শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি কি বিস্ফোরিত হতে পারে?

Published on: August 17, 2022
Fact-File

সাম্প্রতিককালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলেকা থেকে ‘এসি বিস্ফোরণ’ এবং এর ফলে হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে জানা যাচ্ছে, এগুলো এসি বিস্ফোরণ ছিল না, বরং অন্য কোনো কিছুর বিস্ফোরণকে এসির বিস্ফোরণ বলা হচ্ছে । এসব খবরের কারণে এসি ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি এবং বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। জনমনে সৃষ্টি হওয়া বেশ কিছু বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য আমাদের এই ফ্যাক্ট ফাইল।  লিখেছেন -যন্ত্র প্রকৌশলী ও ফ্যাক্টওয়াচের ফ্যাক্টচেকার জহিরুল ইসলাম

এসি’র গঠন এবং কার্যপ্রণালী

AC বা Air Conditioner হল নির্দিষ্ট এলাকায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার একটা ব্যবস্থা । কোল্ড স্টোরেজ (হিমাগার) কিংবা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা ওষুধ সংরক্ষণাগার এর মত জায়গায় কঠোরভাবে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয় ।  আবার , ভিতরের বাসিন্দাদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে শপিং মল, রেস্টুরেন্ট,অফিস কিংবা বাসাবাড়িতেও প্রয়োজন হয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের্। এসব ক্ষেত্রে এসি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

একসময়ে এসি কে বিলাস পণ্য হিসেবে গণ্য করা হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে এসির ব্যবহার বেড়েছে বিপুল পরিমাণে । নয়া দিগন্তের এই রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে সারা দেশে সাড়ে চার লাখ সেট এসি বিক্রি হয়েছিল। প্রতিবছরই এই বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে

এসি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। বাসাবাড়িতে যে সকল এসি বেশি ব্যবহৃত হতে দেখা যায় , সেগুলো স্প্লিট টাইপ এসি নামে পরিচিত। এটাই সবচেয়ে কমন মডেল। এই মডেলের এসির দুইটা অংশ থাকে। একটা অংশ রুমের ভিতরে দেয়ালের সাথে ঝুলানো থাকে, এবং রুমের ভিতরে ঠাণ্ডা বাতাস দেয় (সাধারণত)। একে Indoor Unit বলে।

অন্য অংশটা  (Outdoor Unit) রুমের বাইরে লাগানো থাকে, এবং সেখান থেকে গরম বাতাস বের হয়। এসি চালানো হলে, রুমের ভিতরটা ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয় এবং বাইরের পরিবেশে সেই তাপটা আউটডোর ইউনিটের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
প্রতিটা ইন্ডোর এবং আউটডোর ইউনিট একে অপরের সাথে ইলেক্ট্রিক লাইন এবং গ্যাস পাইপের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।

গঠনের দিক দিয়ে ইন্ডোর ইউনিটটাকে ওয়াল টাইপ, সিলিং টাইপ, ক্যাসেট টাইপ , ডাক্ট টাইপ ইত্যাদি বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ইনডোর ইউনিট এবং আউটডোর ইউনিটকে একত্রে তৈরি করা হয় ,যাকে কমপ্যাক্ট/উইনডো/পোর্টেবল টাইপ এসি বলে। এসকল ক্ষেত্রে শীতল বাতাসের প্রবাহের অংশটা রুমের ভেতরের দিকে, এবং গরম বাতাসের প্রবাহের অংশটা রুমের বাইরের দিকে রাখা হয়।

এছাড়া শপিং মল এর মত বড় জায়গার ক্ষেত্রে মাল্টি স্প্লিট ( বাইরে একটা বড় আউটডোর ইউনিট এর সাথে ভিতরে একাধিক ইনডোর ইউনিট এর কানেকশন) ব্যবহৃত হয়।

অধিকাংশ এসির ক্ষেত্রে ,ইন্ডোর ইউনিট টা বাইরের পরিবেশের চেয়ে ভিতরের পরিবেশকে ঠাণ্ডা রাখে (কুলিং এসি)। তবে নির্দিষ্ট কিছু এসির ইন্ডোর বাইরের পরিবেশের চেয়ে ভিতরের পরিবেশকে গরম রাখে (হিটিং এসি)। এসব এসিকে সাধারণত মুড পরিবর্তন করে হিটিং কিংবা কুলিং দুই ভাবেই ব্যবহার করা যায়। এগুলো সাধারণত গ্রীষ্মকালে ঘর ঠাণ্ডা রাখতে কুলিং মুডে, এবং শীতকালে ঘর গরম রাখতে হিটিং মুডে চালানো হয়।

কেস স্টাডি

সাম্প্রতিক সময়ে , কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে, এবং সেই রুমে এসি উপস্থিত থাকলে অনেকেই সন্দেহ করেন, এসির বিস্ফোরণের কারণে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। ফেসবুকে কিংবা কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে “এসি বিস্ফোরণের কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে”-এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে।

তবে পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বহু ক্ষেত্রে আগুনের উৎস এসি ছিল না, বরং অন্য কিছু ছিল ।

এমন কয়েকটা ঘটনা দেখা যাক।

১। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে পত্র পত্রিকায় এটিকে ‘এসি বিস্ফোরণ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। (যেমন দেখুন এখানে, এখানে)

তবে পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়, এসির কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেনি। মসজিদের মাটির তলায় তিতাস গ্যাসের ত্রুটিপূর্ণ লাইন থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, মসজিদের নিচ দিয়ে (মেঝেতে) একটি গ্যাস পাইপ রয়েছে। আর এ পাইপের লিকেজ দিয়ে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়। মসজিদে এসি চলার কারণে দরজা জানালা সব বন্ধ রাখা হয়।  বাতাস বের হতে পারে না। ফলে নির্গত গ্যাস বের হতে পারেনি। বিস্ফোরণের আগে বিদ্যুতের কোনো কিছু জ্বালানোর সময় স্পার্কিং করে। আর সেই স্পার্কিং থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

এসময় দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিতাস গ্যাসের ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বহিষ্কার এবং তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল।

২। ২০২১ সালের ২৮শে জুন মগবাজারে একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে তাৎক্ষণিক ভাবে  ‘এসি বিস্ফোরণ’কে দায়ী করা হয় । যমুনা টিভির এই রিপোর্টে সেটাই জানানো হয়েছিল।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা মেট্রোর উপ পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন তাৎক্ষণিকভাবে সারাবাংলা ডট নেট কে জানান, জীবনে যত বিস্ফোরণের ঘটনা দেখেছেন তাতে এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ দেখেননি। এত ভয়াবহ বিস্ফোরণ কেবল এসি থেকেই হতে পারে।

তবে কয়েকদিন পরে উক্ত ভবনের নিচতলায় ,শর্মা হাউজে হাইড্রোকার্বন (দাহ্য গ্যাস, সাধারণত গ্যাস সিলিন্ডার কিংবা পাইপলাইনে এই গ্যাস পাওয়া যায়) এর উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান ৯% হাইড্রোকার্বনের কথা জানিয়েছিলেন ভোরের কাগজ কে।

পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও বলেছিলেন, গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। ভবনের ভেতরে এখনো মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে।

৩। ২০২১ সালের ৭ই এপ্রিল কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর বেঙ্গল ড্রাগস অ্যান্ড কেমিক্যাল ওয়ার্কস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামের একটি ওষুধ কারখানায় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ৩ জন আহত হয়। কারখানার প্ল্যান্ট সুপারভাইজার সুমন চন্দ্র দত্ত এবং কারখানার ম্যানেজার রেজাউল করিম দাবি করেন, এসি থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

তবে কালের কণ্ঠের এই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, বেঙ্গল ড্রাগ অ্যান্ড কেমিক্যাল ওয়ার্কস (ফার্মাসিউটিক্যালস্) নামের একটি ওষুধ কারখানায় অতিরিক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল মজুদ রাখা হয়েছিল। এই মজুদকৃত কেমিক্যাল থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকের ধারণা।


এসি থেকে কি অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে ?

এক কথায় এর উত্তর দেওয়া একটু কঠিন । আসুন, আগুনের কার্যকারণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

আগুন লাগার জন্য ৩ টা জিনিস দরকার হয় –

১। অক্সিজেন

২। উচ্চ তাপমাত্রা

৩। জ্বালানি

এই ৩ টা জিনিস দরকার হয় আগুন জ্বলতে। ( চতুর্থ আরেকটা উপাদান, আগুনের স্ফুলিঙ্গ মাঝে মাঝে দরকার হয়। তবে যথেষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা থাকলে সেটা লাগে না। এমনেই আগুন ধরে যায়।)

এই ৩ জিনিসকে একত্রে Fire Triangle বলে। এই ৩ টা জিনিসের কোনো একটা না থাকলে আগুন জ্বলবে না। বয় স্কাউট কিংবা অন্যান্য বিভিন্ন জায়গাতেই এই ফায়ার ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে ট্রেনিং দেওয়া হয়।

আগুনের কুণ্ডলীতে যদি পানি ঢেলে দেন ,তাহলে তাপমাত্রা কমে যাবে ,আগুন নিভে যাবে।

যদি আগুনের উপরে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দেন, কিংবা ফায়ার এক্সটিংগুইশার থেকে এমোনিয়াম বাই কার্বনেট এর ফোম নিক্ষেপ করেন, তাহলে অক্সিজেন পৌছাতে পারবে না আর। অক্সিজেনের অভাবে আগুন নিভে যাবে।

অগ্নিকুন্ডের জ্বালানি যদি শেষ হয়ে যায়, পোড়ানোর মত আর কিছু যদি বাকি না থাকে, তাহলে আগুন নিজে নিজেই নিভে যাবে। জঙ্গলের দাবানল এইভাবে নিজে নিজে থেমে যায় সব কিছু পোড়ানো শেষ করে।

এইবার চিন্তা করেন, আপনার বাসার এসিতে কি ফায়ার ট্রায়াঙ্গল তৈরি হতে পারে?

প্রথম পয়েন্ট- অক্সিজেন। এসি বেশ খোলামেলা জায়গাতেই থাকে। অক্সিজেনের ভালই সাপ্লাই আছে ,বাতাসের ২০% অক্সিজেন। অতএব, আগুন ধরা সম্ভব।

দ্বিতীয় পয়েন্ট- উচ্চ তাপমাত্রা। এসির ইনডোর ঠাণ্ডা হয়, আর আউটডোর গরম হতে থাকে (কুলিং এসির ক্ষেত্রে)। হিটিং মুড এর ক্ষেত্রে ইনডোর গরম হতে থাকবে। এসিকে এমনভাবেই ডিজাইন করা হয়, যেন ওইটুকু গরম হলে এসির যন্ত্রপাতির কোনো ক্ষতি হবে না। এসির আউটডোরের প্লাস্টিক, লোহালক্কড়, ইলেক্ট্রিক তারগুলা ওভাবেই তাপরোধী প্রকৃতির হয়ে থাকে।

তবে , ডিজাইনের চেয়ে ভুলভাবে যদি এসিকে চালানো হয়, তাহলে এসি নরমালের চেয়ে বেশি গরম হতে পারে।

যেমন, যে এসিটা ১০০ স্কয়ার ফুট এর লোড নিতে পারে, তাকে যদি ২০০ স্কয়ার ফুটের রুমে চালানো হয়, তাহলে সেটা অধিক গরম হবে।

আউটডোর/ইনডোর ইউনিটকে যদি খোলামেলা জায়গায় না রাখা হয়,জানালার পর্দা, ফুলের টব বা অন্য কোনো কারণে বাতাসের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে সেটা গরম হতে পারে।

এসির ভিতরে বিভিন্ন পয়েন্টে যদি ধূলা ময়লা জমে, তাহলে বায়ুপ্রবাহে বাধা হবে। এবং এসি গরম হবে। (রেগুলার এসব ধূলা পরিষ্কারের জন্য নিয়মিত এসি সার্ভিসিং দরকার)

অর্থাৎ , এসিকে যদি বিবেচনাহীনভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এসিতে উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি হতে পারে।

তৃতীয় পয়েন্ট, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট- জ্বালানি।

এসির জিনিসপত্র জ্বালানি হিসেবে খুব খারাপ। এর ভিতরের লোহালক্কড় একটুও আগুনে পোড়েনা। প্লাস্টিক থাকে খুব কম, ১০০/২০০ গ্রাম, ওইটুকু পুড়তে পারে। কারেন্টের তার এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রিক পার্টস সাধারণত Fire Retardant (আগুন প্রতিরোধী) ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা হয়, এ কারণে সেগুলা অক্ষত থাকবে।

তবে , এসিতে Refrigerant (শীতলকারক) হিসেবে কিছু গ্যাস ব্যবহার করা হয়। গড়ে ১ টন এসিতে ৬০০/৭০০ রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহৃত হয়। ২ টন ক্যাপাসিটির এসিতে ১২০০ গ্রাম কিংবা ৫ টন ক্যাপাসিটির এসিতে ৩০০০ গ্রাম রেফ্রিজারেন্ট থাকতে পারে।

এই রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। R22, R410a, R134 ইত্যাদি কোড নেম দেওয়া হয় এদেরকে। প্রধানত এগুলো বিভিন্ন প্রকার ক্লোরোফ্লোরো কার্বণ ও হাইড্রক্সিক্লোরো ফ্লোরো কার্বণ এর মিশ্রণ।

এগুলার মধ্যে অধিকাংশ গ্যাসই Non-Flammable (অদাহ্য) । অল্প কিছু গ্যাস Flammable (দাহ্য) .

উপরের এই এসির স্টিকার থেকে দেখা যাচ্ছে, এখানে রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে R410A গ্যাসটা ব্যবহার করা হচ্ছে। (ছবি সোর্স –এখানে)

R22, R410a এগুলা অদাহ্য গ্যাস। এগুলাতে আগুন ধরবে না কখনো।

R32, R290 এর মত কয়েকটা গ্যাস পরিবেশের জন্য খুবই ভাল। এগুলা ওজোন লেয়ারের ক্ষতি করে না। কিন্তু এগুলা ফ্লেমেবল। আগুন ধরতে পারে।

তবে, এই গ্যাসের পরিমাণ খুবই কম থাকে। আগেই বলেছি, ১ টন ক্যাপাসিটির এসিতে মডেলভেদে ৬০০/৭০০ গ্রাম গ্যাস থাকে। সেখানে, রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারে ১০ কেজির বেশি ফ্লেমেবল গ্যাস থাকে।

পুরাপুরি ভর্তি একটি গ্যাস সিলিন্ডারে ১২.৪ কেজি গ্যাস থাকার কথা। এসির তুলনায় প্রায় ২০ গুণ।

অর্থাৎ ,কিচেনের গ্যাস সিলিন্ডার এর তুলনায় এসিতে আগুন ধরলে ক্ষয়ক্ষতি মাত্র ৫% অথবা তারও কম।

তবে, সৌভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশে অধিকাংশ এসিতেই নন ফ্লেমেবল রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হয়। তাই এসিতে আগুন ধরে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম।

২০১৫ সালের ২০শে এপ্রিল ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার রামনগর ব্রাঞ্চে একটি এসির ইনডোর ইউনিটে আগুন লাগে । সেই সময়ের ভিডিও ইউটিউবে দেখা যায়। এখানে দেখা যাচ্ছে , এসির ডান পাশে সংযুক্ত  ইলেক্ট্রিক কেবল এর অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে । পরে সেটা এসির শরীরের ডান দিকের অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। মিনিট দুয়েক পরে , ইলেক্ট্রিক কেবল এবং প্লাস্টিকের অংশ পোড়ার পরে আগুন পানি দিয়ে নেভানো হয়।

[কেস স্টাডি-৪ ]

একই ধরনের ইনডোরে আগুন এর কিছু ভিডিও পাবেন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

লক্ষণীয়, এ সকল ক্ষেত্রে ইনডোর এসি/ইলেক্ট্রিক লাইন এর আশেপাশে অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ ছিল না। তাই কেবল এসিই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, রুমের অন্য কোনো কিছুর ক্ষতি হয়নি।

তবে এসির কাছাকাছি অন্য দাহ্য পদার্থ থাকলে আরো বড় বিপদ ঘটতে পারে।

২০২০ সালের ২৭শে মে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগে। এতে ৫ জন রোগী নিহত হন। আগুন লাগার কারণ হিসেবে ওই কেবিনে থাকা প্রচুর পরিমান হ্যান্ড স্যানিটাইজার, অক্সিজেন গ্যাস, পারপ্লেক্স এর মত দাহ্য পদার্থ কে দায়ী করা হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই আগুনের আগে এসি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেছেন । এ কারনে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান দেবাশীষ বর্ধন জাগো নিউজকে বলেন, পুরনো একটি এসি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে

[কেস স্টাডি-৫]


এসি থেকে কি (আগুনবিহীন) বিস্ফোরণ ঘটতে পারে ?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ড. মহম্মদ আলি  বাংলা ট্রিবিউনকে  দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বলেন, এসির মধ্যে কম্প্রেসার থাকে। এই কম্প্রেসারের গ্যাসের প্রেসার লেভেলের দুটি লিমিট থাকে—সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন। প্রেসার সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করলে এসি বিস্ফোরিত হতে পারে।

তিনি বলেন, এসির মধ্যে গ্যাস দেয়া হয়। এটি দেয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে না। কিন্তু কোনও কারণে বিস্ফোরণ প্রতিরোধের জন্য যেসব সেন্সর থাকে, সেগুলো কাজ না করলেও এসি বিস্ফোরিত হতে পারে।

এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বিডিনিউজ২৪ কে অন্য এক সাক্ষাৎকারে বলেন  , এসির কম্প্রেসরের ভেতরে ছোট্ট পাইপ আছে, যাতে গ্যাস থাকে। এসি দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় সেখানে গ্যাসের বুদ্বুদ সৃষ্টি পারে বা লুব্রিকেটিং অয়েল জমেও পাইপটি জ্যাম হতে পারে। হঠাৎ করে এসি চালু করলে ছোট পাইপে প্রবল চাপ তৈরি হবে, তখন বিস্ফোরণ ঘটবে। বিস্ফোরণের সময় ধাতব বস্তুর ঘর্ষণে প্রচণ্ড তাপ সৃষ্টি করবে এবং কোনো দাহ্য পদার্থ থাকলে আগুনও ধরে যেতে পারে।

বিবিসি বাংলায় এক টেকনিশিয়ানের বরাতে জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন কারনে এসি জ্যাম হতে পারে এবং সেখান থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। জনৈক মিসেস ইলোরা চৌধুরী এই রিপোর্টে বলেছেন, ”টেকনিশিয়ান এসি চালু করেই দেখেন, ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে। তিনি সেটা খুলে মেরামতের পর দেখতে পান, যন্ত্রটি জ্যাম হয়ে আছে। তিনি আমাদের জানালেন, এভাবে খানিকক্ষণ চললেই এসিটি বিস্ফোরিত হতে পারতো।”

তবে মাঝে মাঝে টেকনিশিয়ানদেরকেই বিপদের মুখে পড়তে হয়।

২০২২ সালের ২৭শে মার্চ সদরঘাটে এ্যাডভেঞ্চার -৯ নামের একটি লঞ্চের ৩ কেলায় কেবিনে এসি মেরামতের সময় অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। [কেস স্টাডি-৬]

২০২১ সালের ১২ই এপ্রিল ঢাকার স্বপ্ন সুপার শপে এসি মেরামতের সময় বিস্ফোরণে দুইজন টেকনিশিয়ান আহত হন।  সহকর্মী মো. বাদশা জানান, তারা মোহাম্মপুর টাউনহল বাজারে স্বপ্ন সুপার শপে কাজ করেন। আহত দু’জন স্বপ্ন সুপার শপের টেকনিশিয়ান। এসির কম্প্রেসার নষ্ট হওয়ায় মেরামতের কাজ করছিলেন তারা। এসময় এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরণ হয়। তখন তারা আহত হন । [কেস স্টাডি-৭]

২০২০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ইসলামপুরে এসি মেরামতের সময় কম্প্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মীরু মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ১২ তলা লায়ন টাওয়ারে এসি মেরামতের কয়েকটি দোকান আছে। একটি দোকানের কর্মীরা ভবনের ছাদে এসি মেরামতের সময় কমপ্রেসার বিস্ফোরিত হলে ৩ জন দগ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেয়ার সময় আগুনে দগ্ধ এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। [কেস স্টাডি-৮]

২০২১ সালের ১৩ই জানুয়ারি রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ৯৩ নম্বর রোড এলাকায় এনসিসি ভবনের  এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে । ওই ভবনের ছাদে অবস্থিত এসির আউটডোর থেকে এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তিনি সেখানে কাজ করছিলেন। তার নাম আজিজুল বলে জানা যায়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও অভিজ্ঞতা থেকে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী নিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ধারণা উপরে আউটবক্সে কাজ করার সময় বিস্ফোরণে মারা গেছেন টেকনিশিয়ান। আর বিস্ফোরণের প্রেসার পাইপ লাইন হয়ে নিচে ভিসা সেন্টারে নেমে এসেছে। যেটার প্রেসারে ভিসা সেন্টারে বিরাট শব্দে বাইরের গ্লাস ও ভেতরের সিলিংসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভেঙেছে।’  [কেস স্টাডি-৯]

২০২১ সালের ৪ এপ্রিল কক্সবাজার ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ এসি মেরামত করতে গিয়ে কমপ্রেশর বিস্ফোরণে টেকনিশিয়ান জাহিদ আহত হয়। [কেস স্টাডি-১০]

২০১৪ সালের ৭ই নভেম্বর ঢাকার গুলশানের সিক্স সিজন্স হোটেলের ছাদে এসি মেরামত করতে গিয়ে নিহত হন আনোয়ার হোসেন। [কেস স্টাডি-১১]

২০১৮ সালের ১লা জুন মতিঝিল এর ওয়ান্ডারার্স মার্কেটের নিচে একটি রেফ্রিজারেটর এর দোকানে বসে এসি মেরামত করার সময় বিস্ফোরণে আহত হন ৩ জন কর্মী। [কেস স্টাডি-১২]

২০২২ সালের ৮ই জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের মৌচাক শাখায় কয়েকটি নষ্ট ইউনিটের আউটডোর ইউনিট মেরামত করতে গিয়ে ২ জন মেকানিক আহত হয়। [ কেস স্টাডি-১৩]

২০২২ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি খুলনার মনিপাল এএফসি হাসপাতালে নষ্ট এসি মেরামতের সময়  রনি (৩২) ও রাজু (৩৪) নামক ২ জন মেকানিক আহত হয়। [ কেস স্টাডি-১৪]

লক্ষণীয়, এখানে প্রতিটা বিস্ফোরণই কিন্তু ঘটছে এসির কমপ্রেশরে । এবং এই কমপ্রেশর অংশটা থাকে এসির আউটডোর ইউনিটে, যে অংশটা রুমের বাইরে থাকে।

এসি বিস্ফোরণ/দুর্ঘটনা কতটা নিয়মিত ঘটনা ?

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা সামন্ত লাল সেন বিডিনিউজ২৪ কে জানান, তিন-চার বছর যাবত তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা দগ্ধ রোগীদের মধ্যে অনেকেই এসি বিস্ফোরণের শিকার। এই সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে।

ঢাকা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গত ৫ বছরে ১৫০ টা এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

আমেরিকায় সকল অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ১% এসি এর কারণে হয়ে থাকে বলে জানা যাচ্ছে।

তবে এসবের মধ্যে কতগুলো প্রকৃতপক্ষে এসির বিস্ফোরণ, এবং কতগুলো ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক শর্ট সার্কিট, গ্যাস কিংবা অন্য কোনো বিস্ফোরণকে এসি বিস্ফোরণ বলে দাবি করা হয়েছে, সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

কুরাতে এক প্রশ্নের জবাবে শিকাগো টেক থেকে BSME করা মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ  শাহ লিখেছেন , আমি ৬০ বছর ধরে এসি ফিল্ডে কাজ করি। এখনো পর্যন্ত একটা এসিকেও বিস্ফোরিত হতে দেখিনি।

American Academy of Forensic Sciences এর এক গবেষণায় বলছে, এসি কমপ্রেশর বিস্ফোরণ একটা  বিরল ঘটনা, এবং এই বিস্ফোরণের ফলে কারো তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কোনো রেকর্ড ফরেনসিক সাহিত্যে নেই।

এসি বিস্ফোরণ নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ

এসি বিস্ফোরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবরের সাথে মাঝে মাঝেই নিচের এই ছবিটা ব্যবহার করতে দেখা যায়। (দেখুন – এখানে , এখানে  , এখানে )



অনুসন্ধানে দেখা গেল, এই ছবিটা একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া। Indus HVAC Services চ্যানেল থেকে Heat Mode AC Burn Damage | Air Conditioner Short Circuit Fire শিরোনামে এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল। এখানে একই ধরনের কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্থ ২টা ইনডোর এর ছবি দেখানো হয়। প্রতিটারই ইনডোর এর ডান পাশে ( যে অংশে সার্কিট থাকে) আগুন এর আলামত দেখা গেছে । এবং সেই সাথে কিছু প্লাস্টিক গলে পড়েছে। তবে এসির আশেপাশে অন্য কোনো কিছুই পোড়েনি। এমনকি এসিও সম্পূর্ণ পোড়েনি। হিন্দি ভাষায় বর্ণিত এই ভিডিওতে ভাষ্যকার জানাচ্ছে, ইলেক্ট্রিক শর্ট সার্কিটের কারণে এই হিটিং-কুলিং এসিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। [কেস স্টাডি-১৫]

এই ছবিটা সাম্প্রতিক অন্যান্য এসি দুর্ঘটনার ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । যেমনএখানে , এখানে

ইউটিউবে সিঙ্গাপুরের অপর একটি ভিডিও দেখা যাচ্ছে Air conditioning unit on fire (Singapore, Bukit Panjang) শিরোনামে । একটি বহুতল ভবনের উপরের দিকের একটি তলার জানালা থেকে আগুন এবং ধোঁয়া বের হতে দেখা যায় এই ভিডিওতে। জানালার ঠিক নিচেই একটি এসির আউটডোর ইউনিট রয়েছে।  ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওর পুরো সময় এসির আউটডোর ইউনিটকে অক্ষত অবস্থায় দেখা গেল। এসিতে আগুন লাগেনি, বরং ঘরের ভিতর অন্য কোনো উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ আগুন এবং ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, এসিতে এখানে আগুন না ধরলেও Air Conditioning Unit on Fire বলে প্রচার করা হচ্ছে। [কেস স্টাডি-১৬]

বাংলাদেশের ভেতরের কয়েকটা ঘটনার দিকে দৃষ্টি দেই। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী,   ২০২০  সালের ২০শে সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের ভিআইপি রুমের এসির বাইরের অংশে কম্প্রেসার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শনিবার দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরমের কারণে এসি চলতে থাকায় এমনটি হতে পারে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ধারণা করেছিল

এ ঘটনায় একটি ছবিও ছাপা হয়েছে জৈন্তাবাজার টুয়েন্টি ফোর ডট কমে। কিন্তু এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এসির যে অংশ কমপ্রেশর থাকে, সেই অংশ অক্ষতই রয়েছে। এসির ফ্রন্ট গ্রিল অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এক্ষেত্রে , বাইরের কোনো অগ্নিকাণ্ডের ফলে এসিটি বাইরে থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। [কেস স্টাডি-১৭]

দ্বিতীয় আরেকটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক। ২০১৯ সালের ২০শে মার্চ রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনে মুসলিম বাজারে একটি অফিসে এসির কম্প্রেসার মেশিন বিস্ফোরণে দুইজন দগ্ধ হন। বাংলানিউজ২৪ এর খবরে বলা হয়, সন্ধ্যায় মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের ১৮ নম্বর রোডের ডি ব্লকের ১০ নম্বর ভবনের নিচে আশিকের অফিসে বসে দুই বন্ধু গল্প করছিলেন। এসময় রুমের ভেতর এসির কম্প্রেসার মেশিন বিস্ফোরণ হয়। এতে আশিক ও ফজলুল দুইজনেই দগ্ধ হয়।

আমরা জেনেছি, এসির কমপ্রেশর অংশটা থাকে আউটডোরে, যেটা রুমের বাইরে থাকে। আর রুমের ভেতরে থাকে ইনডোর অংশ । সেক্ষেত্রে মিরপুর ১২ তে রুমের মধ্যে কিভাবে এসির কমপ্রেশর বিস্ফোরিত হল, সেটা ঠিক বোধগম্য নয়। [ কেস স্টাডি-১৮]

তৃতীয় আরেকটি ঘটনার দিকে দৃষ্টি দেই। ২০১৯ সালের ১৯শে মার্চ উত্তরা থানায় এসি বিস্ফোরণে নিহত হন রাজধানীর বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া (৫০) ও তার স্ত্রী উত্তরা পশ্চিম থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস ফারজানা বেবী ।

উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন খান দৈনিক যুগান্তরকে জানান, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এসি বিস্ফোরণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তবে নিহত আলমগীরের ছোটভাই তানজিল শাহরিয়ার একটি অনলাইন পোর্টালকে জানান, রাত ২ টায় পুরান ঢাকার একটি অনুষ্ঠান শেষে তার ভাই আলমগীর ও ভাবি বিলকিস বাসায় ফিরে রুমের ভিতর এসি চালু করে। এর কিছুক্ষণ পর তাদের রুমের পাশে এসির কম্প্রেশার মেশিন বিস্ফোরণ হয়। এতে জানলার গ্লাস ভেঙ্গে রুমের ভিতর আগুন ঢুকে পড়ে। তাৎক্ষণিক ভাবে তা পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে তারা দুজন (৯৫%) দগ্ধ হয়। [কেস স্টাডি-১৯]

আরেকটি ঘটনা দেখুন। ২০২১ সালের ২৭শে অক্টোবর গুলশান-২–এর ১০৩ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর ভবনের দোতলায় আগুন লাগে। এতে ৭ জন আহত হয়।  ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, এসির বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে দগ্ধদের নিকটাত্মীয় ইমদাদুল হক জানান, ওই ভবনের দোতলার পাশ দিয়ে ইলেকট্রিক লাইন গেছে, সেখানে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ হয়। এতে জানালার কাচ ভেঙে আগুন ফ্ল্যাটের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ফ্ল্যাটে থাকা এসিও ফ্রিজ বিস্ফোরিত হয়।
[ কেস স্টাডি-২০]


অপর্যাপ্ত তথ্য এবং ছবির অভাব

২০২২ সালের ৯ই জুন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, তার মায়ের বাসার এক রুমে অগ্নিকাণ্ডে পর্দা, বই, এসি, ও খাটসহ সব পুড়ে গিয়েছে।

এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য তিনি ‘এসি বিস্ফোরণ’ কে দায়ী করেন। তবে স্ট্যাটাসের সাথে যুক্ত ছবিতে দেখা যায় রুমের সব আসবাবপত্রি পুড়ে গিয়েছে।

এসির আউটডোর এর কোনো তথ্য কিংবা ছবি এখানে ছিল না। এমনকি এসি সেখানে চলছিল নাকি বন্ধ ছিল, সেই তথ্যটিও সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি।

আগুনের উৎস ছিল এসি, এবং সেই এসির আগুন ঘরের অন্য আসবাবপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে, এমনটি কোনো প্রমাণ ছাড়াই স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়েছে। ঘরের অন্য কোনো সূত্র থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং এসি,খাট, জানালার পর্দাসহ সব আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেয়- এমন ঘটনাও হতে পারে এখানে ।

[কেস স্টাডি-২১]

২০২২ সালের ১৯শে জুন তারিখ গুলশানের নিকেতনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাশরুর আহমেদ (২৩) নিহত হন। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে এসি বিস্ফোরণ হতে পারে অথবা তা আগুনের ঘটনাও হতে পারে। [কেস স্টাডি-২২]

২০২১ সালের ১৯শে জুন ঢাকায় উত্তরা মটরস এর ডিএমডি মেহদাদুর রহমান ডুরান্ড এর বাসায় এসির গোলযোগ থেকে কোনো কারণে আগুনে দগ্ধ হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬শে জুন মারা যান তিনি। তাঁর শরীর ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এছাড়া ইনহেলেশন বার্ন ছিল। [কেস স্টাডি-২৩]

এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ এসির কোনো ছবি কোনো সংবাদমাধ্যমে খুজে পেতে ফ্যাক্টওয়াচ ব্যর্থ হয়েছে ।

একই ধরনের এসি বিস্ফোরণের আংশিক তথ্য কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ এসির ছবিবিহীন রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে মতিঝিল এর এনসিটিবি ভবন , মুগদা হাসপাতাল , গুলশান , আফতাবনগর এবং এলিফ্যান্ট রোড থেকে। [কেস স্টাডি- ২৪-২৮]  এ সকল ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তথ্য কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ এসির ছবি না পাওয়ায় ফ্যাক্টওয়াচ এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এসির সংযোগ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি।

অনলাইন শপ উচ্ছাস ডট কম এর ব্লগে জনৈক ওবায়দুর রহমান জানাচ্ছেন, সত্যি বলতে এসি বিস্ফোরিত হবার মত যন্ত্র না। বিভিন্ন স্থানে এসি বিস্ফোরণের যেসব খবর আমরা পাই তার অনেকটাই মিথ্যা। বেশিরভাগ এসি দুর্ঘটনা হয় শর্ট সার্কিট থেকে। এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ঘটনা খুবই বিরল। অনেক সময় না বুঝে কম্প্রেসার বিস্ফোরণের কথা বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় টেকনিক্যাল ব্রেন না থাকা সাধারণ মানুষ আর সংবাদ পত্রের অদক্ষতার কারণে ভুল নিউজ প্রচার হচ্ছে।

এসি বিস্ফোরণের বিষয়ে কয়েকটি কেস স্টাডি পর্যালোচনা করে দেখেছি, এসির ভেতরে বিস্ফোরণ হওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। শর্ট সার্কিট থেকে বা অন্যকোনও বিস্ফোরণে (অন্য কোনও গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার কারণেও হতে পারে) এসিতে আগুন ধরে যেতে পারে বা বিস্ফোরণ হতে পারে।

সিদ্ধান্ত

২৮ টা কেস স্টাডি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, এদের মধ্যে ৪ টা কেসে ভুলভাবে এসিকে দায়ী করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেটা ভুল প্রমাণিত হয় এবং সেখানে অগ্নিকাণ্ডের জন্য এসি দায়ী ছিল না।

২৮ টা কেসের মধ্যে  কেবলমাত্র ২ টা কেসে নিশ্চিতভাবে এসি থেকে অগ্নিকাণ্ডের কথা বলা যায় ( গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল , এবং ভারতের অজ্ঞাত স্থানের হিটিং-কুলিং এসি)।

একটি কেসে দেখা যাচ্ছে, এসির সাথে সংযুক্ত বৈদ্যুতিক তারে আগুন লেগেছিল। এবং এসির মূল শরীরে পৌছানোর আগেই সেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছিল।

৯ টি কেসে দেখা যাচ্ছে, এসি মেরামত করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং মেকানিক আহত বা নিহত হয়েছেন। (এদের মধ্যে ৭ টি কেসে, মেকানিক এসিটি নিজের ওয়ার্কশপে না নিয়ে গ্রাহকের বাসাতেই মেরামতের চেষ্টা করছিলেন)

অবশিষ্ট ১২ টি কেসের ক্ষেত্রে এসি বিস্ফোরণের ঘটনার যথেষ্ট তথ্য কিংবা ছবি পাবলিক ডোমেইনে পাওয়া যায়নি। ফলে এসবের ব্যাপারে ফ্যাক্টওয়াচ কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি।

কাজেই , খুব বিরল ঘটনা হলেও, এসি থেকে দুর্ঘটনা ঘটা সম্ভব বলে ফ্যাক্টওয়াচ মনে করছে। তবে সামান্য কিছু সচেতনতা মেনে চললেই এই দুর্ঘটনার হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব।

অন্যান্য বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ‘এসি বিস্ফোরণ’ কে দায়ী করা হলেও , সকল ক্ষেত্রে এসির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এসি সম্পর্কে সাধারণ জনগণের অজ্ঞতার কারণে এ সংক্রান্ত গুজব তৈরি হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির চেয়ে এসি বেশি বিপজ্জনক কিছু নয়, বরং অনেক যন্ত্রের চেয়ে এসিতে সেফটি ফিচার বেশি থাকে বিধায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আরো কম।

এসি’র দুর্ঘটনা রোধে পরামর্শ

সম্ভাব্য এসি বিস্ফোরণ/দুর্ঘটনা এড়াতে টেকনিশিয়ানদের নিম্নোক্ত ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।

১। এসি সংক্রান্ত দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেকনিশিয়ানদের জড়িত থাকতে দেখা যাচ্ছে।  টেকনিশিয়ানদের দক্ষতা এবং সচেতনতার অভাব এর একটা কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে ৫০ হাজারের মত টেকনিশিয়ান আছে এই পেশায়, তার মধ্যে ১০ হাজারেরও প্রশিক্ষণ নেই বলে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার

২। এসি রিপেয়ার এর ক্ষেত্রে টেকনিশিয়ানদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী থাকা দরকার। বাসাবাড়িতেই এসি মেরামত না করে কারখানায় নিয়ে গিয়ে উপযুক্ত পরিবেশে এসি মেরামত করা উচিত । এক্ষেত্রে এসি ব্যবহারকারীদের কোনো তাড়াহুড়া করা উচিত নয়।

এছাড়া , ১০০% ঝুঁকিমুক্ত থাকতে এসি ব্যবহারকারীদের নিম্নোক্ত সতর্কতাগুলো মেনে চলা উচিত।

১। ফায়ার ট্রায়াংগল যেন সৃষ্টি হতে না পারে, সেজন্য দাহ্য পদার্থ এবং উচ্চ তাপমাত্রা তৈরির সুযোগ প্রতিহত করতে হবে। সম্ভাব্য দাহ্য পদার্থ এড়ানোর জন্য-

ক) দাহ্য রেফ্রিজারেন্ট যুক্ত এসির বদলে অদাহ্য রেফ্রিজারেন্টযুক্ত এসি কিনতে পারেন। এসির স্টিকারে রেফ্রিজারেন্ট সম্পর্কিত তথ্য থাকে। এসি কোম্পানিদের ওয়েবসাইটেও পাবেন এই তথ্য। কেনার সময়ে দেখে কিনতে পারেন।

খ) এসির আশেপাশে দাহ্য পদার্থ রাখবেন না। সামান্য একটা ইলেক্ট্রিক স্পার্ক অন্য কোনো দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এসে অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে। (ইউনাইটেড হাসপাতালে দাহ্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার এ আগুন লেগে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটিয়েছিল)

গ) টেকনিশিয়ান সার্ভিসিং এ এসে ইন্ডোর এবং আউটডোর দুটোই পরিষ্কার করছে কিনা,  রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস রিফিল করার সময় নন ফ্লেমেবল গ্যাসের বদলে ফ্লেমেবল গ্যাস দিচ্ছে কিনা, আগুন প্রতিরোধী স্পেয়ার পার্টস এর বদলে সাধারণ স্পেয়ার পার্টস লাগিয়ে দিচ্ছে কিনা, লক্ষ্য রাখুন।

২। এসি’র আশেপাশে যেন উচ্চ তাপমাত্রা  তৈরি হতে না পারে, সেজন্য –

২.১) এসির আউটডোরকে এমন জায়গায় স্থাপন করুন ,যেন সারাদিন প্রচণ্ড রোদের মধ্যে থাকতে না হয়। প্রয়োজনে এসির উপরে ছাউনির ব্যবস্থা করুন। আশেপাশে আগুন বা রান্নার উৎস থাকলে সেখানে এসির আউটডোর বসাবেন না। প্রচুর বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় আউটডোর বসান।

২.২) আউটডোর এসির চলার পথে ধুলোবালি জমছে কিনা, খেয়াল করুন। নিয়মিত সার্ভিসিং করান। এসির ইনডোর এবং আউটডোরের প্রবেশপথে যেন ময়লা না জমে ,সেটা খেয়াল করুন। এসির বাতাসের পথে ঘরের পর্দা কিংবা অন্য কোনো বাধা যেন না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ এক সচেতনতামূলক বার্তায় বলেছে , খেয়াল রাখতে হবে এসির ভেতর কিছু জমাট বেঁধে যেন না যায়। এসির এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এই ফিল্টার পরিষ্কার বা পরিবর্তন এসি রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ ।

এসি সার্ভিসিং এক্সপার্ট দুলাল দাস বিবিসিকে বলছেন, ”বছরে অন্তত একবার পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্যে এসির সার্ভিসিং করানো উচিত। বিশেষ করে শীতের সময় দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরে গরমের আগে আবার চালু করার আগে অবশ্যই সার্ভিসিং করে নেয়া উচিত।“

২.৩) আপনার বাসা/ প্রতিষ্ঠানে এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার/কনসালট্যান্ট এর সাহায্য নিতে পারেন। তিনি বাসার অবস্থান ,উচ্চতা,মানুষ,যন্ত্রপাতির সাপেক্ষে কুলিং লোড হিসাব করে জানিয়ে দিবেন, কত টন (ধারণক্ষমতা) এর এসি ব্যবহার করতে হবে। বাজেট কমানোর জন্য এ ক্ষেত্রে এরিয়ার তুলনায় কম ক্যাপাসিটির এসি কেনা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে , এসির উপরে চাপ বেশি পড়বে, দ্রুত গরম হবে এবং বিস্ফোরণ/অগ্নিকাণ্ডের একটি সম্ভাবনা থেকে যায়।

অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বলেন, কারো বাসায় লাগবে দুই টনের এসি, কিন্তু তিনি যদি এক টনের এসি কেনেন, তাহলে ঘর শীতল করার জন্য সেই এসি লম্বা সময় ধরে চালাতে হবে। ফলে এসির আয়ু কমে যাবে, সঙ্গে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।

২.৪) ত্রুটিমুক্ত ইলেক্ট্রিক লাইন ব্যবহার করুন। ত্রুটিপূর্ণ লাইনে শর্ট সার্কিট হয়ে এসি (কিংবা অন্য যে কোনো ইলেক্ট্রিক ডিভাইস) নষ্ট হতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসের অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমানের মতে, দেশে বেশিরভাগ বাসাবাড়ি আশির দশকে তৈরি, ওয়্যারিং সিস্টেম এসি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত না। সেজন্য তারে ত্রুটি থাকলে শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ হয়।

২.৫) যদিও এসি এক্সপার্ট দুলাল দাস বিবিসিকে বলছেন, একনাগাড়ে আট ঘণ্টার বেশি এসি ব্যবহার করা উচিত নয়  তবে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সহ বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘ সময় ধরে এসি চালু রাখার প্রয়োজন হতে পারে। এসকল ক্ষেত্রে উৎপাদক কিংবা সরবরাহকারীদের সাথে আলোচনা করা উচিত। প্রয়োজনে ওই নির্দিষ্ট চাহিদার জন্য বিশেষ ডিজাইনের এসি তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর উত্তর পশ্চিম রিজিয়ন এর পরিচালক লজিস্টিক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মফিজুর রহমান  সতর্কতা হিসেবে কালের কন্ঠের এই কলামে বলেছেন , বজ্রপাত থেকে এসিতে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই ঝড় বৃষ্টি কিংবা বজ্রপাতের সময় এসি বন্ধ রাখুন।

৪। ওয়ালটন এসি গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী সন্দীপ বিশ্বাস এসির দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি, কম্প্রেসর এবং রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করার এবং নিম্নমানের অখ্যাত বা নকল ব্র্যান্ডের এসি এবং কম্প্রেসর কেনা এবং ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরমার্শ দিয়েছেন

৫। উইন্ডো কিংবা পোর্টেবল টাইপ এসির (যেখানে ইন্ডোর আউটডোর একসাথে যুক্ত থাকে) বদলে স্প্লিট টাইপ এসি ব্যবহার করতে পারেন। আমেরিকার ‘ইন্সুরেন্স ল্যাব’ নামক সংস্থার মতে, উইন্ডো এসিতে দুর্ঘটনার ঝুকি বেশি

৬। এসি ,কিংবা সম্ভাব্য কোনো আগুন সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য পানি এবং ফায়ার এক্সটিংগুইশার হাতের কাছে রাখুন। ইলেক্ট্রিক লাইন এর আগুন নেভানোর জন্য পানি’র বদলে CO2 সমৃদ্ধ ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করা নিরাপদ।

৭। সর্বোপরি, এসি ব্যবহারকারীকে সচেতন হওয়া জরুরি। অভিযোগ শোনা যায়, ক্রেতা এসির ক্যাটালগ কিংবা ম্যানুয়ালটাও  না পড়েই এসি ব্যবহার করতে থাকেন এবং এসির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। এই ক্ষেত্রে আরেকটু যত্নবান হলে যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানো যায় খুব সহজেই। 

(Featured Image হিসেবে ব্যবহৃত ছবিটি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে) 

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply