মদ শুল্কমুক্ত রেখে খেজুরে ২০৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে?

Published on: March 7, 2024

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এই মর্মে, খবর ছড়িয়েছে যে, খেজুরে ২০৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এবং মদ শুল্কমুক্ত রাখা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, পূর্বে খেজুর আমদানিতে শুল্ক–কর ছিল ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে রোজা উপলক্ষে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। শুল্ক কমানোর পূর্বে উন্নত মানের খেজুর আমদানিতে প্রতি কেজিতে শুল্ক ধরা হতো ২৬৩ টাকা। ১০ শতাংশ কমানোর ফলে বর্তমানে মূল্য পড়ছে ২০৯ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশে মদ আমদানির শুল্কহার ৫৯৬ থেকে ৬১১ শতাংশ। যদিও কূটনীতিকদের জন্য বিনা শুল্কে মদ কেনার সুযোগ রয়েছে।

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

মদ এবং খেজুর নিয়ে ফেসবুকে যে খবরটি ছড়িয়েছে সেটি যাচাই করতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগলে অনুসন্ধান করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া যায়, রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক–কর কমিয়েছে সরকার। ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব পণ্যের শুল্ক–কর কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, “রমজানে কিছু নিত্যপণ্যের দাম যাতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সে জন্য পাঁচ পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। শুল্ক কমলে তার সুবিধা ভোক্তারা পাবেন বলে আশা করছি”। প্রথম আলো পত্রিকা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আরো বিস্তারিত জানুন এখানে

 

প্রসঙ্গত, ৭ ফেব্রুয়ারির পর ঢাকা কাস্টমস হাউসের মাধ্যমে খেজুরের চারটি চালান খালাস হয়েছে। এসব চালানে ছিল উন্নত মানের খেজুর। এর মধ্যে রয়েছে আজওয়া, মরিয়াম, মেডজুল ও মাবরুর। লক্ষণীয় যে, পূর্বে এ ধরণের উন্নত মানের খেজুর আমদানিতে কেজিতে শুল্ক ছিল ২৬৩ টাকা। ১০ শতাংশ কমানোর ফলে বর্তমান মূল্য পড়ছে উন্নত মানের খেজুরে শুল্ক ২০৯ টাকা। সাধারণ মানের খেজুর আমদানিতে প্রতি কেজিতে শুল্ক ছিল ১৬৪ টাকা। ৩৩ টাকা কমে বর্তমানে শুল্ক পড়বে ১৩১ টাকা।

উল্লেখ্য, জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) নেতারা জানান, কাস্টমস খেজুরের শুল্কায়নের জন্য যে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু নির্ধারণ করেছে, তার কারণেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। সংগঠনটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা ইরাক থেকে কার্টুনে ৮০০-৯০০  ডলারে যে খেজুর আমদানি করছি, সেটার অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০০ ডলারে। প্রায় তিন গুণ বেশি দাম দেখিয়ে যে খেজুরটার শুল্ক নেওয়া হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। কাস্টমস আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ ও আমাদের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত দামের ওপর অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু নির্ধারণ করুক, এটাই আমরা চাই। না হলে খেজুরের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। দামের কারণে মানুষও খেজুর কিনতে পারছে না।“

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকৃত দামের ওপর অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু নির্ধারণ না করার কারণে আমদানিকারকদের অযৌক্তিকভাবে শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত রোজার আগে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরে যেখানে শুল্ক দিতে হতো ৫.৪৫ টাকা থেকে ২১.৮৪ টাকা, সেটি এবার দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকা থেকে ২০৮ টাকা। আরো বিস্তারিত জানুন এখানে এবং এখানে

 

অর্থাৎ, খেজুরের উপরে থাকা আমদানি শুল্ক বর্তমানে ১৫ শতাংশ। ৩১ মার্চ পর্যন্ত যা বিদ্যমান থাকবে। তাই খেজুরে ২০৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এই দাবিটি সত্য নয়। কাস্টমস খেজুরের শুল্কায়নের জন্য যে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু নির্ধারণ করেছে তার ফলে সর্বোচ্চ উন্নত খেজুরের কেজিতে ২০৮ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে।

এ পর্যায়ে মদ শুল্কমুক্ত কিনা তা জানতেও কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগলে অনুসন্ধান করা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মদ আমদানির শুল্কহার ৫৯৬ থেকে ৬১১ শতাংশ। যার মানে  এক লিটার মদের দাম যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে বাংলাদেশে শুল্কসহ দাম দাঁড়াবে ৭০০ টাকার বেশি। বিয়ারের শুল্কহার ৪৪৩ শতাংশ। তবে কূটনীতিকদের জন্য বিনা শুল্কে মদ কেনার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস রয়েছে ব্যবস্থা। বন্ড সুবিধায় দেশে ছয় ধরনের মদ বা অ্যালকোহল-জাতীয় পানীয় বাংলাদেশে আসে। আমদানি করা মদের মধ্যে রয়েছে- বিয়ার, স্পিরিট জাতীয় পানীয়, হুইস্কি, রাম ও টাফিয়া, গিন ও জেনিভা, ভদকা, লিকার’স ও করডিয়ালস। বন্ডের আওতায় ছয়টি লাইসেন্স রয়েছে। বলাবাহুল্য, বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, বন্ডেড ওয়্যারহাউস কূটনীতিকদের জন্য বিনা শুল্কে মদ কিনে পরে ওই মদের একটি অংশ বাইরে বিক্রি করে দেন।  আরো বিস্তারিত জানুন এখানে এবং এখানে

তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ খেজুর এবং মদ শুল্কমুক্ত নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত দাবিগুলোকে “মিথ্যা” বলে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh