যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি আটকে দেয়ার ভুয়া দাবি

Published on: September 20, 2023

যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি আটকে দিলো বিএনপি – এ বার্তা নিয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করে দেখেছে যে, এমন দাবির সাথে যে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে তা ভিন্ন একটি বিক্ষোভ কর্মসূচির ফুটেজ দিয়ে বানানো হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি আটকে রাখার বিষয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে থেকে এ জাতীয় কোনো বার্তা প্রকাশিত হয়নি। সরকার বা বিরোধী দলের তরফেও এমন কোনো দাবি পাওয়া যায় নি। সে কারণে এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

এমন পোস্টের কিছু নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি আটকের দাবি করে যে ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, গুগলে অনুসন্ধান করে তার প্রকৃত উৎস পাওয়া যায়। ১ মে, ২০২৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রদানের সময় বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরের সামনে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ করেছিল। বিস্তারিত দেখুন এখানে। সেদিনের সেই বিক্ষোভ কর্মসূচির ভিডিওটিই বর্তমানে গাড়ি আটকের দাবিতে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বক্তব্য থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে কর্মসূচিটি বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরের সামনে হয়েছিল।  উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন ডিসির বিশ্বব্যাংকের সামনে সেদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে  আওয়ামী লীগ ও বিএনপির  উভয় দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল।

মূলধারার সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ৪২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট (বিএ ১৫৯৩) নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছানোর আগেই প্রতি বছরের মতো এবারও চার নম্বর টার্মিনালের বাইরে মুখোমুখি অবস্থান নেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। আনন্দ ও প্রতিবাদ সমাবেশে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা টার্মিনাল এলাকা।   প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে আসা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রোববার সন্ধ্যা থেকেই জেএফকে বিমানবন্দরে জড়ো হন। তারা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। টার্মিনালের আরেক পাশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো প্রতিবাদসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিস্তারিত দেখুন এখানে এবং এখানে।

বিগত কিছু বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন দেশে আগমন উপলক্ষে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সংবর্ধনা ও আনন্দ মিছিলের আয়োজন করে। অপরদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে থাকে।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি আটক করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা — এমন দাবি কোনো বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া যায়নি। ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে-বিপক্ষে শ্লোগান দিতে দেখা গেলেও গাড়ি আটকে রাখার কোনো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি।

সঙ্গত কারণে এই দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh