হিজাব পরায় নারীকে আড়ং-এ প্রবেশে বাধা – ভূয়া দাবিতে পুরানো ভিডিও

Published on: April 4, 2024

যা দাবি করা হয়েছে: হিজাব ও নিকাব পরার কারণে একজন নারী ক্রেতাকে আড়ং-এর গুলশান শাখায় প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ । প্রমাণস্বরূপ উক্ত ক্যাপশনের সাথে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। 

যা পাওয়া যাচ্ছে: যে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে তা সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয় বরং করোনা মহামারি সময়ের। সে সময়ে নারী ক্রেতাটিকে আড়ং-এর গুলশান শাখায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছিল এমন দাবির সত্যতা মিলেছে। তবে বাধা দেবার কারণ হিসেবে জানা গেছে করোনার বিধিনিষেধ মোতাবেক নারীটির মাস্ক পরা ছিলো না। 

গুজবের উৎস: 

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে বলা হয়, “সমকামীদের আশ্রয়ে লালিত আড়ং গুলশান ব্রাঞ্চে হিজাব পড়ায় শোরুমে প্রবেশ করতে দেয়নি এক বোরকা নিকাব পরিহিত মহিলাকে। সাথে তার স্বামী ও বাচ্চা ছিল। এসব বদমাশদেরকে দেশ ছাড়া করা ছাড়া বিকল্প আর কোন পথ নাই”।                                        

ভাইরাল কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জানা যায়,  ভিডিওটি প্রায় চার বছরের পুরোনো। উল্লেখ্য, করোনাকালীন দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক লকডাউন করা হয়েছিল। ঘরে বা বাইরে বেরোলে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করেছিল সরকার। ভাইরাল ভিডিওতে ভিডিওধারণকারীকে যে কথাগুলো বলতে শোনা যাচ্ছে তা মাস্ক সম্পর্কিত। এ পর্যায়ে ভাইরাল ভিডিওর কথাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো: 

ভিডিওটির শুরুতে ভিডিও ধারণকারীকে আড়ংয়ের ওই প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, “আমি বলতে চাচ্ছি যে, আপনি যেটা পরে রইছেন, এটা মাস্ক। আর এই নেকাব মাস্ক না কেন? আমি এটার ব্যাখ্যা চাচ্ছি আপনাদের কাছে। আপনার এটা মাস্ক হয় কীভাবে? আপনার এটার কি কোনো মেডিক্যাল অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন আছে কি না?

এই অংশটুকুতে দেখা যায়, ভিডিও ধারণ করা নিয়ে আড়ং-এর কর্মী অর্থাৎ যাকে তিনি ক্যামেরাতে রেখেছেন তিনি ভিডিও করা নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর বিপরীতে ভিডিও ধারণকারীর বক্তব্য হলো ভিডিও আপনার অবশ্যই করতে দিতে হবে। কারণ আপনি আমাকে ঢুকতে দেন নাই রেজিস্ট্রেশন করার পরেও। তাই না? নেকাব কেন মাস্ক না, আর আপনারটা কেন মাস্ক? আমাকে এই ব্যাখ্যাটা দেন, প্লিজ।  

ভিডিওধারণকারী অন ক্যামেরায় লোকেশন হিসেবে আরও উল্লেখ করেন আমি এখন গুলশান আড়ংয়ে (লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ংয়ের গুলশান শাখার শোরুমে) আছি। এখানে একটা জিনিস চেঞ্জ করব। আমার ওয়াইফকে আমি মাস্কে (মাস্ক পরিহিত) নিয়ে আসি নাই। বাচ্চারটার আছে। এখন তার নেকাবটাকে মাস্ক বলতে চাচ্ছে না। বাট তারা যেটা পরে আছে সেটা কীভাবে মাস্ক হয়? আমি এই জিনিসটা সবার কাছে প্রশ্ন করতেছি।”

ভিডিওটিতে ভিডিও ধারণকারীকেই শুধু বলতে শোনা যায়, আড়ংয়ের কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য সেখানে শোনা যায়নি। 

প্রসঙ্গত, জানা যাচ্ছে সম্প্রতি ভাইরাল ভিডিওটি যথাসম্ভব ৭ আগস্ট ২০২০ তারিখে প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। শাবীব তাশফী নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে। ক্যাপশনে তিনি লিখেন, “এদেরকে থামানোর মতো কেউই কি নেই? কাপড়ের মাস্ক মুখে লাগিয়ে সেলসম্যানরা হরদম ডিউটি করছে। অথচ মুখে নিক্বাব লাগানো লাগানো থাকার কারণে বোরকাবৃত মহিলাদেরকে আড়ং ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না! কিছুদিন আগে এক ভাই পোস্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, তার স্ত্রীকে আড়ংয়ের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। আর আজ এই ভাইয়ের ভিডিওটা সামনে এলো। কর্তৃপক্ষের মূল আপত্তি কি মাস্ক না পড়ায়? নাকি নিক্বাব আর হিজাবেই আপত্তি?”

বলাবাহুল্য, ভিডিও ধারণকারীর মূল বক্তব্যের ভাবনুবাদ করলে দাঁড়ায়, আমার স্ত্রী মাস্ক পরে বা নিয়ে আসেনি। আমি এবং বাচ্চারটার মাস্ক আছে। তবে আমার স্ত্রী নেকাব পরে আছে যা দ্বারা তার মুখমণ্ডল ঢেকে আছে। এখন তার নেকাবটাকে মাস্ক হিসেবে গ্রহণ করতে চাচ্ছে না আড়ং কর্তৃপক্ষ। অথচ তারা যেটা পরে আছে সেটাও কাপড়ের তৈরি। তাহলে এটা কীভাবে মাস্ক হয়? 

এই অংশ থেকে এটি পরিষ্কার যে, ভিডিওধারণকারী ব্যক্তিটির স্ত্রীর মাস্ক পরা ছিলো না তাই ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছিল। আর ঘটনাটি ছিল করোনা মহামারির সময়কার

অর্থাৎ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, হিজাব কিংবা নিকাব পরিধানের জন্য নয়, বরং ওই নারী করোনাকালীন বিধিনিষেধ মেনে মাস্ক না পরায় তাকে আড়ং শোরুমে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল সেখানকার কর্তৃপক্ষ। 

সঙ্গত কারণে এমন পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh