রুমিন ফারহানার বক্তব্য বিকৃত করে ভাইরাল

Published on: November 23, 2022

সম্প্রতি এই মর্মে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যে, “বিএনপির সমাবেশে গেলেই বিরানি পাওয়া যায়, স্বীকার করলেন রুমিন ফারহানা।” তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার একটি বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন হয়েছে। মূলত তাঁর উচ্চারিত আওয়ামী-লীগ শব্দের স্থানে বিএনপি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে মনে হয়েছে তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে বলেছেন।

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

১৯ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে একাধিক জায়গায় অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। শুরুর দুই সেকেন্ড অংশে একবার মধ্যবর্তী ১২ সেকেন্ড অংশে দ্বিতীয়বার ও শেষের ১৬ সেকেন্ড অংশে তৃতীয়বারের মতো গড়মিল দেখা গিয়েছে। ভিডিওটি দেখে এমন মনে হয়েছে, রুমিন ফারহানা বুঝি কথার মাঝে তাল হারিয়ে ফেলেছেন।

এখন দেখে নেওয়া যাক এই ১৯ সেকেন্ডের বক্তব্যে কি কি অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। ভিডিওটির শুরুর দুই সেকেন্ড অংশ ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে সেখানে কোনো কিছু এডিট করা হয়েছে। রুমিন ফারহানার বক্তব্য এই অংশে দ্রুত গতিতে এগিয়েছে। এদিকে ১০ সেকেন্ড অংশে রুমিন ফারহানা বলেছেন “একটা বসার চেয়ার পাওয়া যায়”। তাতক্ষনিকভাবে ১২ সেকেন্ড অংশে আবার কিছু এডিট চোখে পড়েছে, এবং এখানে বলতে শোনা গেছে, “আর সেই ছবি ব্যবহার করে নানান জায়গায় ধান্দা করা যায়, ধান্দাবাজি করা যায়।” অর্থাৎ এই কথাটির আগে ছবি তোলা যায়, এমন একটি বাক্য তিনি বলেছেন যে বাক্যটি ভিডিওটিতে অনুপস্থিত রয়েছে। ১৫ সেকেন্ড অংশটুকুও ভালভাবে দেখলে বোঝা যাবে এখানেও ভিডিওটি দ্রুত এগিয়ে গেলো ও তড়িতগতিতে রুমিন ফারহানা বললেন, “বিএনপির জনসমাবেশে গেলে এই লাভগুলো হয়।”

১৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে এতোগুলো অসঙ্গতি দেখে ফ্যাক্টওয়াচ মূল ভিডিওটির সন্ধান করে। বিস্তারিত জানতে রুমিন ফারহানার ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে সন্ধান করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ১৬ নভেম্বর ২০২২ তারিখে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা তাঁর ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওটি দেখুন এখানে।  এই ভিডিওটি “১০ ডিসেম্বর নিয়ে সরকারের কাঁপাকাঁপি দেখে মনে হচ্ছে ওইদিন সরকারের পতন হতে যাচ্ছে। যদিও বিএনপি বলেছে এটা আগের বিভাগীয় সমাবেশের মত আরেকটি সমাবেশ। আসলে কী হতে যাচ্ছে সেদিন”? শিরোনামে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। ১০ মিনিটের বক্তব্যের এই ভিডিওটি ও ভাইরাল ভিডিওটি একই মনে হওয়ায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম ১০ মিনিটের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে।

উল্লেখ্য, এই ভিডিওটির ৩ মিনিট ২৬ অংশে রুমিন ফারহানা বিএনপির সমাবেশে গেলে কি কি ঝুঁকি থাকে সে বিষয়ে আলোচনা করেন। যেমন, আক্রমণের শিকার হওয়া, গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাওয়ার ভয় কিংবা গুলিতে প্রাণও দিতে হতে পারে। এরপরে ৩ মিনিট ৪৪ অংশে তিনি বলেন, “আর আওয়ামী-লীগের সমাবেশে যাওয়া মানে কিছু লাভ হওয়া, কোনো লাভ যদি না হয়, তবুও এক প্যাকেট বিরিয়ানি পাওয়া যায়। একটা বসার চেয়ার পাওয়া যায়। পুলিশ প্রটেকশন পাওয়া যায়, নিরাপদে ঘরে ফেরা যায়। আর সেই ছবি ব্যবহার করে নানান জায়গায় ধান্দা করা যায়, ধান্দাবাজি করা যায়। আওয়ামী-লীগের সমাবেশে গেলে এই লাভটা হয়।”

অর্থাৎ, রুমিন ফারহানা তাঁর বক্তব্যে যেই যেই অংশে আওয়ামী-লীগের নাম ব্যবহার করেছেন সেখানে সেখানে এডিটের সাহায্যে বিএনপির নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বক্তব্যের কিছু অংশ বাদও দেওয়া হয়েছে।

যেহেতু ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার মূল বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে, সেই কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভিডিওটিকে বিকৃত সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh