মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গাড়িতে হামলা হয়েছে?

Published on: September 30, 2023

সম্প্রতি রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে – এমন দাবিতে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গাড়িতে হামলা-ভাংচুরের বিষয়ে মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে কোনো খবর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। কোনো প্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই দাবিগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তাছাড়া উক্ত দাবিতে যে ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে তার সাথে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোনো সম্পর্ক নেই। অতীতের বিভিন্ন ফুটেজ জোড়া দিয়ে এসব ভিডিও বানানো হয়েছে। যে কারণে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া উক্ত দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করেছে।

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান:

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গাড়িতে হামলার বিষয়ে জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড নিয়ে গুগলে সন্ধান করা হয়। তবে তা দ্বারা রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ওপরে হামলা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দেশি বা বিদেশী কোনো সংবাদ মাধ্যমেই এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রচারিত হয়নি। যদিও তৎকালীন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে বহনকারী অফিসিয়াল গাড়িতে যে হামলা হয়েছিল সে বিষয়ে একাধিক প্রদিবেদন পাওয়া গেছে। দেখুন এখানে

প্রসঙ্গগত যে, উক্ত দাবির সাথে যে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, তার মূলত বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ একত্রে জোড়া দিয়ে তৈরি হয়েছে। তবে যার কোনোটির সাথেই রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উপরে হামলার কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।

এখানে লক্ষণীয় যে ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহীনবাগে বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় যান। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে একদল লোক তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেছিল। তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান। যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বিস্তারিত দেখুন এখানে

এবং একথা সত্যি যে, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে  দেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। কেবল তাই নয়, সেদিন  তিনি বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের কাছে মন্তব্য জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। ম্যাথু মিলার উত্তরে বলেছেন, ‘আমি (বাংলাদেশে) মার্কিন দূতাবাস বা সেখানে কর্মরত কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নির্দিষ্ট বিবরণ নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি না। তবে আমি বলব যে, অবশ্যই আমাদের কূটনীতিবিদদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আমাদের কাছে চরম গুরুত্বপূর্ণ।’ এ সময় তিনি ভিয়েনা কনভেনশনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। আরও  বিস্তারিত দেখুন এখানে

কূটনৈতিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে, একটি স্বাগতিক দেশ অবশ্যই সেই দেশে অবস্থিত সব কূটনৈতিক মিশনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাধ্য এবং দেশটিকে সেই বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে এবং (কোনো কূটনৈতিক মিশনের) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর যেকোনো ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধে সব ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে”।

সুতরাং, সবকিছু যাচাইবাছাই করে দেখা গেছে, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে অতীতেও একটি ইস্যু রয়েছে এবং সম্প্রতি তিনি নিজেই তার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তার গাড়ির উপরে হামলা ও ভাংচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তাই যথার্থ তথ্যপ্রমাণের আলোকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া উক্ত দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh