Published on: January 27, 2023
সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাক, দেশ রূপান্তর, দৈনিক নয়া দিগন্ত, আমাদের সময়ের মতো দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা তাদের প্রকাশিত একটি সংবাদে দাবি করেছে যে, ষষ্ঠ শ্রেণীর বইতে বলা হয়েছে ‘মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি’। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, বইটিতে এমন কিছু বলা হয় নি, বরং মানুষ যে সরাসরি বানর থেকে সৃষ্টি — এই ধারণাকে ভুল বলা হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে। |
গুজবের উৎস
গত ২৫ জানুয়ারি ‘ষষ্ঠ শ্রেণিতে ডারউইনের মতবাদ বাদ দেওয়ার চিন্তা’ শিরোনামে দেশ রূপান্তর পত্রিকা, ২৬ জানুয়ারি ‘পাঠ্যবই থেকে বাদ যাচ্ছে ডারউইনের তত্ত্ব!’ শিরোনামে ইত্তেফাক ও আমাদের সময় পত্রিকা রিপোর্টগুলো প্রকাশ করে। এছাড়াও গত ২০ জানুয়ারি নয়া দিগন্তের মতামত বিভাগে ‘স্কুলের নতুন পাঠ্যসূচিতে বিবর্তনবাদ‘ শিরোনামের আর্টিকেলে এমন দাবি করা হয়। ফেসবুকে এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুশীলন)’ বইটি পর্যালোচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। বইয়ের ১১৩ নাম্বার পৃষ্ঠায় দেখা যাচ্ছে, খুশি আপা নামক একজন কাল্পনিক শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর ‘মানুষের আদি পুরুষ বানর ছিল’ এই ধারণার বিপরীতে বলেন তথ্যটি ভুল, বানর মানুষের পূর্বপুরুষ নয়।
এ অংশটি পত্রিকাগুলোর ‘মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি’ , ‘মানুষ আগে মূলত বানর ছিল’ , ‘পূর্বজন্মে মানুষ বানর ছিল’ – এসব দাবিকে খারিজ করে দেয়।
দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্ট
দেশ রূপান্তরের রিপোর্ট
আমাদের সময়ের রিপোর্ট
নয়া দিগন্তের আর্টিকেল
এছাড়া বইয়ের ১১৫ নাম্বার পেইজে আদিম মানুষকে একটিবারও বানর নয়, বরং বারবার প্রাচীন মানুষ এবং সামাজিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বইয়ের ১১৩ এবং ১১৪ নাম্বার পৃষ্ঠায় খুশি আপা শিক্ষার্থীদের সাথে বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সের আবির্ভাব নিয়ে আলোচনা করেন। ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘বিভিন্ন সময়ের মানুষ’ শিরোনামে একটি ফলো চার্ট দেখা যায়। এখানে মানব প্রজাতিগুলোর নাম রয়েছে যথাক্রমে অস্ট্রালোপিথেকাস (Australopithecus), হোমো হ্যাবিলিস (Homo Habilis), হোমো ইরেক্টাস (Homo Erectus), হোমো স্যাপিয়েন্স (Homo Sapiens), হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স (Homo Sapiens Sapiens)।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে, অস্ট্রালোপিথেকাস হোমিনিনি (Hominini) বংশের অন্তর্ভুক্ত। এই হোমিনিনি বংশ আরও দুটি বংশ নিয়ে গঠিত – হোমো (Homo) বা মানুষ, এবং প্যান(Pan) অর্থাৎ শিম্পাজি এবং বনোবো। পরবর্তী প্রজাতি হোমো হ্যাবিলিস, নামের শুরুতে হোমো থাকায় পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে এ প্রজাতিটি বানর নয়, আদি মানুষ। একইভাবে হোমো ইরেক্টাস, হোমো স্যাপিয়েন্স, হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ অর্থাৎ আমরা)- এর জন্যও এই যুক্তিটি খাটছে। অর্থাৎ ছবিগুলোর কোনোটিই বানরের নয় বরং এরা মানুষেরই বিভিন্ন সময়ের আদি ও বর্তমান রূপ।
নিচের ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, হোমো হ্যাবিলিস, হোমো ইরেক্টাসকে ‘Archaic Human’ অথবা প্রাচীন মানুষ হিসেবে এবং হোমো স্যাপিয়েন্স, হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্সকে আধুনিক মানুষ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, অস্ট্রালোপিথেকাস থেকে শুরু করে কোনো প্রাচীন মানব প্রজাতিকেই বানর বলে দাবি করা হচ্ছে না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ষষ্ঠ শ্রেণীর বইতে বানর থেকে মানুষ এসেছে বলা হয়েছে – গণমাধ্যমের এই দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং বইটির একাধিক পৃষ্ঠায় এ ধারণা যে ভুল, সেটা উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও মানুষ বিবর্তনের ফসল হিসেবে ধাপে ধাপে বর্তমানের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে, একথা সেখানে বলা আছে। কিন্তু সরাসরি বানর থেকে মানুষ হয়েছে এমনটা না-থাকায় এসব পোস্টের মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |