যশোর আইটি পার্ক কি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে?

Published on: April 5, 2024

যা দাবি করা হয়েছে: যশোরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে পার্কের ভবনটি পরিত্যক্ত ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।

যা পাওয়া যাচ্ছে: যশোরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি ঝকঝকে, পরিষ্কার এবং কায়কর অবস্থায় আছে। এটি পরিত্যক্ত ধ্বংসাবশেষ ভবনে পরিণত হয়নি। ছবিটি এআই প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করা হয়েছে। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভুল তথ্য দিয়ে ছড়ানো ফেসবুকের পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে শনাক্ত করছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি নমুনা পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে,এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান: ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের সত্যতা অনুসন্ধানে ফ্যাক্টওয়াচ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ইংরেজিতে (Bangladesh Hi-Tech Park Authority) এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান চালায়। সেখানে Sheikh Hasina Software Technology Park, Jessore এর পেজের Investors List টেবিল থেকে জানা যায় সেখানে ৬১ টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে।

২রা মার্চ, ২০২৪ তারিখে, বাংলা ট্রিবিউনে ‘শেখ হাসিনা সফটটেক পার্ককে আরও কর্মমুখী করবে সরকার: কাজী নাবিল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায় ২রা মার্চ দুপুরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ।

কাজী নাবিল আহমেদ ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার কিছু ছবি তার অফিশিয়াল ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। উক্ত ছবিগুলো দেখে জানা যাচ্ছে এই মতবিনিময় সভাটি শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক জরাজীর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে এমন তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সময় নিউজ ৩রা এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে একটি সংবাদ প্রকাশ করে যার শিরোনাম ছিলো ‘যশোর আইসিটি পার্কের জরাজীর্ণ ভাইরাল ছবিটি ভুয়া’। উক্ত সংবাদে জানা যাচ্ছে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে সুপরিচিত অনলাইন গ্রোসারি শপ চালডাল, টেলিকম কোম্পানি গ্রামীনফোন, আইটি কোম্পানি আমরা টেকনোলজিস-এর মতো ৪৫টি তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানি বর্তমানে যশোরস্থ তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি সম্পর্কে পার্কের ব্যবস্থাপনা সংস্থা টেকসিটি বাংলাদেশের যশোর শাখার ম্যানেজার সান্তুনু চক্রবর্তী বলেন,  “ আমরাও ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। পরে তথ্য প্রযুক্তিবিদদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি এটা এআই টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। সরকার ও শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে ভুয়া ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন হাজার মানুষ কাজ করতে আসে। আর আজ আপনারাও দেখেছেন ভবনটি কেমন। আমরা এজন্য বিভ্রান্তির উপর সংবাদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ধরনের কাজ যারা করছেন তাদের তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ৪ এপ্রিল সময় টিভির একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। ভিডিওর নিচের শিরোনামে লিখেছেন “জরাজীর্ণ যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ছবিটি এআই দ্বারা এডিট করা এবং গুজব।” ভিডিওটিতে যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ককে ঝকঝকে এবং পরিপাটি দেখাচ্ছে। পরিত্যক্ত ধ্বংসাবশেষ ভবনের মতো দেখাচ্ছে না।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের জরাজীর্ণ, ভঙ্গুর ছবির সত্যতা অনুসন্ধান করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আজকের পত্রিকা এবং রিউমার স্ক্যানার

অতএব, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যশোরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি ঝকঝকে, পরিষ্কার এবং পরিপাটি অবস্থায় আছে। এটি পরিত্যক্ত ধ্বংসাবশেষ ভবনে পরিণত হয়নি। ছবিটি এআই প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করা হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে উক্ত ছবিসম্বলিত ভুল তথ্য দিয়ে ছড়ানো সকল পোস্টকে “মিথ্যা তথ্য” হিসেবে শনাক্ত করছে।

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh