মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কি বিএনপি’র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছে?

Published on: December 24, 2023

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত একটি ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে যে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার (Matthew Miller) তাঁর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন৷ তবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ এ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে একজন প্রশ্নকর্তা ম্যাথিউ মিলারের কাছে জানতে চান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নাশকতামূলক হামলাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তরায় মনে করছে কিনা। উক্ত প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় এবং এ ধরণের নির্বাচনের একটি মূল উপাদান হচ্ছে সেটা পুরোপুরি সহিংসতামুক্ত হতে হবে। এছাড়া, পুরো সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউ মিলারকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আর কিছু বলতে শোনা যায়নি। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যে নাশকতামূলক হামলাগুলো হয়েছে সেগুলোর সাথে কে বা কারা জড়িত ছিল তা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। অতএব, ম্যাথিউ মিলার বিএনপি’র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন – দাবিটি সঠিক নয়। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিতে বলতে শোনা যায় স্থানীয় (যুক্তরাষ্ট্র) সময় বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৩) পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বিএনপি’র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন। আলোচিত ভিডিওতে উত্থাপিত দাবিটি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি ঘেঁটে দেখেছি এবং ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ এ আয়োজিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিও এবং ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট খুঁজে পেয়েছি। উক্ত ভিডিওর ২২ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে গিয়ে দেখা গেছে একজন প্রশ্নকর্তা স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কাছে জানতে চেয়েছেন – 

“A wave of arson attacks on buses full of passengers and trucks, displacing rail tracks, petrol bombing train coaches during blockades, witnessed bus helpers burned alive with scored – injured to derail the election. Does U.S. consider such action undermine the prelude to free and fair election in Bangladesh?” (যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়: নির্বাচনকে বানচাল করতে যাত্রীবাহী বাস এবং ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, রেলের লাইন উৎপাটন করা হচ্ছে, অবরোধের সময় ট্রেনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, বাসের হেলপার আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র কি মনে করে এইধরণের হামলা বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্টু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়?)

উক্ত প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন – 

“So you have heard me say consistently from this podium that we want to see free and fair elections held in Bangladesh, and one of the components of a free and fair election is that that election be conducted without violence.” (যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়: আপনি শুনে থাকবেন আমি ধারাবাহিকভাবে এই পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বলেছি যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি সুষ্টু এবং অবাধ নির্বাচন দেখতে চায়। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের একটি মূল উপাদান হচ্ছে সেটা পুরোপুরি সহিংসতামুক্ত হতে হবে।)

টুকু ছাড়া পুরো সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউ মিলারকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোন কথা বলতে শোনা যায়নি এবং তিনি তাঁর বক্তব্যে বিএনপি’র কথাও উল্লেখ করেননি। তাছাড়া, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত হওয়া নাশকতামূলক হামলাগুলোর সাথে কে বা কারা জড়িত ছিল তা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। 

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ম্যাথিউ মিলার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন বলে যে দাবিটি করা হচ্ছে সেটা সঠিক নয়। 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।  

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh