Published on: July 24, 2022
২১ জুলাই ২০২২ তারিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, “ভোজ্যতেলের লিটারে দাম কমলো ৫৩ টাকা” । উক্ত পোস্টটির কারণে সাধারণ ব্যবহারকারীরা ধারণা পেয়েছেন, সারা বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৫৩ টাকা কমে গেছে। তবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লিটারে ৫৩ টাকা দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের। উল্লেখ্য দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের মার্কেটে প্রতিটি আমদানি পণ্য সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে বেচাকেনা হয়। এদিকে সরকারের শেষ নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা করা হয়েছে । নতুন এ দাম ২১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। |
ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
“ভোজ্যতেলের লিটারে দাম কমলো ৫৩ টাকা” এই পোস্টটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
১৯ জুলাই ২০২২ তারিখে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) থেকে ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে লিটারে ৫৩ টাকা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। উল্লেখ্য দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের মার্কেটে প্রতিটি আমদানি পণ্য সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে বেচাকেনা হয়। বিশ্ববাজারে দাম উঠানামার সাথে এই বাজারটিরও দর বৃদ্ধি দর পতন ঘটে থাকে। অর্থাৎ এ বাজারের ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিক দাম বৃদ্ধি বা পতনের বিষয়টিও আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে থাকেন। যে কারণে বিগত কিছুদিন বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দরপতনের সাথে সাথে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও ভোজ্যতেলের ব্যাপক দরপতন হতে থাকে।
প্রথমআলোর তথ্য অনুসারে আন্তর্জাতিক বাজারের দরপতনের চিত্র দেখে নেয়া যাক:
যুক্তরাষ্ট্রের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধিত সয়াবিন তেলের দর উঠেছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৯৫০ ডলার। সে সময় প্রতি ডলার ৮৬ টাকা হিসাবে লিটারপ্রতি দর দাঁড়ায় ১৫৩ টাকা। গত বৃহস্পতিবার এই দর নেমে আসে টনপ্রতি ১ হাজার ৩১৮ ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের দরে (৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা) লিটারপ্রতি দর দাঁড়ায় ১১৩ টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে দরপতন হয়েছে ৬৩২ ডলার বা ৩২ শতাংশ। ভোজ্যতেলের ইতিহাসে কখনো এভাবে দরপতন হয়নি।
সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভোজ্যতেলের দাম লিটার প্রতি ৫৩ টাকা কমেছে। বাসসের প্রতিবেদন অনুসারে, খাতুনগঞ্জে চাক্তাইয়ের পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। তবে সরকারের কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা দেবে বলে মনে করেন খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের শীর্ষ পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি ভোজ্যতেল বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বেশকিছু প্রতিবেদনের আলোচনা দেখে নেয়া যাক-
ভোজ্যতেলের বিষয়টি নিয়ে ১৭ জুলাই ২০২২ তারিখে প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের বড় ধরনের দরপতন হলেও দেশের বাজারে দাম কমছে ধীরগতিতে। দাম সমন্বয়ের এ অহেতুক বিলম্ব কার স্বার্থে করা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন তুলে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম দ্রুত সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়” ।
প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
১৭ জুলাই ২০২২ তারিখ রাত ৮:২০ মিনিটে বাংলা ট্রিবিউন থেকে প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
রবিবার (১৭ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই আলোকে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে আজ দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে এই মূল্য তালিকা কার্যকর হবে বলে তিনি জানান” ।
সুতরাং ক্যাবের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা কমিয়েছে সরকার।
এদিকে ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী নতুন এ দাম সেদিন থেকে কার্যকর হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
লিটারে ৫৩ টাকা দাম কমার বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ বাজারের। এর প্রভাব খুচরা বাজারে এখনো পড়ে নি। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খুচরা বাজার থেকে এ দামে ভোজ্যতেল ক্রয় করতে পারবে ভোক্তা। সুতরাং “ভোজ্যতেলের লিটারে দাম কমলো ৫৩ টাকা” দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ আংশিক মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |