ভূমি নামজারিপ্রক্রিয়া বাতিলের দাবিটি গুজব

Published on: January 21, 2024

যা দাবি করা হয়েছে: ২০২৪ সাল থেকে বাতিল হয়ে গেল জমির নামজারি পদ্ধতি। নামজারি করতে হবে না। আসছে ভূমি স্মার্ট ডিজিটাল রেকর্ড সিস্টেম।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে: দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান ভূমি ব্যবস্থাপনায় নামজারি প্রক্রিয়া বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া, নামজারি প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিটিকে ইতোমধ্যেই ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে গুজব বা মিথ্যা তথ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দাবিটির সত্যতা জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে গুগলে সার্চ করা হয়। যার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে  প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির শিরোনামে বলা হয়েছে, “নামজারিপ্রক্রিয়া বাতিলের তথ্য গুজব: ভূমি মন্ত্রণালয়।” প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক বিবৃতির উপরে ভিত্তি করে করা হয়েছে।

এ পর্যায়ে ভূমি নামজারিপ্রক্রিয়া বাতিলের দাবিটি নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে যেই বিবৃতিটি দেয়া হয়েছে তা পর্যালোচনা করা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভ্যারিফাইড ফেসবুকে পেজে বিষয়টি নিয়ে বিবৃতিটি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিটির প্রথম দুই লাইনে জানানো হয়েছে,

/নামজারি প্রক্রিয়া বাতিলের কোনো সুযোগ নেই/

/নামজারি প্রক্রিয়া বাতিলের খবরটি গুজব কিংবা ভুল তথ্য/

 

বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে, (ঢাকা, বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪) সম্প্রতি অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কিছু ব্যক্তি নামজারি প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছে মর্মে বিভিন্ন তথ্য কিংবা ভিডিও কনটেন্ট তৈরি ও শেয়ার দিচ্ছেন। এতে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান ভূমি ব্যবস্থাপনায় নামজারি প্রক্রিয়া বাতিলের কোনো সুযোগ নেই।

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৪৩ (গ) ধারায় খতিয়ান সংশোধনের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা আছে, “ধারা ৮৯ এর অধীন নোটিশ প্রাপ্তির পর, রাজস্ব কর্মকর্তা খতিয়ানে নামজারির জন্য একটি নথি খুলিবেন এবং নামজারির জন্য জোতের সহ-অংশীদারগণের প্রতি নোটিশ জারি করিবেন”। প্রজাস্বত্ত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর ৮, ৯ এবং ২৩ ধারাতেও নামজারির কথা বলা হয়েছে।

 

উক্ত বিবৃতিটির দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, সরকার জনগণের সুবিধার্থে ও ভোগান্তি কমাতে নামজারি প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। জমি ক্রয় কিংবা অন্য কোনোভাবে মালিকানা পরিবর্তন পরবর্তী ভূমি নিবন্ধনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে “রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ”-এর মাধ্যমে।

প্রধানমন্ত্রী গত ২৯ মার্চ ২০২৩ তারিখে রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় নামজারি প্রক্রিয়া কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে দেশের ১৭টি উপজেলায় এই কার্যক্রম চলমান। শীঘ্রই দেশব্যাপী বাস্তবায়ন করা হবে রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ।

অর্থাৎ, নামজারিপ্রক্রিয়া বাতিল হয়নি বরং নামজারিপ্রক্রিয়ার ধরণে পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। যার ফলে ভূমি নিবন্ধনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারির কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

ভূমি নামজারি কি- এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, নামজারি বা মিউটেশন হচ্ছে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মালিকানা পরিবর্তন করা। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করার পর তা নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়।

কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। দুইটি জরিপ কার্যক্রমের মধ্যবর্তী সময়ে রেকর্ড সংশোধন করা হয় নামজারির মাধ্যমে। জমির মালিকানা প্রমাণের অন্যতম প্রধান শর্ত সরকারি রেকর্ডে/খতিয়ানে নাম থাকা।

অর্থাৎ, নামজারিপ্রক্রিয়া বাতিল হয়নি বরং নামজারিপ্রক্রিয়ার ধরণে পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। যার ফলে ভূমি নিবন্ধনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারির কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভূমি নামজারিপ্রক্রিয়া বাতিলের দাবিটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh