডেল মজিদের অর্থায়ন সংক্রান্ত চুক্তির ব্যাপারে মুলধারার সংবাদমাধ্যমে নিশ্চিত কোনো তথ্য  পাওয়া যায়নি। তবে, তারা ৫৬০টি মডেল মসজিদে নির্মাণের অর্থায়ন না করলেও নতুন ৯টি আইকনিক মসজিদ নির্মাণে টাকা দিতে সম্মত হয়েছে। যার মধ্যে একটি নির্মিত হবে রাজধানীর পূর্বাচলে; বাকি আটটি  হবে বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে।

অর্থাৎ, সারা বাংলাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদে নির্মাণে সরকারি অর্থায়ন ছাড়া আর কোনো ধরণের অর্থায়নের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই ভিত্তিহীন এই দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh