কোরআন শরীফে পূজা দেখতে যাওয়াকে কি ‘হারাম’ বলা হয়েছে ?

Published on: October 23, 2023

  চলমান দুর্গাপূজার প্রেক্ষিতে মুসলিম নাগরিকের পক্ষে পূজা দেখা যাওয়া কিংবা সেখানকার কোনো খাদ্য গ্রহণ করায় ধর্মীয় বিধিনিষেধ এর ব্যাপারে একটি পোস্ট অনলাইনে দেখা যাচ্ছে। কোরআন শরীফের সূরা বাকারার রেফারেন্স দিয়ে কেউ কেউ দাবি করছেন, পুজা দেখতে যাওয়া এবং কিছু খাওয়া ‘হারাম’ অর্থাৎ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবে কোরআন শরীফের উক্ত আয়াত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সেখানে পূজা দেখতে যাওয়া নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। নির্দিষ্ট খাবার (মাংস) কে ‘হারাম’ বলা হলেও অন্যান্য খাবারের ব্যাপারে এই আয়াতে কোনো নিষেধাজ্ঞা জানায়নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখতে পাবেন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

মোঃ আবদুল্লাহ আল আসিফ এই স্ট্যাটাসে লিখেছেন

“মুসলিমদের জন্য হিন্দুদের পূজা দেখতে যাওয়া এবং তাদের পূজার প্রসাদ খাওয়া হারাম”!

[বাকারা-১৭৩,আল মুসান্নাফ-১৬০৯]

এই কোরআনে (কোরআনের) আয়াত অনুযায়ী

পুজা দেখতে জাওয়া (যাওয়া) কিছু খাওয়া

হারাম হারাম হারাম হারাম 

মুসলিম সবাইকে জানিয়ে দেওয়া    আপনাদের ঈমানি দায়িত্ব…

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

পোস্টের প্রথম বাক্যের পরে রেফারেন্স যোগ করার বহুল ব্যবহৃত আঙ্গিক অনুযায়ী তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে লেখা রয়েছে  [বাকারা-১৭৩,আল মুসান্নাফ-১৬০৯] , যা দেখে যে কেউ ধারণা করতে পারেন, বাকারা-১৭৩ এবুং আল মুসান্নাফ-১৬০৯ এ লেখা রয়েছে,

মুসলিমদের জন্য হিন্দুদের পূজা দেখতে যাওয়া এবং তাদের পূজার প্রসাদ খাওয়া হারাম

তবে কোরআন শরীফের সূরা বাকারার ১৭৩তম আয়াত এর একাধিক অনুবাদ ঘেঁটেও সরাসরি এই ধরনের কথা পাওয়া যায় নি। পূজা বা কোনো স্থানে গমন করার কোনো নিষেধাজ্ঞা এখানে নেই, বরং এখানে খাবারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অন্য কয়েক ধরনের নিষিদ্ধ খাবারের  সাথে ‘গায়রুল্লাহ’ বা আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যের জন্য নিবেদিত পশুর মাংসকেও ‘হারাম’ করা হয়েছে। মাংস ব্যতীত অন্যান্য খাবারের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক নামক নামক হাদিসের বইয়ের ১৬০৯ তম হাদিসে দেখা যাচ্ছে, খলিফা হযরত ওমর (রা) এখানে ২ টা পরামর্শ দিচ্ছেন। হাদিসের অনুবাদটা এমন দাঁড়ায়-

ইমাম আবদুর রাজ্জাক ও বায়হাকী (রাহিমাহুমুল্লাহ) এই বর্ণনাটিকে সাইয়্যিদুনা ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর বক্তব্য হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছেন। ‘আতা ইবনে দীনার (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন যে, সাইয়্যিদুনা ‘উমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন:

“অনারবদের ভাষা শিখো না এবং তাদের উৎসবের দিনে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না, কারণ তাদের উপর [স্বর্গীয়] গজব নেমে আসছে।”

লক্ষণীয়, এখানে ‘হারাম’ এর মত কোনো পরিভাষা ব্যবহার করা হয়নি, যা পূর্বের কোরআনের আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া এখানে উপাসনালয়ে না যাওয়ার উপদেশ দেওয়া হলেও খাবারের ব্যাপারটা আলোচিত হয়নি।

অর্থাৎ, এখানে রেফারেন্স হিসেবে যে দুইটা সূত্র দেওয়া হয়েছে , তার কোনোটারই সরাসরি অনুবাদ এই স্ট্যাটাসে নাই। এছাড়া, এই দুই সূত্রের কোনোটাতেই সরাসরি ‘পূজা দেখতে যাওয়া’ কিংবা ‘প্রসাদ খাওয়া’ কে ‘হারাম’ বলা হয়নি। তবে এই স্ট্যাটাস থেকে অনেকেই  ইসলামের মূল গ্রন্থ আল-কোরআনে এমন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ফেসবুকে কেউ কেউ সেকথা জানান ও দিচ্ছেন। যেমন

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য- এক ধর্মের অনুসারীদের অন্য ধর্মের উৎসবে যাওয়া উচিত কি অনুচিত , বা ইসলাম ধর্মের আলোকে হিন্দু ধর্মের পূজায় মুসলিমরা যেতে পারবে কি পারবে না, সেটা ধর্মীয় আলোচনার বিষয়, যা ফ্যাক্টওয়াচের কাজের এখতিয়ার এর বাইরে । এই নিবন্ধে কেবলমাত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কোরআন শরীফের একটি আয়াত এর ভুল ব্যবহারকে চিহ্নিত করে হয়েছে ।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh