জ্বালানী তেলের অভাবে বাংলাদেশের ৮ টি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছে?

Published on: December 31, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ জ্বালানী তেলের অভাবে বাংলাদেশের ৮ টি ট্রেন চলাচল বন্ধ।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। এই ৮ টি ট্রেন চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতা এড়াতে সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই ট্রেনগুলো মূলত রাতে চলাচল করত। বর্তমান পরিস্থিতিতে এগুলোর  নিরাপত্তা দেয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জন্য কিছুটা কঠিন। কিন্তু, এই ৮ টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ‘জ্বালানী তেলের অভাব’-এর উল্লেখ নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

বাংলাদেশের ৮ টি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছে কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত “বন্ধ হচ্ছে রাতে চলাচল করা চার জোড়া লোকাল ট্রেন” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে কতৃপক্ষ দেশে চলমান অবরোধ-হরতালের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে রাতে চলাচলকারী ৮ টি  লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এগুলো হচ্ছেঃ ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা এক জোড়া কমিউটার ট্রেন, ঈশ্বরদী-রাজশাহী-রোহনপুর রুটে এক জোড়া লোকাল ট্রেন, রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটে এক জোড়া মেইল ট্রেন ৩২/৩১ নম্বর উত্তরা এক্সপ্রেস এবং ময়মনসিংহ-ভূয়াপুর ২৫৩/২৫৪ নম্বর লোকাল ট্রেন।

এর মধ্যে ঈশ্বরদী-রাজশাহী-রোহনপুর রুটের ১ জোড়া লোকাল ট্রেন এবং ময়মনসিংহ থেকে ভূয়াপুর চলাচলকারী ২৫৩/২৫৪  লোকাল ট্রেন গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরপরে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী এক জোড়া কমিউটার ট্রেন গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ করা হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। তখন ট্রেনটির একটি বগির কয়েকটি সিট পুড়ে যায়। এরপরে গত ২১ ডিসেম্বর ৩২/৩১ নম্বর উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল বন্ধ করতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, “হরতাল-অবরোধে নাশকতা এড়ানোর জন্য পার্বতীপুর-রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করা উত্তরা এক্সপ্রেসটির চলাচল ২২ ডিসেম্বর থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হল”। অর্থাৎ রাজশাহী থেকে পার্বতীপুর চলাচলকারী ৩২/৩১ নম্বর উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন গত ২২ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ করা হয়েছে। ট্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে কোথাও ‘জ্বালানী তেলের অভাব’ কথাটির উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে রেলের ইঞ্জিনগুলোর জ্বালানি হচ্ছে ডিজেল। বর্তমানে বাংলাদেশে ডিজেলের সঙ্কট চলছে কি না নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, গত ২৯ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে জ্বালানী সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে ডিজেলের ক্ষেত্রে গতানুগতিকের চেয়ে কম রিজার্ভ থাকার কারণে এর সরবরাহ বজায় রাখা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। গত ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট ডিজেলের মজুদ ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টন। এই মজুদ দিয়ে ১৪ থেকে ১৫ দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদের বক্তব্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ডিজেলের মজুদ রয়েছে, যার সাথে পরবর্তিতে আরও ডিজেল যুক্ত হচ্ছে।

যেহেতু নির্ভরযোগ্য মাধ্যম এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন রুটের ৮ টি ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে জ্বালানী তেলের অভাবকে নয় বরং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh