“বাংলাদেশ ইস্যুতে আমেরিকার সংসদে দ্বন্দ্ব!” দাবিটি মিথ্যা

Published on: January 9, 2022

সম্প্রতি “বাংলাদেশ ইস্যুতে আমেরিকার সংসদে দ্বন্দ্ব!” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।দাবি করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে মদদ দেয়াসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।কিন্তু অনুসন্ধানে কয়েকটি অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত যে তারিখে ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে সেসময় আমেরিকার সংসদের অধিবেশন বন্ধ ছিলো। দ্বিতীয়ত, নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদমাধ্যম থেকে উল্লেখিত আমেরিকান সেনেটরদের এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তৃতীয়ত, সম্পূর্ণ ভিডিওটি সংসদ অধিবেশনের বিভিন্ন সময়ের ভিডিও এবং সেখানকার রাজনীতিবিদদের ভিন্ন কিছু ভিডিও ফুটেজ একত্র করে তৈরি করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই যার সাথে বাংলাদেশের উক্ত বিষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এমন অসংগতিপূর্ণ ভিডিওকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” চিহ্নিত করছে।

এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে



প্রায় তিন মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওতে দাবি করা হয়, মার্কিন সেনেটররা বলেছেন যে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর জো-বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এই অঞ্চলের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে মদদ দেওয়াসহ বাংলাদেশ এবং আমেরিকার সম্পর্কের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সারাহ পলিন, বার্নি স্ট্যান্ডার্স, এলজাবেথ ওয়ারেন ও ন্যান্সি পেলোসির মত এমন সাত আমেরিকান রাজনীতিবিদ এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বলেও ভিডিওতে উল্লেখ করা হয়। কোনো ধরনের সূত্র উল্লেখ না করে সম্পূর্ণ ভিডিওজুড়েই আমেরিকান বিভিন্ন রাজনীতিবিদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। যদিও ভিডিওতে সেসব রাজনীতিবিদদের সরাসরি কোনো বক্তব্য শুনতে পাওয়া যায় নি।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল এই ভিডিওতে দেখানো বিভিন্ন রাজনীতিবিদের ভিডিও ফুটেজগুলো যাচাই করার জন্য গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ ব্যবহার করা হয়। সেখানে প্রথমেই, জো বাইডেনের যে ফুটেজ টি দেখানো হয় সেটি সন্ধান করা হলে ২৯ এপ্রিল ২০২১ তারিখে বাইডেনের দেওয়া একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। “President Biden gives his first formal address to Congress (full speech)” শিরোনামে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি ইউটিউব ভিডিও পাওয়া যায়।

মূলত এই ভিডিওটির বিভিন্ন অংশই ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে বাইডেনকে বাংলাদেশের উল্লেখিত ইস্যুতে কথা বলতে দেখা যায়নি। মূল ভিডিওতে দেওয়া তারিখ খেয়াল করলে দেখা যাবে র‍্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রকাশের অনেক আগের ভিডিও এটি।

এছাড়া ভাইরাল ভিডিওতে দেখানো সারাহ পলিনের ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ দিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে জানা যায়, মূল ভিডিওটি সারা পলিনের নয়। তাকে নকল করা এক কমেডিয়ানের। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রসঙ্গের এবং দশ বছরেরও বেশি আগের ভিডিও।

এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

একই প্রক্রিয়ায় ভাইরাল ভিডিওতে দেখানো এলিজাবেথ ওয়ারেনের অংশটি দিয়ে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, ওয়ারেনের মূল ভিডিওটি হার্ভার্ড ল স্কুলের গ্র‍্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে দেওয়া একটি ভাষণের ভিডিও।

এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গের বিভিন্ন ভিডিও একত্র করে আমেরিকার বিভিন্ন রাজনীতিবিদের বক্তব্য বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু ভাইরাল ভিডিওর সাথে ওইসব বক্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনেট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সংসদীয় অধিবেশন বন্ধ ছিলো। কিন্তু ভাইরাল এই ভিডিওটি প্রকাশিত হয় ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে। অর্থাৎ বুঝাই যাচ্ছে, ৩১ ডিসেম্বর কিংবা এর কাছাকাছি তারিখে কোনো সংসদীয় অধিবেশন হয়নি। যেখানে কোনো অধিবেশনই হয়নি সেখানে দ্বন্দ্ব হওয়াটি ভিত্তিহীন।

আবার, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড দিয়ে গুগলে অনুসন্ধান করা হলেও এমন কোনো সংসদীয় অধিবেশনের ভিডিও কিংবা আমেরিকার উল্লেখিত রাজনীতিবিদদের উক্ত বক্তব্যের কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী র‍্যাব এবং এর প্রাক্তন ও বর্তমান ছয়জন উর্ধতন কর্মকর্তার উপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রেক্ষিতেই এমন একটি খবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় বলে মনে করা হচ্ছে।

অতএব, অনুসন্ধান শেষে উক্ত ভাইরাল ভিডিওটিতে কয়েকটি অসংগতি চিহ্নিত করা যাচ্ছে। প্রথমত যে তারিখে ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে সেসময় আমেরিকার সংসদের অধিবেশন বন্ধ ছিলো। দ্বিতীয়ত, নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদমাধ্যম থেকে উল্লেখিত আমেরিকান সেনেটরদের এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তৃতীয়ত, ভাইরাল ভিডিওটি সংসদ অধিবেশনের বিভিন্ন সময়ের ভিডিও ফুটেজ এবং রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন সময়ের ভিডিও ফুটেজ একত্র করে তৈরি করা হয়েছে, যার সাথে বাংলাদেশের উক্ত বিষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন একটি ভিডিওকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply