প্রধানমন্ত্রীর সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের গুজব

Published on: January 14, 2024

যা দাবী করা হচ্ছেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের যে খবরের ক্লিপটি ভিডিওতে পাওয়া যাচ্ছে তা বর্তমান সময়ের না। ১১ জুন, ২০২২ সালে প্রকাশিত সময় টিভির ওই খবরে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতাদের খবর প্রকাশ করা হয়েছিলো। তাছাড়া অন্য খবরের ক্লিপগুলোর কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে কোন তথ্য দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা BNP নামক ফেসবুক পেজ  থেকে প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের খবর ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে সন্ধ্যা ৬ঃ১৩ মিনিটে প্রথম পোস্ট করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে সন্ধ্যা ৭ টায় গণভবনে তার মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে শনাক্ত করছে।

গুজবের উৎসঃ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা BNP নামক ফেসবুক পেজ থেকে ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, যার ক্যাপশনে ছিল –  ‘এইমাত্র সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেন শেখ হাসিনা/দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে নির্বাচন চাই বাংলাদেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়

এছাড়া হ্যশট্যাগ যুক্ত করে লেখা ছিল

#ইনশাআল্লাহ #নির্বাচন #তত্ত্বাবধায়কসরকার

#টেইক_ব্যাক_বাংলাদেশ

#FreeDemocracy

#StepDownHasina’

পরবর্তীতে ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড এর মূল ভিডিওটি অপরিবর্তিত রেখে আরো কিছু ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্তন করে একই ক্যাপশনে বিভিন্ন পেজ এবং আইডি থেকে পোস্ট করা হয়।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা BNP নামক ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা মূল ভিডিওটির প্রথম ৪ সেকেন্ডের ১ম নিউজ ক্লিপে বলা হয় ‘ গ্রেফতার হন আওয়ামীলীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

অনুসন্ধানে উক্ত ক্লিপের সাথে মিল আছে এমন একটি খবর সময় টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যাচ্ছে। সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত খবরের (৬-১৩) সেকেন্ডের ক্লিপের সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ক্লিপের মিল রয়েছে। একই সাথে , ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েসে বলা কথাগুলোর সাথেও ছড়িয়ে পড়া ক্লিপটির মিল রয়েছে। ১১ জুন, ২০২২ সালে প্রকাশিত ১.১৮ মিনিটের খবরটির শিরোনাম ছিলো ‘সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর মুক্তি পান তিনি’। সময় টিভির খবরটি থেকে জানা যায়  ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেফতার হন আওয়ামীলীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বেশ কয়েকটি মামলায় প্রায় ১১ মাস কারাবন্দি ছিলেন। তিনি ১১ জুন, ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান।

অর্থ্যৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতার হওয়ার খবরটি বর্তমান সময়ের না, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের।

ভিডিওটির ১৫ সেকেন্ড থেকে ৪২ সেকেন্ড সময়ের ক্লিপটিতে সংবাদ উপস্থাপক বলেন ‘চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীতে কর্মরত সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন।’ এটুক অংশের পর দেখা যায় জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ভাষণ দিচ্ছেন। ভাষণে তিনি বলছেন ‘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে , এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। দেশ সেবার এই মহান ব্রতকে ধারণ করে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে পেশাগত উৎকর্ষতা অর্জনের মাধ্যমে, আরো নিবেদিতভাবে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে।’

ক্লিপটির ভিডিও, ভয়েস এবং কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি খবরের। খবরের শিরোনাম ছিলো ‘সেনাবাহিনীতে কর্মরত সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে’। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের খবরে সংবাদ উপস্থাপকের অংশটুকু পাওয়া যাচ্ছে ৪ সেকেন্ড থেকে ১২ সেকেন্ড পর্যন্তে সময়ের ক্লিপে আর জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের ভাষণের অংশটুকুর মিল পাওয়া যাচ্ছে ৪৪ সেকেন্ড থেকে ১.০২ মিনিটের ক্লিপের সাথে। উক্ত নিউজ থেকে জানা যাচ্ছে, ২৪ ডিসেম্বর সকালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসের আর্মি মেডিকেল কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের প্যারেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫টি ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বক্ততাটি দেন। জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে আটকের বিষয়ে কিছু বলেন নি।

ভিডিওটির ৪৩ সেকেন্ড থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থ্যৎ ২.২০ মিনিট সময়ের ক্লিপে দেখা যায় ইংরেজিতে খবর বলা হচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায় খবরটি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের। ২রা নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে ইন্ডিয়া টুডের ইউটিউবে প্রকাশিত উক্ত খবরের শিরোনাম ছিলো ‘Why Does Opposition Want Bangladesh PM Sheikh Hasina To Resign (কেন বিরোধীরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করাতে চায়)’। ইন্ডিয়া টুডের খবরে বাংলাদেশের উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বড় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর  চাহিদা এবং আন্দোলন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচয়, শেখ হাসিনা সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং তার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো দেখানো হয়েছে।

তবে উক্ত খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টটি প্রথম পোস্ট করা হয় ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে সন্ধ্যা ৬ঃ১৩ মিনিটে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা BNP নামক ফেসবুক পেজ। কিন্তু বিডি নিউজে ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে সন্ধ্যা ৭ঃ০৭ মিনিটে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে প্রকাশিত একটা প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা।

অতএব ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা BNP নামক ফেসবুক পেজের পোস্টটির পরই দেখা যাচ্ছে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ নিয়েছেন। তাই বলা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের খবরটি সত্য নয়।

তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে শনাক্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh