ভুয়া বিজ্ঞপ্তির উপর ভিত্তি করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেস বিবৃতি 

Published on: April 24, 2024

গত ০৭ এপ্রিল ২০২৪ এ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস নামক একটি সংগঠন বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে হিন্দু মেয়েদের এবং তাদের পরিবারকে ধর্মান্তরিত করার জন্য অর্থ পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচ পূর্ববর্তী একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের নামে প্রচার হওয়া বিজ্ঞপ্তিটিকে ভুয়া বলে চিহ্নিত করেছে। মূলত উক্ত সংগঠনের একটি আসল বিজ্ঞপ্তিকে টেমপ্লেট হিসেবে ব্যবহার করে সেখানে মনগড়া লেখা বসিয়ে ভুয়া বিজ্ঞপ্তিটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সেই ভুয়া বিজ্ঞপ্তির ফাঁদে পড়ে তার প্রতিবাদে একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত বিবৃতিটিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে। 

এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

অনুসন্ধানের শুরুতে গত ০৭ এপ্রিল ২০২৪ এ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে উক্ত ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত এর স্বাক্ষর-সংবলিত “হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরকরণে প্রেমের ফাঁদ: ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ” – শিরোনামে প্রকাশিত দুই পাতার প্রেস বিবৃতির প্রথম অনুচ্ছেদটি পড়ে দেখা যাক – 

“বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস নামীয় এক তথাকথিত সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত বেশ কিছুদিন ধরে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে চলেছে যা এতসঙ্গে সংযুক্ত করা হল, যাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মান্তরকরণে তাদের দলের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল শিবিরদের জন্য নতুন পুরষ্কার ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ব্রাহ্মণ মেয়েদের ধর্মান্তরকরণের জন্য তিন লক্ষ, ভারতীয় বাঙালী মেয়েদের জন্যে দুই লক্ষ, নম শুদ্র মেয়েদের জন্য পঞ্চাশ হাজার আর পুরো পরিবারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে কথিত ধর্মান্তরকারীদের।”

এই অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস নামক একটি সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক এবং সেক্রেটারী জেনারেল ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন অংকের অর্থ পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়ে একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করছেন। ঐ একই অনুচ্ছেদে ব্রাহ্মণ মেয়েদের ধর্মান্তরিত করার জন্য তিন লক্ষ, ভারতীয় বাঙালি মেয়েদের জন্য দুই লক্ষ, নমশূদ্র মেয়েদের জন্য পঞ্চাশ হাজার, এবং পুরো পরিবারকে ধর্মান্তরিত করার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার প্রদানের ঘোষণার কথাও উল্লেখ করতে দেখা যায়। 

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তাদের প্রেস বিবৃতিতে যে সংগঠন এবং বিশেষ বিজ্ঞপ্তির কথা উল্লেখ করেছে সেটিকে ফ্যাক্টওয়াচ ইতিপূর্বেই একটি ভুয়া বিজ্ঞপ্তি বলে চিহ্নিত করেছে। আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান পড়ুন এখানে

পাঠকদের সুবিধার্থে ফ্যাক্টওয়াচ টিমের লেখা প্রতিবেদনটির সারাংশ এখানে হুবহু তুলে দেয়া হল – 

“সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস নামক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে একটি “বিশেষ বিজ্ঞপ্তি” প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, উক্ত সংগঠনটি হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করার পুরস্কারস্বরূপ তাদের সকল শিবিরদের জন্য বিভিন্ন অংকের অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ঐ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। মূলত বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস কর্তৃক ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ প্রকাশিত “বা/জ/আ/হা/৪৫/০২/২২/৯২” রেফারেন্স নাম্বার সংবলিত একটি পুরানো বিজ্ঞপ্তিকে সম্পাদনা করে আমাদের আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের পক্ষ থেকেও আলেচিত বিজ্ঞপ্তিটিকে ভুয়া বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিটিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।”

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিটি নিয়ে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম সংবাদও প্রকাশ করেছে। সেগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে। 

উক্ত বিবৃতিটির অন্য অনুচ্ছেদগুলোতে কিভাবে “কথিত” লাভ জিহাদের ফাঁদে ফেলে মুসলমান ছেলেরা হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করছেন সেই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। 

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যে বিশেষ বিজ্ঞপ্তির উপর ভিত্তি করে তাদের প্রেস বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে সেটি ভুয়া। যেহেতু মূল বিজ্ঞপ্তিটিই ভূয়া, ফলে ঐক্য পরিষদের বিবৃতিটির কোন ভিত্তি থাকে না

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেস বিবৃতিটিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh