বিশ্বকাপ ফাইনালে মেসিকে পরিয়ে দেয়া আলখাল্লা কি বাংলাদেশে তৈরি?

Published on: December 21, 2022

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসিকে পরিয়ে দেয়া আলখাল্লা বা বিশত বাংলাদেশের বগুড়া জেলার হাপুনিয়া গ্রামে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বগুড়ায় এ ধরনের বিশত তৈরি এবং রপ্তানি করা হলেও ,মেসিকে পরিয়ে দেয়া আলখাল্লাটি বাংলাদেশে তৈরি নয়। বরং সেটি বানিয়েছে কাতারের রাজধানী দোহার “বিশত আল সালেম” কোম্পানি। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 গুজবের উৎস 

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

১৮ই ডিসেম্বর বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচের পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কাতারের আমিরের মেসিকে একটি বিশত (কাতারের ঐতিহ্যবাহী আলখাল্লা) পরিয়ে দেয়ার এই দৃশ্য কোটি কোটি দর্শক টেলিভিশনের সামনে লাইভ দেখেছেন। সংবাদমাধ্যমেও সে ঘটনাটিই উঠে এসেছে।

১৯ ডিসেম্বর ২০২২ আল জাজিরার কাতার ওয়ার্ল্ডকাপের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি মেসিকে একটি বিশত বা আলখাল্লা পরিয়ে দেন। এরপরই ফিফা সভাপতি জান্নি ইনফান্তিনো মেসির হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে-

 

২০ ডিসেম্বর ২০২২ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Raya “মেসির বিশত ১০০% কাতারি শিল্প” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় মেসিকে পরানো বিশত কাতারের বিখ্যাত বিশত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘বিশত আল সালেম’ এর তৈরি। ‘বিশত আল সালেম’ এর ফ্যাক্টরি কাতারের রাজধানী দোহায় সউক ওয়াকিফে অবস্থিত। এটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। মেসিকে পরানো বিশতটি হাতে তৈরি এবং এটিকে সাতটি ধাপে বানাতে হয়েছে।

Raya এর প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে-

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে মিশরীয় সংবাদমাধ্যম El Balad “মেসির জন্য তৈরি বিশতের মূল্য এবং এর উপকরণ প্রকাশ করা হলো” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

উক্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশতের প্রস্তুতকারক কোম্পানির পরিচালক  El Balad কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

উক্ত সাক্ষাৎকারটিতে ‘বিশত আল সালেম’ -এর পরিচালক আসাদ হাজ বলেন “আমরা কাতারের আমির তামিম বিন হামাদের কাছ থেকে দুটি বিশত তৈরি করার জন্য একটি নির্দেশনা পেয়েছিলাম,যার মধ্যে একটি লম্বা আকারের এবং অন্যটি তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের। কে বা কখন এটি পরবে তা আমরা জানতাম না। তবে আমরা শাসক পরিবার এবং কাতারের কিছু রাষ্ট্রনায়ক ও মন্ত্রীদের জন্য কাতারি পোষাক তৈরিতে আমাদের কর্মজীবনকে সংযুক্ত করতে পেরে খুশি।”

উক্ত প্রতিবেদনে আসাদ হাজ আরো বলেন “আমরা আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসির জন্য সম্পূর্ণরূপে হাতে নাজাফি জাবানি বিশত নামক একটি প্রথম শ্রেণীর উপাদান থেকে বিশতটি তৈরি করেছি।”

সেখানে দাম সম্পর্কে আসাদ বলেন মেসির পরা বিশতটির দাম ৪৫০০ কাতারি রিয়েল। যা বাংলাদেশী টাকায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯শ ১১টাকা (প্রায়)।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায় বিশত আল সালেম কোম্পানি মেসির পরিহিত বিশতের ছবি দিয়ে ইন্সটাগ্রামে একটি পোস্টও করেছে।

El Balad এর প্রতিবেদন দেখুন এখানে

তাছাড়া 20 ডিসেম্বর,২০২২ তারিখে al-ain এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় এই বিশত নিয়ে অনেকের ভিতর বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। অনেকে দাবি করেন বিশতটি সৌদির আল আহসাত কোম্পানি থেকে তৈরি করা আবার অনেকে মনে করেন এটি কাতারে তৈরি করা।

কিন্তু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সময় যখন মেসিকে বিশতটি পরিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো সেই মুহুর্তে তোলা ছবিতে “বিশত আল-সালেম” এর সাক্ষর দেখতে পাওয়া গিয়েছিলো। এটা থেকে বোঝা যায় বিশতটি “বিশত আল-সালেম” কোম্পানির তৈরি করা।

al-ain এর প্রতিবেদন দেখুন এখানে-

তাছাড়া “বিশত আল-সালেম”কোম্পানিও ইন্সটাগ্রামে মেসির বিশত গায়ে-দেয়া ছবি আপলোড করে বিশতটি তাদের তৈরি এমন দাবি করেছে।

“বিশত আল-সালেম”কোম্পানি ইন্সটাগ্রামে একাউন্ট দেখুন এখানে

গবেষক জুম্মা খান একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন, মেসিকে উপহার দেওয়া বিশতটি কাতারের তৈরি, বাংলাদেশের নয়।

জুম্মা খানের পোস্টটি দেখুন এখানে-

অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা প্রমাণ হয় যে বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসিকে যে আলখাল্লাটি উপহার দেওয়া হয়েছিলো সেটা বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় বানানো হয়নি বরং কাতারের রাজধানী দোহার সউক ওয়াকিফে অবস্থিত “বিশত আল সালেম” কোম্পানি এটি বানিয়েছে। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে ।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh