বিশ্বের সবচে বড় হিমবাহের ছবি নয় এগুলো

Published on: December 21, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে আইসবার্গ বা হিমবাহের দুটি ছবির একটা কোলাজ দেখতে পাওয়া যায়। এর ক্যাপশনে আলাদা আলাদা একাধিক দাবি করা হয়। এর মধ্যে একটি দাবি হচ্ছে: এটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহ, যেটি  ৬০০০ বছর ধরে এক জায়গায় থাকার পর ভেসে গেছে। অন্য দাবিটি হচ্ছে: অ্যান্টার্কটিকার এই হিমবাহটিতে বিপুল পরিমাণে পোলার বেয়ার এবং পেঙ্গুইন বসবাস করত। এই দাবিগুলোর সূত্র হিসেবে বিবিসি গ্লোবালের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ছবির কোলাজটি হচ্ছে আলাদা আলাদা দুটি হিমবাহের পুরনো ছবির। সম্প্রতি অ্যান্টার্কটিকা থেকে বিশ্বের বর্তমান বৃহত্তম হিমবাহটির সরে যাওয়ার ঘটনাটি সঠিক হলেও এটি ৬০০০ বছর নয় বরং ৩০ বছর ধরে এক জায়গায় ছিল। তাছাড়া, ভাইরাল ছবি দুটো পৃথিবীর সবচে বড় হিমবাহের নয়। এগুলো মূলত ২০২০ ও ২০২১ সালে ভিন্ন ভিন্ন দুইটি হিমবাহের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সময়কার ছবি। অন্যদিকে ভাইরাল পোষ্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে বিশ্বের বর্তমান বৃহত্তম আইসবার্গ বা হিমবাহে পোলার বেয়ার এবং পেঙ্গুইন বাস করে কিন্তু বাস্তবে অ্যান্টার্কটিকার উপকূলে পেঙ্গুইনের বসবাসের প্রমাণ মিললেও  পোলার বেয়ারের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ভাইরাল হওয়া  হিমবাহের ছবিদুটোর কোলাজ পোস্টগুলো কমপক্ষে ১০ ডিসেম্বর থেকে ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে, যেখানে দুইটি ছবিই একই হিমবাহের বলে দাবি করা হচ্ছে। সেসব পোস্টে উল্লেখ করা হয়: পৃথিবীর অতিরিক্ত গরমে “আজকে সকালে” পৃথিবীর সব থেকে বড় হিমবাহটি ৬০০০ বছর ধরে এক জায়গায় থাকার পর অ্যান্টার্কটিকা থেকে ছুটে যায়। যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো তারিখের উল্লেখ করা হয়নি সুতরাং পোষ্টটি শেয়ার হওয়ার সময়কেই তারিখ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার এই সকল তথ্যের সূত্র হিসেবে বিবিসি গ্লোবালের নাম উল্লেখ করা হলেও বিবিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাই বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হলে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহটির নাম হচ্ছে A23A।

বিবিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ২৪ নভেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, A23A নামের বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিমবাহটি ৬০০০ বছর নয় বরং ৩০ বছর ধরে এক জায়গায় ছিল। ১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকা থেকে আলাদা হওয়ার পরে গত ২৪ নভেম্বর থেকে  আবার এটা সেই নির্দিষ্ট স্থান থেকে সরতে শুরু করেছে।

পরবর্তীতে, কোলাজের প্রথম ছবিটি খেয়াল করলে ‘A-76 iceberg (4320 km²)’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হলে রয়টার্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২০ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে রনে আইস শেল্ফ থেকে থেকে আলাদা হয়ে A-76 নামের হিমবাহের জন্ম হয়েছিল।

এরপর দ্বিতীয় ছবিটির উৎস খুঁজে বের করার জন্য এটা ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে দ্য গার্ডিয়ান এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে দ্বিতীয় ছবিতে থাকা হিমবাহটির নাম A68A উল্লেখ করা হয়। এটা ২০২০ সালে বিশাল একটি হিমবাহ থেকে ভেঙে গিয়ে দু-টুকরো হওয়ার পর A68A নাম ধারণ করেছিল এবং সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় ছিল।

অন্যদিকে ভাইরাল পোষ্টগুলোতে অন্য আরেকটি দাবি হচ্ছে বিশ্বের বর্তমান বৃহত্তম হিমবাহে পোলার বেয়ার এবং পেঙ্গুইন বাস করে।  কিন্তু বাস্তবে অ্যান্টার্কটিকার উপকূলে পেঙ্গুইন বসবাস করতে দেখা গেলেও পোলার বেয়ারের ক্ষেত্রে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পোলার বেয়ার মূলত আর্কটিক অঞ্চলে বসবাস করে।

উল্লেখ্য, A23A হিমবাহটির আগে A-76 ই ছিল পৃথিবীর সবচে বড় হিমবাহ।  A23A আইসবার্গের আয়তন হচ্ছে ৩,৯০০ বর্গ কিলোমিটার, যেখানে গোড়াতে A-76 আইসবার্গের আয়তন ছিল ৪,৩২০ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু রনে আইস শেল্ফ থেকে আলাদা হয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ হিমবাহ হিসেবে জন্ম হওয়ার এক মাসের মধ্যে A-76 তিন টুকরো হয়ে যায়। পরবর্তীতে এগুলো আলাদা আলাদা তিনটি নামে পরিচিত হয়। এর ফলে A-76 আর বিশ্বের সবচে বড় হিমবাহ নয়।

সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh