‘বিষাক্ত সাপের কামড়ে দিশাহারা সাপুড়িয়া’ — ভুয়া ক্যাপশন

Published on: September 22, 2022

সম্প্রতি “বিষাক্ত সাপের কামড়ে দিশাহারা সাপুড়িয়া! একটু অসাবধানতার কারনে ঢলে পরছে মৃত্যুর কোলে” ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাপুড়ের ধরা সাপটি সম্পূর্ণ নির্বিষ। এছাড়া ভিডিওটিতে সাপুড়ের দেয়া সাপ-সংক্রান্ত অনেক তথ্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সঙ্গত কারণে ক্লিকবেইট ক্যাপশনে প্রকাশিত ভিডিওগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ভাইরাল ভিডিওটির সাপটির পরিচয় জানতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ব দের সাথে যোগাযোগ করলে, তিনি সাপটিকে সম্পূর্ণ নির্বিষ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সাপটির বৈজ্ঞানিক পরিচয় Rat snake (Ptyas)বা দাঁড়াশ। পরবর্তীতে ভিডিওটির সাপের সাথে দাঁড়াশ সাপের ছবি মিলিয়ে দেখা হলে দুটি সাপেরই দৈহিক বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণ মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, জনৈক সাপুড়ে সেখানে অবস্থান করা জনসাধারণের মাঝে সাপ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। উল্লেখযোগ্য একটি তথ্য, তার হাতে-ধরা সাপটির অন্য সঙ্গীটি আশেপাশেই অবস্থান করছে। সেই সাপটিও না ধরলে তা প্রতিশোধ নিতে আসবে। এ বিষয়টির সত্যতা জানতে, বাংলাদেশের অন্যতম সাপ উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান Deep ecology and Snake rescue organization এর প্রতিষ্ঠাতা মাহাফুজ রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে ফ্যাক্টওয়াচকে তিনি জানান, “কোনো এলাকায় দেখা যায়, একই প্রজাতির বেশ কয়টি সাপের আবাসস্থল আছে। খাবারের সন্ধানে বাইরে আসলে আজ একটি সাপ মানুষের চোখে পড়লে আগামীকাল একই প্রজাতির অন্য একটি সাপও চোখে পড়তে পারে। দেখা যায়, কোনো একটি সাপ গতকাল মানুষের হাতে মারা পড়েছে, একই প্রজাতির সাপ আজ আবার সে এলাকায় দেখা গেছে। মূলত সে সময় মানুষ ভেবে থাকে মৃত সাপটির সঙ্গী অন্য সাপটির খোঁজে এসেছে। তবে একটি সাপ মারলে অন্য সাপ এসে প্রতিশোধ নিবে এসবের কোনো ভিত্তি নেই। তাছাড়া সাপ মানুষের মতো স্মৃতিশক্তির অধিকারী নয় যে প্রতিশোধপরায়ণ হবে। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এক সময় সাপ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করেছে। সাপ ধরা, সাপ বিক্রি, সাপের খেলা দেখানো ও তাবিজ বিক্রি তাঁদের অন্যতম আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করতো। সাপ সম্পৃক্ত নানা কাল্পনিক গল্প ও ভীতি সৃষ্টি করে জনসাধারণকে তাঁদের প্রতি আকৃষ্ট করে রাখতো। সময়ের সাথে অধিকাংশ মানুষ পেশা পরিবর্তন করলেও কিছু মানুষ এখনো সাপ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই মূলত এ ধরণের মিথ্যা গল্প বাঁচিয়ে রেখেছে”।

 

ভিডিওটিতে জনৈক সাপুড়ে সাপে কাটলে তাঁর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতেও মানুষকে পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক মিথুন দের বক্তব্য জানতে চাইলে, “তিনি জানান আমাদের আশেপাশে দেখতে পাওয়া অধিকাংশ সাপ নির্বিষ। নির্বিষ কোনো সাপ আপনাকে বাইট করলে বাসায় বসে থাকলেও আপনি নিরাপদ। সাপ পরিচিতি এবং সঠিক জ্ঞানের অভাবে মানুষ যেকোনো সাপের  কামড় খেলে কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে যায়। নির্বিষ ও মৃদু বিষধর সাপের কামড় কবিরাজের ঝাড়ফুঁকে ভাল হবে। তবে  বিপত্তি বাঁধে তখন, যে সময় বিষধর বা বিষাক্ত সাপের কোনো কামড়ের শিকার হয়। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে এন্টিভেনম না পেলে পেশেন্টের মৃত্যু নিশ্চিত থাকে। যেখা যায় ভাইটাল সময়টুকু নষ্ট করে, শেষ মুহুর্তে পেশেন্ট হসপিটালে আসে সে ক্ষেত্রে করনীয় কিছু থাকে না। এই কারণে বছরে কয়েক হাজার মানুষ সাপের কামড়ে প্রাণ হারান”।

 

 

সাপ নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের পূর্বের একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।

সারমর্ম, ভিডিওটির ক্যাপশন ক্লিকবেইট এবং ভিডিওটিতে সাপুড়ের দেয়া তথ্য ভিত্তিহীন। এমন তথ্যের উপর নির্ভর করে ভুল চিকিৎসা নিলে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। যে কারণে এমন ভিডিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh