৩০০ জনের বিরূদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় 

Published on: December 27, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা বাংলাদেশের ১০০ এমপি মন্ত্রীসহ ৩০০ জনকে নিষেধাজ্ঞা এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনীর অ্যাকশন শুরু হওয়া সংক্রান্ত ভিডিও।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, ১০০ এমপি-মন্ত্রীসহ ৩০০ জনকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ঘটনাটি ঘটেছে লাতিন আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালার বিরূদ্ধে, বাংলাদেশের বিরূদ্ধে নয়।  দ্বিতীয়ত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখনও তাদের কার্যক্রম শুরু করেনি বরং আগামী ৩ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা এই দায়িত্ব পালন করবেন।  অন্যদিকে ভাইরাল ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনীর এ্যাকশন সংশ্লিষ্ট দাবির সমর্থনে প্রমাণ হিসেবে যে আলাদা আলাদা ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং, ফুটেজগুলোকে নানান কায়দায় জোড়া লাগিয়ে ভাইরাল ভিডিওটি বানানো হয়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

১০০ এমপি মন্ত্রীসহ ৩০০ জনকে নিষেধাজ্ঞা এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনীর অ্যাকশন শুরু হওয়ার ভিডিওটি বাংলাদেশের কি না — এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে আলোচিত দাবির সমর্থনে চারটি আলাদা আলাদা ভিডিও ফুটেজের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম ফুটেজটি হচ্ছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদনের অংশ যেখানে, একজন সংবাদ উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করায় ১০০ এমপিসহ প্রায় ৩০০ নাগরিকের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।”  দ্বিতীয় ফুটেজেও এক ব্যক্তিকে ১০০ এমপিসহ প্রায় ৩০০ নাগরিকের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সেখানে তিনি প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে তার বক্তব্যটি দিয়েছিলেন যেই প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা ছিল “গুয়েতেমালার ১০০ এমপিসহ প্রায় ৩০০ ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ।”  তৃতীয় ফুটেজে অন্য একজন ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন সম্পর্কে বলতে শোনা যায়। কিন্তু, সেখানে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের যাবতীয় সকল দায়িত্ব সেনাবাহিনী গ্রহণ করেছে কি না এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি। চতুর্থ ফুটেজে দেশ টিভির একটি ভিডিও প্রতিবেদনে অংশ ব্যবহার করা হয়েছে। দেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার. কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি)-এর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ওয়াকার-উজ-জামানের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত আলোচনা সম্পর্কে বলা হচ্ছিল। অর্থাৎ, কোথাও সরাসরি বলা হয়নি যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ১০০ এমপি মন্ত্রীসহ ৩০০ জনকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সকল দায়িত্ব সেনাবাহিনী নিয়েছে।

তাই, এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরবর্তিতে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে ভিডিও ফুটেজগুলোর উৎস খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ ডিসেম্বর আপলোড করা প্রথম ফুটেজটির পূর্বসংস্করনের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ছিল মূলত গুয়েতেমালার ১০০ এমপিসহ ৩০০ ব্যক্তির ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া সংক্রান্ত। “গুয়েতেমালার” শব্দটি বাদ দিয়ে ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার হরা হয়েছে।

 

এরপরে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ফুটেজটি যথাক্রমে Voice Bangla নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং Nayeem Korea  নামের একটি ফেসবুক পেইজে খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও দেখা যাচ্ছে যে, মূল ভিডিওগুলো থেকে কিছু অংশ কেটে ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।


চতুর্থ ফুটেজটি হচ্ছে দেশ টিভির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ ডিসেম্বর আপলোড করা একটি ভিডিও প্রতিবেদনের অংশ। এই প্রতিবেদনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ১৩ দিনের জন্য সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ওয়াকার-উজ-জামানের বৈঠক সম্পর্কে বলা হচ্ছিল।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকার কথা থাকলেও সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ, নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখনও তাদের কার্যক্রম শুরু করেনি।

অন্যদিকে, গত ১১ ডিসেম্বর সোমবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি বিবৃতিতে গুয়েতেমালার ১০০ এমপি মন্ত্রীসহ ৩০০ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তবে, নির্ভরযোগ্য কোনো উত্‌স বা মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের ১০০ এমপি মন্ত্রীসহ ৩০০ জনকে নিষেধাজ্ঞা  সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh