আকাশ দাফন ও ব্যতিক্রমী কিছু শেষকৃত্য বিষয়ে

Published on: March 25, 2024

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন লোক একটি মৃতদেহকে শকুন দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির দেহ শকুনকে খাওয়ানো একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক  রীতি। তিব্বতে এই রীতিটি পালন করা হয়। এই রীতি অনুসারে, শকুনকে মৃতদেহটি খাওয়ানোর মাধ্যমে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। শেষকৃত্যের এই পদ্ধতিকে বলা হয় স্কাই বুরিয়াল বা আকাশ দাফন। উক্ত ভিডিওটি মূলত এই আকাশ দাফনেরই একটি অংশ। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এসব ভিডিওর দাবিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে। সেই সাথে এমনি বিভিন্ন ধরণের কিছু শেষকৃত্যের ধারণা নিয়ে এই ফ্যাক্টফাইলটি লিখেছেন খন্দকার তানভীর।

(সতর্কীকরণঃ এই নিবন্ধে সংবেদনশীল ছবি রয়েছে।)

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোঃ এখানে, এখানেএখানেএখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

ভাইরাল ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে আমরা ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খুঁজে দেখি। Esta Pasando নামক একটি এক্স একাউন্টসহ finofilipino.org নামক ওয়েবসাইটে  একই ভিডিও এবং ছবি  খুঁজে পাই। finofilipino.org ওয়েবসাইটটির গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য হুইজ.কম (whois.com) থেকে জানা যায় যে, এটি স্পেনে রেজিস্টার করা একটি ওয়েবসাইট।

এখানে finofilipino.org ওয়েবসাইটটির সকল তথ্য দেওয়া রয়েছে স্প্যানিশ ভাষায়। গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে জানা যায়, ভিডিওটি আকাশ দাফন বা  স্কাই বুরিয়াল নামে শেষকৃত্যের একটি বিশেষ রীতির। এটি  তিব্বত অঞ্চলের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক একটি প্রথা। এমন  সৎকার প্রথা জরথুস্ট্রিয়ান (পারসি) এবং বৌদ্ধদের মধ্যে প্রচলিত।

আকাশ সমাধি কী?

আকাশ দাফন, মঙ্গোলিয়া ও তিব্বতে প্রিয়জনকে বিদায় জানানোর একটি ঐতিহ্যবাহী সৎকার প্রক্রিয়া, যা স্বর্গীয় সমাধি নামেও পরিচিত। এই রীতি বহু বছর ধরে চলে আসছে। আকাশ দাফনের সময়, যে ব্যক্তি মারা গেছে তার মৃতদেহ পাহাড় বা পাহাড়ের মতো উঁচু স্থানে রাখা হয়। অতঃপর, মৃতদেহটিকে কিছু দিয়ে না ঢেকে সেখানে রেখে আসা হয়। পাখিরা বিশেষ করে শকুন এসে মৃতদেহটি খেয়ে ফেলে। কেউ কেউ এই প্রথাটিকে ভীতিকর বা হিংসাত্মক মনে করেন।  কিন্তু তিব্বতি বৌদ্ধদের জন্য এটি এক বিশেষ এবং অর্থবহ ঐতিহ্য। তারা বিশ্বাস করে যে, এটি প্রকৃতির প্রতি সম্মান দেখানো এবং মৃত্যুর পর মারা যাওয়া ব্যক্তির আত্মাকে মুক্তিদানের একটি উপায়।

আকাশ সমাধী প্রক্রিয়াঃ

মঙ্গোলিয়া ও  তিব্বত অঞ্চলের বৌদ্ধ এবং আকাশ দাফন প্রথায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের  মৃত্যুর পরে, সন্ন্যাসী বা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা মৃতদেহটি সাবধানে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। তিব্বতে আকাশ দাফনস্থল হিসেবে  দ্রিগুং টিল মনাস্ট্রি এবং লারুং গার বৌদ্ধ একাডেমী জনপ্রিয়।

সাধারণত আকাশ দাফন প্রথায় মৃতদেহটিকে মানুষের বসতি থেকে দূরে, উঁচু মাটিতে, পাহাড়ের ধারে বা খোলা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। দেহটিকে সাদা কাপড়ে মুড়ে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে রাখা হয়। মৃতদেহের পা বাঁকিয়ে এবং এর হাতগুলি বুকের উপর দিয়ে জড়িয়ে মৃতদেহকে একটি নির্দিষ্ট সমাধিস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর বৌদ্ধ ভিক্ষু বা লামারা প্রয়োজনীয়  প্রার্থনা এবং আচার অনুষ্ঠান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। সমাধিস্থলে নির্দিষ্ট মন্ত্র পড়া এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করার মাধ্যমে একটি পবিত্র পরিবেশ তৈরি করা হয়ে থাকে।

শরীর বিচ্ছিন্নকরণ: আকাশ দাফনের মূল অংশটি একটি রোগাপাস বা ছুরি জাতীয় অস্ত্রের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন কাটাছেঁড়া করার মাধ্যমে শুরু হয়।

পাখিদের খাওয়ানোঃ দেহটি কাটাছেঁড়ার সাথে সাথে স্ক্যাভেঞ্জার পাখির বড় ঝাঁক আকাশ দাফনস্থলে উড়ে আসে। মৃতদেহের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পাখিগুলো জায়গাটির চারপাশে জড়ো হতে শুরু করে। এসব  স্ক্যাভেঞ্জার পাখিগুলোর মধ্যে শকুন, ঈগল, কাক উল্লেখযোগ্য।

প্রথামিক পর্যায়ে শকুনগুলো একবার মাংস খাওয়ার পরে, কাক, ঈগল এবং শেয়ালের মতো অন্যান্য স্ক্যাভেঞ্জাররাও মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ খেতে অংশগ্রহণ করে। তিব্বতীয় বৌদ্ধ বিশ্বাসে, এভাবে মৃতদেহ খাওয়ানোর এই কাজটিকে অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীদের ভরণপোষণ প্রদান করার মত একটি আদর্শ কাজ হিসেবেই দেখা হয়।

 হাড়ের নিষ্পত্তি: পাখিরা মাংস খাওয়ার পরে, অবশিষ্ট হাড়গুলিকে ভেঙে চূর্ণ করা হয় এবং এর সাথে ময়দা বা মাখন জাতীয় খাবার মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে এই মিশ্রণটি পাখিদের খাওয়ার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এভাবেই প্রকৃতিতে মৃতদেহটি মিলিয়ে যায়।

 

চূড়ান্ত প্রার্থনা এবং প্রস্থান: এভাবে দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, মৃত ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা এবং আশীর্বাদ করা হয়। উল্লেখ্য, তিব্বতি বৌদ্ধরা মনে করেন যে, মৃতদেহ কেবলমাত্র একজন ব্যক্তির পরিত্যক্ত অংশ বা খোলস।

শকুন সংরক্ষণে আকাশ দাফনের গুরুত্বঃ

বিশ্বব্যাপী বহুমুখী চাপের কারণে শকুনের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। অতি উচ্চমাত্রায় নগরায়ণ, কৃষি সম্প্রসারণ, এবং বন উজাড় করার মাধ্যমে শকুনের আবাসস্থল কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল অসাবধানতাবশত দূষিত মৃতদেহের মধ্যে থাকা কীটনাশক এবং সীসার মতো বিষাক্ত পদার্থ খাওয়ার মাধ্যমে শকুনের দেহে বিষক্রিয়া হয়। যা শকুনের সরাসরি মৃত্যুর  অন্যতম কারণ এবং এর ফলে শকুনের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়।

শকুন স্ক্যাভেঞ্জারজাতীয় পাখি হওয়ায় মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ খেয়ে ফেলে । আকাশ দাফন শকুনকে একটি প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস প্রদান করে। এটি শকুনের  প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের বাস্তুতন্ত্রে শকুনের ভূমিকা অনেক। তিব্বতীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আকাশ দাফন একদিকে যেমন একটি সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অনুশীলন, অন্যদিকে এটি শকুন সংরক্ষণেরও একটি প্রচেষ্টা।

আকাশ দাফন ও দ্যা টাওয়ার অফ সাইলেন্সঃ

আকাশ দাফন ও দ্যা টাওয়ার অফ সাইলেন্স স্তম্ভের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রক্রিয়ায় প্রথাগত মিল থাকায় অনেকেই দুটিকে  একই মনে করেন।

দ্যা টাওয়ার অফ সাইলেন্স, যা দাখমা বা দোখমা নামেও পরিচিত। এটি পাহাড় বা উঁচু এলাকায় অবস্থিত জরথুস্ট্রিয়ান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথায় ব্যবহৃত একটি পবিত্র কাঠামো। যেখানে ৮ থেকে ১০  ফুট উচ্চতার লম্বা একটি স্তম্ভ রয়েছে। স্তম্ভটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে  মৃতব্যক্তির ওজন ভালোভাবে ধরে রাখতে পারে। স্তম্ভটির বাহিরের সারিতে পুরুষ, কেন্দ্রের সারিতে মহিলা এবং ভিতরের সারিতে শিশুদের জন্য বরাদ্দ করা থাকে।

মৃত্যুর পর, মৃতদেহটিকে টাওয়ারে নিয়ে আসা হয় এবং একটি পাথরের প্ল্যাটফর্মে রাখা হয় যাতে মৃতদেহকে এসব পাখিগুলো খেতে পারে। পাখির ভক্ষণ শেষ হওয়ার পর অবশিষ্ট হাড়গুলো একটি কূপে ফেলা হয় এবং সেখানে তীব্র রোদে শুকানো হয়। পরবর্তীতে প্রথা মেনে টাওয়ারে হাড়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। যেহেতু পারসি’রা বিশ্বাস করেন মানব দেহ প্রকৃতির দান। তাই মৃত্যুর পর দেহ প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সাম্প্রতিককালে দ্রুত নগরায়ন এবং পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে টাওয়ার অফ সাইলেন্সের ব্যবহার অত্যন্ত বিরল হয়ে উঠেছে। যদিও পশ্চিম ভারতের পারসি’রা এখনও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথা হিসেবে টাওয়ার অফ সাইলেন্স ব্যবহার করেন। বিস্তারিত দেখুন এখানে

 

বিশ্বে প্রচলিত কিছু ব্যতিক্রম সৎকার পদ্ধতিঃ

১।দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁতি-রীতিঃ

দক্ষিণ কোরিয়ানরা মৃতদেহ পোড়ানোর পর মৃতদেহের ছাই চাপ দিয়ে সংকুচিত করে। যা তারা পরবর্তীতে জপমালা বা পুঁতিতে রুপান্তর করে। সেসব পুঁতিগুলো গোলাপি, কালো, সবুজ, ফিরোজা নানা রঙবেরঙের হয়। যা তারা খোলা পাত্র কিংবা  কাচের জারে ঢুকিয়ে রাখে।

২।ফিলিপিনো সৎকার রীতিঃ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনের আদিবাসীদের মধ্যে যখন কেউ মারা যায় তখন মৃতদেহকে তার (মৃতের) সুন্দর পোশাক পরিয়ে  একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখে। আশ্চর্য হলেও সত্যি তারা মৃত ব্যক্তির ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট ধরিয়ে দেয় এবং মৃতদেহটিকে বাড়ির প্রবেশপথে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়। তাছাড়াও ফিলিপিনোরা ঘরের সামনে রাখা মৃতব্যক্তির  চোখ দুটো বেঁধে দেয়।

মৃতদেহ সৎকারের এই অনুষ্ঠানে ফিলিপাইনের  বিভিন্ন আদিবাসীরা বিভিন্ন পোশাকে উপস্থিত হয় । যেমনঃ সেবুয়ানো আদিবাসীরা তাদের বাচ্চাদের লাল জামাকাপড় পরিয়ে দেয়। তাদের বিশ্বাস এতে বাচ্চাদের ভূত দেখার আশঙ্কা কমে যায়।

ফিলিপিনো জনগণের মধ্যে ঝুলন্ত কফিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ারও  ঐতিহ্য প্রচলিত রয়েছে। ফিলিপাইনের সাগাদা, ইগোরোটসহ বিভিন্ন প্রদেশে মানুষরা মৃতব্যক্তির কফিনকে উঁচু ও খাড়া পাহাড়ের গা থেকে ঝুলিয়ে দেয়। তাদের বিশ্বাস এতে মৃত ব্যক্তিটির  আত্মা স্বর্গের নিকটবর্তী হয়।

৩।ব্রাজিল ও পাপুয়া নিউগিনির মৃত ভক্ষণ-রীতিঃ

ইতিহাস থেকে জানা যায় ব্রাজিলের ওয়ারি জনগোষ্ঠী ও পাপুয়া নিউগিনির ম্যালেনিশিয়ানগণ মৃতদেহ কেটে খেয়ে ফেলতো, যা এন্ডোক্যানিবালিজম নামে পরিচিত। এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথায় একটি মৃতদেহকে বা দেহাংশকে খেয়ে ফেলা হয়।

প্রথমে মৃতদেহটিকে পাতা দিয়ে মুড়িয়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জঙ্গলে রেখে আসা হয়। তারপর ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর পচাগলা মৃতদেহ থেকে হাড় সংগ্রহ করা হয়। যা পরবর্তীতে কলা দিয়ে বানানো একধরনের স্যুপের সাথে  মৃতদেহের ছাই মিশিয়ে পান করা হতো। মূলত লিঙ্গভেদে শরীরের কোন অংশ কে ভোগ করতে পারে সে সম্পর্কে কিছু রীতি প্রচলিত ছিলো । যেমনঃ পেশীযুক্ত অংশগুলি খাবে পুরুষরা  এবং  মহিলা ও শিশুরা খাবে মস্তিষ্কের অংশগুলো।

ব্রাজিল এবং পাপুয়া নিউ গিনির আদিবাসীরা বিশ্বাস করে এভাবে  সৎকার  করে তাদের মধ্যে মৃত্যু নিয়ে যেসব ভয় অথবা রহস্য রয়েছে তা দূর হয়ে যায়। এবং তারা মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে। স্থানীয়দের কাছে  মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে মৃতদেহ  খাওয়ার মধ্যে দিয়ে মৃত ব্যক্তির আত্মা স্বর্গে যাবে। ইয়ানোমামি নামের আদিবাসী লোকজনের মধ্যেও এন্ডোক্যানিবালিজম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথাটি প্রচলিত ছিলো।

৪। ফামাদিহানার মৃতের সাথে নৃত্য-রীতিঃ

প্রথাগতভাবে আমরা যখন মৃতদেহের সৎকার করি তখন মৃতদেহ দাহ করি বা মাটিতে পুঁতে কবর দেই। যা একটা নির্দিষ্ট সময় পর প্রকৃতির সাথে মিশে যায়। কিন্ত মাদাগাস্কারের নির্দিষ্ট কিছু আদিবাসীরা (মালাগাসি) তাদের প্রিয়জনকে সমাহিত করার প্রতি পাঁচ বা সাত বছরে একবার মাটি খুঁড়ে দেহাবশেষ উপরে তুলে আনে।

মালাগাসি লোকজন তুলে আনা মৃতব্যক্তির অবশিষ্টাংশকে নতুন কাপড়ে পেঁচিয়ে সে কাপড়ের বস্তা নিয়ে সবাই মিলে নাচতে থাকে। সাথে থাকে উচ্চ স্বরের গানবাজনা। মৃতদেহের অবশিষ্টাংশে পোশাক জড়িয়ে নৃত্যটির উদ্দেশ্য মৃত লোকটার দেহকে তাড়াতাড়ি পচিয়ে ফেলে তার আত্মাকে দ্রুত পরকালে পাঠিয়ে দেয়া।

সূর্য ডোবার ঠিক আগে, মৃতদেহগুলিকে সাবধানে সমাধিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং উল্টে দেওয়া হয়।

বিস্তারিত দেখুন  এখানে

৫। চীনের স্যুট-আপঃ

ফিলিপাইনের সাগাদা অঞ্চলের মতো চীনেও লোকেরা খাড়া পাহাড়ের গায়ে মৃতের কফিন ঝুলিয়ে রাখে। একইভাবে চীনের নির্দিষ্ট কিছু মানুষদের মধ্যেও স্যুট-আপ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথার প্রচলন ছিলো। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, হান সাম্রাজ্যের শাসনামলে রাজকীয় কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে তাদের জন্য তাদের শরীরের মাপে জেড পাথরের পোশাক  প্রস্তুত করা হতো। জেড পাথরকে ছোট ছোট চারকোণা বা ত্রিভুজ আকৃতির কেটে সেটিকে তার দিয়ে তৈরি করা হতো সেই বিশেষ পোশাক। অনেকটা বর্ম পোশাকের মতো ছিলো সেটা, যা দিয়ে মৃতের পুরো শরীর আগাগোড়া ঢেকে দেয়া যেতো। শুধু তাই নয়, পোশাকগুলো ছিলো অনেক দামী এবং প্রস্তুত করতে লেগে যেতো কয়েক বছর।

৬। ঘানায় ফ্যান্টাসি কফিনঃ

ঘানায় বিশেষ করে আক্রার গা লোকেদের মধ্যে ফ্যান্টাসি কফিন বা “আবেবু আদেকাই” এর ঐতিহ্য পালনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এটি ঘানায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুশীলনের একটি সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য দিক।  এই কফিনগুলি মৃত ব্যক্তির কাছে তাৎপর্য বহন করে এমন বিভিন্ন বস্তু, প্রাণী বা প্রতীকের অনুরূপ তৈরি করা হয়। যা তাদের পেশা, আগ্রহ বা সামাজিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।  ঐতিহ্যটি মৃত্যু এবং পরবর্তী জীবনকে ঘিরে ঘানার সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের মধ্যে নিহিত। যার লক্ষ্য শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করার পরিবর্তে তাদের জীবন ও অর্জন উদযাপন করা।

ঐতিহ্যবাহী কৌশল ও উপকরণ ব্যবহার করে দক্ষ কাঠমিস্ত্রিরা প্রত্যেকটি কফিন হাত দিয়ে খোদাই করে এবং রঙ করে। ফ্যান্টাসি কফিন ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং ঘানার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে।

বিস্তারিত দেখুন, এখানে, এখানে

৭।জাপানে স্ব-মমিকরণঃ

স্ব-মমিকরণ, যা “সোকুশিনবুতসু” নামে পরিচিত, এটি একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ঐতিহ্য যা জাপানে প্রাথমিকভাবে শিঙ্গন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।  এই আচার-অনুষ্ঠান প্রক্রিয়ায় চরম তপস্যা ও অনুশীলনের ব্যাপার আছে । এর লক্ষ্য আত্ম-মৃত্যু এবং শেষ পর্যন্ত আত্ম-মমিকরণের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধি অর্জন করা।

জীবনের অস্থিরতা এবং আধ্যাত্মিক মুক্তির অন্বেষণ সম্পর্কিত বৌদ্ধ বিশ্বাসের মধ্যে “সোকুশিনবুতসু” ধারণাটি গভীরভাবে নিহিত ছিল।  সন্ন্যাসীরা যারা এই পথে যাত্রা করেছিলেন তারা খাদ্য গ্রহণে সীমাবদ্ধতা, ধ্যান এবং শারীরিক পরিশ্রমের কঠোর নিয়ম অনুসরণ করেছিলেন।এই পদ্ধতিতে তারা বাদাম, বীজ এবং গাছের ছাল জাতীয় খাদ্যের উপর নির্ভর করে এবং মৃত্যুর পরে ক্ষয় রোধ করতে ধীরে ধীরে তাদের শরীরের চর্বি কমিয়ে ফেলে।

বিস্তারিত দেখুন

অতএব, আমাদের বিস্তারিত আলোচনা থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, বিশ্বে  ধর্ম, বিশ্বাস ও অঞ্চলভেদে নানারকম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা শেষকৃত্য প্রথার প্রচলন রয়েছে। মৃত্যু পরবর্তী যে সৎকার প্রথা আপনার/আমার কাছে ভয়ের সঞ্চার করে তা অন্য বিশ্বাসের মানুষের কাছে নিজের প্রিয়জনের  আত্মা মুক্তির উৎকৃষ্ট পন্থা হিসেবে গণ্য হয়।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh