বাংলাদেশের সেনাপ্রধান কি মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন? 

Published on: October 1, 2023

সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের একটি বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, এটা বাংলাদেশে আরোপ করা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেনাপ্রধানের বিবৃতি। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ভাইরাল ভিডিওর কোথাও সেনাপ্রধানকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে,  গত ৪ জুন সেনাপ্রধান পার্বত্য জেলা বান্দরবান রিজিয়ন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বান্দরবানের বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ি সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)’ সশস্ত্র তৎপরতা দমন সম্পর্কে বলেছিলেন। ভাইরাল ভিডিওটি হচ্ছে সেই সময়কার। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত যে ভিডিওগুলো পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ‘নিষেধাজ্ঞা’ শব্দটি তিনি বান্দরবানে পর্যটক নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। ভাইরাল পোস্টগুলোতে সেনাপ্রধানের মূল বক্তব্য থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী পাহাড়ি সংগঠন সম্পর্কিত বক্তব্যের অংশটুকু বাদ দিয়ে একটা ভিত্তিহীন দাবি তোলা হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে। 

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ভাইরাল ভিডিওটি সত্যিই বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো বক্তব্যের কি না  এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। কিন্তু, ভিডিওর কোথাও সেনাপ্রধানকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি। তিনি ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপটে ‘নিষেধাজ্ঞা’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন যেটি সাম্প্রতিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তার বক্তব্য নয়।

তাই, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ভাইরাল ভিডিওটির পুর্বসংস্করণের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যা একাত্তর টিভির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ৪ জুন আপলোড করা হয়েছিল। ভিডিওটি ছিল একই তারিখে বর্তমান সেনাপ্রধানের পার্বত্য জেলা বান্দরবান রিজিয়ন পরিদর্শনকালে বান্দরবানের বিচ্ছিন্নতাবাধী পাহাড়ি সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)’ সশস্ত্র তৎপরতা দমন সম্পর্কিত সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যের।

দেখা যাচ্ছে যে, মূল ভিডিওটির ২ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে সেনাপ্রধান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নিষেধাজ্ঞা শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু তা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত ছিল না। তাছাড়া, মূল ভিডিওর কোথাও তিনি ভিসা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কিছু বলেননি। ভাইরাল পোস্টগুলোতে মূল ভিডিওর ২ মিনিট ২৯ সেকেন্ড থেকে শেষ পর্যন্ত অংশের বেশ কিছু ক্লিপ কেটে বাদ দিয়ে এবং কিছু ক্লিপ একাধিক বার ব্যবহার করে প্রচার করা হচ্ছে।

পরবর্তিতে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে গত ৪ জুন প্রকাশিত সেনাপ্রধানের পার্বত্য জেলা বান্দরবান রিজিয়ন পরিদর্শন সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নিষেধাজ্ঞা শব্দটি তিনি বান্দরবানে পর্যটন নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

তাই সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh