“সারেন্ডার্ড ওয়াইফ” বইতে নারীবাদের বিরোধিতা করেছেন লরা ডয়েল?

Published on: January 29, 2023

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে পশ্চিমা লেখিকা লরা ডয়েলের বই ‘সারেন্ডার্ড ওয়াইফ’-এর বাংলা অনুবাদ নিয়ে। পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, লরা ডয়েল নাকি এই বইতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন নারীবাদ দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করে এবং একজন নারীবাদী নারীর পক্ষে সংসার করা কঠিন। তাই তিনি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীবাদের বিরোধিতা করেছেন, এবং মোটের ওপর নারীবাদকে বর্জন করেছেন। ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, লরা ডয়েল এই বইতে সামগ্রিকভাবে নারীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন নি, বরং শুধুমাত্র দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রচলিত নারীবাদের বাইরে গিয়ে নারীবাদের একটি নতুন ধরণ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিচ্ছে।

 

বিভ্রান্তির উৎস

২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর আরিফুল ইসলাম নামক ফেসবুক পেইজ থেকে এই পোস্টটি সর্বপ্রথম শেয়ার করা হয়। পরবর্তীতে পোস্টটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে


ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

ফ্যাক্টওয়াচ টিম  ‘সারেন্ডার্ড ওয়াইফ’ বইয়ের বাংলা অনুবাদটি পর্যালোচনা করে। বইটিতে লরা ডয়েল বলেছেন, এক বান্ধবীর কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের নারকীয় দাম্পত্য-জীবনকে রক্ষা করতে পরীক্ষামূলকভাবে একজন আত্মসমর্পণকারী স্ত্রী হিসেবে তিনি রূপান্তরিত হন। একজন আত্মসমর্পণকারী স্ত্রী হতে হলে করণীয় হিসেবে যা যা বলেছেন – স্বামীদের নিজস্ব কাজের ব্যাপারে নির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া থেকে বিরত থাকা, স্বামীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা না করা, স্বামীর কোনো কাজের বা ধারণার সমালোচনা করার পর এই অসম্মানজনক আচরণের জন্য ক্ষমা চাওয়া, স্বামীরা নিজেরা যা করতে সক্ষম সেই কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা, পরিবারের অর্থের নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করা ইত্যাদি।

 

লরা ডয়েল বইটিতে মূলত স্বামীকে নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা থেকে বের হয়ে এসে একজন আত্মসমর্পণকারী স্ত্রী হবার মানসিকতা গড়ে তোলার পরামর্শ এবং রাস্তা দেখিয়েছেন। বইয়ের ১৬০ নাম্বার পৃষ্ঠায় লেখিকা নিজেকে নারীবাদী দাবি করেছেন। তিনি দাম্পত্য-জীবনে প্রচলিত অর্থের নারীবাদকে নিরুৎসাহিত করলেও কর্মস্থলে পুরুষের সমান অধিকার পাবার জন্য নারীবাদকে প্রয়োজনীয় বলে দাবি করেছেন।

১৬২ নাম্বার পৃষ্ঠায় তিনি নারীবাদের প্রশংসা করেছেন এই বলে যে – নারীবাদ নারীদের স্বাধীনতা দিয়েছে আত্মসমর্পণকারী স্ত্রীতে রূপান্তরিত হবার ইচ্ছাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

ডয়েল শারীরিক নির্যাতনকারী স্বামী, সন্তানদের ওপর শারীরিক অত্যাচারকারী স্বামী, জুয়া ও মাদকাসক্ত এবং অবিশ্বস্ত স্বামীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে নিষেধ করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন এসব ক্ষেত্রে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়াই সমীচীন।

 

‘সারেন্ডার্ড ওয়াইফ’ বইটি নিয়ে দি গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি আর্টিকেল থেকে জানা যাচ্ছে, লেখিকা লরা ডয়েল নিজেকে নারীবাদী দাবি করেন। তিনি দাবি করেন যে আত্মসমর্পণকারী স্ত্রী মানে অনুগত স্ত্রী নয় যে শুধুমাত্র স্বামীর কথা মেনে চলবে। একজন আত্মসমর্পণকারী স্ত্রী  শুধুমাত্র স্বামীর ওপর থেকে অপ্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণটুকু সরিয়ে নেবে।

 

এদিকে লরা ডয়েল তার নিজস্ব ব্লগে লিখেছেন, নারীসুলভ হয়েও নারীবাদী হওয়া সম্ভব এবং এভাবে ক্যারিয়ার গোল অর্জন করা বরং সহজ হয়ে যায়।


দেখা যাচ্ছে, লরা ডয়েল ‘সারেন্ডার্ড ওয়াইফ’ বইতে সামগ্রিকভাবে নারীবাদের বিরুদ্ধে বলেন নি। বরং বইতে তিনি নিজেকে এমন নারীবাদী দাবি করেছেন, যে সবসময় সবকিছুতে জয়ী হতেই হবে এমন ধারণা পোষণ করেন না। ডয়েল দাম্পত্য- জীবনের বাইরে প্রচলিত নারীবাদকে প্রয়োজনীয় মনে করেছেন এবং দাম্পত্য-জীবনে নারীবাদের একটি নতুন ধরণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। কিন্তু ভাইরাল পোস্টটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে লেখিকা নারীবাদকে বর্জন করেছেন। তাই ফ্যাক্টওয়াচ পোস্টটিকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিচ্ছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh