Published on: December 14, 2021
সম্প্রতি তিনজন ব্যক্তির একটি ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেখা যায়। সেখানে দাবি করা হয়, ১৯৬৪ সালের দিকে মেয়েদের পড়ার জন্য বুয়েট নিষিদ্ধ ছিলো এবং পরবর্তীতে উক্ত তিন নারী মামলা করে সেখানে পড়তে পেরেছিলেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, মেয়েদের জন্য বুয়েট কখনোই নিষিদ্ধ ছিলো না। তবে মেয়েদের সংখ্যা কম থাকায় ভর্তি নেওয়া হতো না। এই তিন নারীকে এজন্য মামলা করতে হয়নি। সাধারণভাবেই তারা সেখানে পড়তে পেরেছিলেন। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন অসংগতিপূর্ণ তথ্য সংবলিত পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে। |
এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে ।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
উক্ত ছবির সাহায্যে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রথম আলোর দুইটি প্রতিবেদন সামনে আসে।।”আমাদের দেখতে ভিড় লেগে যেত” শিরোনামে ১৮ অক্টোবর ২০১৯ এর একটি প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথে বর্তমানে ভাইরাল ছবিটির মিল পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় ছবিতে থাকা তিনজন ব্যক্তির নাম যথাক্রমে শিরীন সুলতানা, মনোয়ারা বেগম এবং খালেদা শাহরিয়ার। খালেদা শাহরিয়ারের সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৬২ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় (ইপুয়েট) এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বুয়েট হয়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তৎকালীন সময়ে মেয়েদের সংখ্যা কম থাকায় ইপুয়েটে ভর্তি নেওয়া হতো না। এছাড়া মেয়েদের পড়ার ক্ষেত্রে অন্য কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছিলো না। এ বিষয়ে খালেদা শাহরিয়ার জানান, “আমি আর শিরীন তখন ইডেন কলেজে পড়ি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ইঞ্জিনিয়ারই হব। আমাদের ইচ্ছার কথা হলিক্রস কলেজের মনোয়ারার কানে পৌঁছাল। তিনজন মেয়ে দেখে স্যাররা রাজি হলেন। তখন প্রথম বর্ষে একটিই সাধারণ বিভাগ ছিল। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে পুর, তড়িৎ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ ভাগ হতো।“।
অর্থ্যাৎ এ বিষয়টি পরিষ্কার যে সেসময় ইপুয়েট বা বর্তমান বুয়েটে মেয়েদের পড়া নিষিদ্ধ ছিলো না।
তবে তিনি আরোও জানান, পুরকৌশল বিভাগটিতে মেয়েদের পড়তে দেওয়া হতো না কারণ ওই বিভাগে পড়লে এক মাসের একটি সার্ভের জন্য সাভার থাকতে হতো। কিন্তু খালেদা শাহরিয়ার পুরকৌশল বিভাগেই পড়বেন বলে আবেদন জানান। কিন্তু স্যাররা রাজি না হলে খালেদা বলেন, সংবিধানে তো বলা নেই পুরকৌশল বিভাগে মেয়েরা পড়তে পারবে না, তাই দরকার পরলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরবর্তীতে মামলা করে ইপুয়েটে পড়েছিলেন কি না এমন গুজবের প্রেক্ষিতে খালেদা শাহরিয়ার বলেন, “তথ্য বিকৃতি করে কারা যেন এ কথা ছড়িয়েছে। আমাদের মামলা করতে হয়নি।“।
অর্থাৎ এটিও পরিষ্কার যে তাঁদের মামলা করতে হয়নি।
১৯৬৮ সালে শাহরিয়ার কবির এবং শিরীন সুলতানা বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এর দুই বছর পর মনোয়ারা বেগমও কেমিকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছিলেন।
সেসময় খালেদা শাহরিয়ার এবং শিরিন সুলতানার স্নাতক পাশের খবরটি আলোড়ন তৈরি করে। খালেদা শাহরিয়ারকে নিয়ে প্রথম আলোয় ৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
উল্লেখ্য, খালেদা শাহরিয়ার ২০ জানুরারি ২০২১ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।
বিস্তারিত দেখুন এখানে।
এছাড়াও একই বিষয় নিয়ে বুম বিডির একটি ফ্যাক্টচ্যাক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
পরিশেষে দেখা যাচ্ছে, উক্ত ফেসবুক পোস্টগুলোতে প্রকাশিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ সঠিক নয়। ১) ১৯৬৪ সালে বর্তমান বুয়েট বা তৎকালীন ইপুয়েটে মেয়েদের পড়া নিষিদ্ধ ছিলো না। তবে সংখ্যায় কম হওয়ায় ভর্তি জটিলতা ছিলো। ২) উপরোল্লিখিত তিন ব্যক্তি সেখানে পড়তে না পারার কারণে মামলা ঠুকে দেননি। তবে পড়তে না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কতৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সাধারণভাবেই সেখানে পড়তে পেরেছিলেন। অতএব এমন তথ্য সংবলিত ফেসবুক পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ” বিভ্রান্তিকর ” চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |