Published on: March 28, 2023
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যার ক্যাপশনে বলা হয়েছে এমন চাল আমরা খেয়ে থাকি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিডিওটিতে গাছ থেকে কাসাভা তৈরির প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। কাসাভা একটি বৈজ্ঞানিক নাম তবে বাংলাদেশে স্থানীয়দের মাঝে কাসাভার সর্বাধিক পরিচিতি রয়েছে শিমুল আলু নামে। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে বহুল পরিচিত সাবুদানা তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে কাসাভা ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ভিডিওটির সাথে চালের কোনো সম্পর্ক নেই, কেননা সেখানে সাবুদানা বা সাগু তৈরি করা হচ্ছে। সে কারণে এমন ক্যাপশনগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে। |
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
সাধারণত ধানগাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চাল উৎপন্ন করা হয়। তবে ভাইরাল ভিডিওটিতে যে গাছগুলো মাটি থেকে তোলা হয়েছে, সেগুলো কোনোভাবে ধানগাছ নয়। বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এই গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কাসাভা। বাংলাদেশে অনেক এলাকায় কাসাভা শিমুল আলু নামে পরিচিত। সীমিত পরিচর্যায় পাহাড়ি অনাবাদি এবং অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে কাসাভা চাষ করা যায়। বাংলাদেশে অনেক এলাকায় কাসাভা শিমুল আলু নামে পরিচিত হবার কারণ এই গাছটি দেখতে অবিকল শিমুল গাছের পাতার মতো। সাধারণত কাসাভা গাছের উচ্চতা হয় ৫ থেকে ৯ ফুট। দেশ রূপান্তর পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
উল্লেখ্য, এই প্রজাতির কাসাভা থেকে সাবুদানা বা সাগু তৈরি করা হয়। সাগু হল এক প্রকার কার্বোহাইড্রেট। যার বৈজ্ঞানিক নাম Metroxylon sagu। আমাদের দেশে অনেক আগে থেকে এই সাবুদানা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
সাগুদানার মূল উপাদান এক প্রজাতির পাম গাছ। টাপিওকা বা কাসাভা নামের পাম গাছের শক্ত কান্ড ও মূল থেকে সংগ্রহ করা হয় এই সাগু। প্রসঙ্গত, ভাইরাল ভিডিওটিতে আমরা কাসাভার মূল থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাগু বা সাবুদানা উৎপন্ন করতে দেখেছি। সাগু বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রথমে ময়দা আকারে পাওয়া যায়। একে ইচ্ছে করলে ময়দা আকারেও খাওয়া যায়। কিন্তু বাজারজাতের জন্য একে মেশিনের সাহায্যে দানা করে তারপর খাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। ঠিক যেমনটি আমরা ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখতে পেয়েছি। সাগুদানাকে ইংরেজিতে ‘সাগু পার্ল’ বলে। সাগু বা সাবুদানা নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে একটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
এটি সহজেই হজম হয়, তাই শিশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মানব শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়, পেশী সংকোচন এ সহায়তা করে এবং পানির ভারসাম্য রক্ষা করে। খুবই কম পরিমাণে চর্বি থাকায় হার্টের রোগীদের জন্য সাগু একটি আদর্শ খাবার।এটি উন্নত মানের কার্ব, ফাইবার ও ক্যালসিয়ামের উৎস। বহু দেশের অতি পরিচিত ও প্রিয় খাদ্য এই সাগুদানা। সাগুদানার অনেক ধরনের রেসিপি রয়েছে।
পৃথিবীর ৯০টির বেশি দেশে কাসাভা উৎপাদিত হয়। কাসাভায় সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ভাগ শর্করা, ১ থেকে ২ ভাগ প্রোটিন এবং ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ জলীয় অংশ থাকে। আলুর তুলনায় কাসাভায় দ্বিগুণের বেশি শর্করা থাকায় এটি আলুর চেয়েও বেশি পুষ্টিকর। যেখানে আলু–য় শর্করার মাত্র শতকরা ১৬.৩ ভাগ স্টার্চ হিসেবে থাকে, সেখানে কাসাভায় শতকরা ৪০ ভাগ শর্করায় ৯০ ভাগই স্টার্চ হিসেবে থাকে। এ ছাড়া কাসাভায় ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
কাসাভা চাষ নিয়ে Business Report এর একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য, আফ্রিকার অনেক দেশের প্রধান খাদ্য কাসাভা দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও। দেশের কয়েকটি জেলায় কৃষকরা কাসাভা চাষ করছেন।
বলাবাহুল্য, ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, উক্ত কারখানাটিতে চাল তৈরি করা হচ্ছে এবং সেই চাল আমরা খাচ্ছি। এমন ক্যাপশনের মূল বক্তব্য আমরা খুব খারাপ ধরণের চাল খেয়েছি। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। তারা অনেকেই মন্তব্য করেছিল এটি চাল তৈরির ভিডিও নয়। কেউ কেউ ভিডিওটিকে সাবুদানা তৈরির প্রক্রিয়া বলেছিলেন। কেউ বা এটিকে কাসাভা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। যে কারণে কাসাভা প্রক্রিয়া করণের মাধ্যমেই যে সাবুদানা তৈরি করা হয় সে বিষয়টি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়েছে।
যেহেতু ভিডিওটির ক্যাপশনে এটিকে চাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক ক্যাপশনগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |