শ্যামলী পরিবহন কি ভারতীয় কোম্পানির মালিকানাধীন?

Published on: April 24, 2024

যা দাবি করা হয়েছে: “শ্যামলী পরিবহন ভারতীয় প্রোডাক্ট, তাই আমরা এই পরিবহন বর্জন করি”।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: বাংলাদেশে যে শ্যামলী পরিবহন চলে তা ভারতীয় কোনো কোম্পানির নয়। পাবনা জেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের ঘোষ পরিবার ১৯৭৩ সালে একটি বাস কিনে নাম দেন শ্যামলী পরিবহন। এভাবে শ্যামলী পরিবহনের যাত্রা শুরু হয়৷ যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা-কোলকাতা-ঢাকা রুটে আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিস চালু করে।  

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

শ্যামলী পরিবহন নিয়ে বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে গুগলে সার্চ করা হয়। সেখান থেকে শ্যামলী পরিবহনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কিছু তথ্য জানা যায়। তা হলো- রমেশ চন্দ্র ঘোষ ১৯৭৩ সনে যাত্রী পরিবহন সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে নিজ জেলা শহর পাবনা থেকে শ্যামলী পরিবহন-এর যাত্রা শুরু করেন। এরপরে  বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট কোম্পানী হিসেবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা-কোলকাতা-ঢাকা আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিস চালু করার মাধ্যমে শ্যামলী পরিবহন সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক সেবা প্রদান করে শুরু করে।

বর্তমানে উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চল জেলাসমূহ থেকে, টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫০+ জেলায় শ্যামলী পরিবহনের এসি-নন এসি বাস সেবা দিয়ে থাকে। তাছাড়া পরিবহনটির আন্তর্জাতিক রুটসমূহ

হলো-

ঢাকা-কোলকাতা-ঢাকা 

আগরতলা-ঢাকা-কোলকাতা

ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা

ঢাকা-শিলং-গৌহাটি-ঢাকা

 তথ্য সূত্র: (এনআর ট্রাভেলস।)

অপরদিকে পরিবহনটি নিয়ে সংবাদ মাধ্যম মানবজমিন থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়, প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে, রমেশ চন্দ্র ঘোষের ভাই রমেন্দ্রনাথ ঘোষ সাত ভাই চার বোনের মধ্যে তৃতীয়। ১৯৬৭-৬৮ সালে যিনি পরিবহন ব্যবসা নিয়ে কাজ শুরু করেন। নিজস্ব একটি টেম্পো নিজেই চালাতে শুরু করেন। রুট ছিল নগরবাড়ী-পাবনা-পাকশী-কুষ্টিয়া। এটাই ছিল প্রথম উদ্যোগ। পরে একটি টেম্পো থেকে অর্জিত আয় দিয়ে একের পর এক টেম্পো বাড়াতে থাকেন। একসময় একটি থেকে পঞ্চাশটি টেম্পো হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে একটি বাস ক্রয় করে নাম দেন শ্যামলী পরিবহন।

উল্লেখ্য, শ্যামলী পরিবহনের যাত্রা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বা তার ভাই রমেন্দ্রনাথ ঘোষ কার হাতে হয়েছিল সেটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে শ্যামলী পরিবহনের যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে। পাবনা জেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের ঘোষ পরিবারের হাতে। পরিবহনটির মালিকানা এখনো পাবনা জেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের ঘোষ পরিবারটির রয়েছে। শ্যামলি পরিবহনের হেড অফিস এবং রেজিস্ট্রেশন ঠিকানা হলো

27/ka, Pisciculture Housing Society,

Shyamoli, Mohammadpur, Dhaka-1207.

Registered Office:

Counter: Block-ka/13,

Gabtoli Bus Terminal, Mirpur.

 

শ্যামলী পরিবহন নিয়ে সংবাদ মাধ্যম শেয়ারবিজ থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, পরিবহনটির মালিকানা দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বড় ভাই রমেশ চন্দ্র ঘোষের অধীনে শ্যামলী পরিবহন চলছে যার পরিচালক হচ্ছেন Rajat Ghosh

আর ছোট ভাই রমেন্দ্র নাথ ঘোষের মালিকানায় চলছে শ্যামলী পরিবহনের অপর অংশ এনআর ট্রাভেলস। যার পরিচালক হচ্ছেন Suvenker Ghosh 

বলাবাহুল্য, গুগলে সন্ধান করে “SHYAMOLI PARIBAHAN PRIVATE LIMITED” নামে একটি কোম্পানির ওয়েবসাইট পাওয়া যায়। ১২ আগস্ট ২০২৪ সালে কোম্পানিটি ভারতে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে কোম্পানিটির ডিরেক্টর এবং বোর্ড মেম্বর হলেন  ARUN KUMAR GHOSH  and SHIBANI GHOSH. Shyamoli Paribahan Private Limited বিষয়ে আরও জানতে পারবেন The economic times থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। ARUN KUMAR GHOS এর একটি সাক্ষাৎকার দেখুন এখানে

Shyamoli Paribahan Private Limited এর ওয়েবসাইটে থাকা নাম্বারে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের শ্যামলী পরিবহনের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা। প্রতি উত্তরে তারা জানান, “এটি একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের শ্যামলী পরিবহনের সাথে যার কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।

লক্ষনীয় যে, শ্যামলী পরিবহন এবং এনআর ট্রাভেলস কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায় ভারতীয় শ্যামলী পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেড এর মালিক ARUN KUMAR GHOSH পাবনা জেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের ঘোষ পরিবারের একজন। দীর্ঘদিন আগে তিনি ভারতে চলে যান। বর্তমানে তিনি ভারতের নাগরিক এবং সেখানে স্বতন্ত্রভাবে পরিবহন ব্যবসা করছেন। প্রতিষ্ঠানটির সাথে বাংলাদেশের শ্যামলী পরিবহনের কোনো অংশীদারিত্ব নেই।

সুতরাং, সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে যে শ্যামলী পরিবহন চলে তা ভারতীয় কোনো কোম্পানির নয় বরং সম্পূর্ণ বাংলাদেশী কোম্পানির মালিকানাধীন। সঙ্গত কারণে এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh