বরফ হয়ে যাওয়া নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ছবিটি কি ১৯৩২ সালে তোলা?

Published on: March 1, 2023

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে যেটাকে ১৯৩২ সালের হিমায়িত নায়াগ্রা জলপ্রপাত এর ছবি বলে দাবি করা হচ্ছে এবং ঘটনাটা বিরল বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে , নায়াগ্রা জলপ্রপাত হিমায়িত হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা বিরল কোন ঘটনা না। ছবিটি কবে তোলা হয়েছে তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে তবে বেশিরভাগ সূত্র বলছে ছবিটি ১৯০৯ সাল অথবা ১৯১১ সালের হতে পারে। তবে বিশ্বস্ত কোন সূত্রে ছবিটিকে ১৯৩২ সালের বলে দাবি করা হচ্ছে না। এজন্য ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসবে চিহ্নিত করছে। 

গুজবের উৎস

কয়েকটি ভাইরাল পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে “আমি জানতে চাই”  পেজের মনোগ্রাম দেখা যাচ্ছে।  অনুসন্ধানে দেখা গেল, এই পেজ থেকেই গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি থেকে এই গুজবটা ছড়ানো হয়েছে।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল হওয়া ছবিটিকে গুগল ইমেজ সার্চ দিলে Daily Mail UK থেকে ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বরফে জমে যাওয়া নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বিভিন্ন ছবি দেখা যায়। সেখানে ভাইরাল হওয়া ছবিটিও দেখতে পাওয়া যায়। তবে ছবিটির সময়কাল ১৯৩২ সাল নয় বরং ১৯১১ অথবা ১৯১২ সাল বলে দাবি করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনে এই ছবির চিত্রগ্রাহক কে তা জানা যায় নি বলেও দাবি করা হয়। এজন্য ছবিটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

ZME SCIENCE নামক ওয়েবসাইটের লেখা নিবন্ধেও বলা হচ্ছে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ভাইরাল হওয়া ছবিটি ১৯১১ সালের।

তবে নায়াগ্রা ফলস পাবলিক লাইব্রেরির ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে ছবিটি ১৯০৯ সালের।

ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট  AjjTak  এবং Snopes   এর করা রিপোর্টেও বলা হচ্ছে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ভাইরাল হওয়া ছবিটির সময়কাল ১৯১১ সাল অথবা ১৯০৯ সাল হতে পারে।

 

তবে নায়াগ্রা জলপ্রপাত বরফে জমে যাওয়ার দৃশ্য বিরল কোন ঘটনা নয়। Niagara Falls USA নামক ওয়েবসাইটের একটা নিবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে প্রতিবছর শীতকালে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে বরফ জমে।তবে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে ঠাণ্ডা কত বেশি পরিমাণে পড়ছে তার উপর নির্ভর করে নায়াগ্রা জলপ্রপাত কতটুকু এবং কতদিন বরফে জমে থাকবে। মেরু ঘূর্ণির ঘটনার (polar vortex events) মতো চরম ঠাণ্ডা আবহাওয়া যখন আঘাত হানে তখন নায়াগ্রা জলপ্রপাত জমে থাকে এবং ফটোগ্রাফাররা হিমায়িত নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দারুণ কিছু ছবি তুলতে পারে। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে পোলার ভরটেক্স ইভেন্ট আঘাত হানে।

ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট Snopes এর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে ২০১৪ সাল ছাড়াও ২০০৭, ২০১১, এবং ২০১২ সালে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে পোলার ভরটেক্স ইভেন্ট আঘাত হানে।

উল্লেখ্য উইকিপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে নায়াগ্রা জলপ্রপাত নায়াগ্রা নদীর উপর অবস্থিত। মূলত তিনটি পাশাপাশি অবস্থিত ভিন্ন জলপ্রপাত নিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাত গঠিত। এই তিনটি জলপ্রপাতের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি, হর্স্‌শু ফল্‌স বা কানাডিয়ান ফলস যা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক স্টেটের সীমান্তে অবস্থিত। নায়াগ্রা জলপ্রপাত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র।

অতএব উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটা বলা যায় নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ভাইরাল হওয়া ছবিটি ১৯১১ সালের অথবা ১৯০৯ সালের। তবে ছবিটি ১৯৩২ সালের হবার কোন প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায়নি। তাছাড়া নায়াগ্রা জলপ্রপাত জমে যাওয়ার ঘটনাও বিরল কোন ঘটনা নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh