হোয়াটসঅ্যাপে সরকারের নজরদারি বিষয়ক ভূয়া দাবি

Published on: July 25, 2023

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে সরকার কর্তৃক হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি সংক্রান্ত হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক দাবি সম্বলিত পোস্টটি একটি পুরোনো অনলাইন গুজব যা আগে ভারত ও ইউক্রেনে ভাইরাল হয়েছিলো, এবং সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ভাইরাল হয়েছে। সঠিক কোনো তথ্যসূত্র না থাকায় ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে মিথ্যা আখ্যা দিচ্ছে।

 

গুজবের উৎস 

বছর জুলাই মাসের শুরুর দিক থেকে পোস্টটি ফেসবুকে ভাইরাল হতে শুরু করে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান 

উক্ত পোস্টের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলোহোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ড করে সংরক্ষণ করা হবে, হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়াও ফেসবুক, টুইটারে নজরদারি করা হবে, ব্যবহারকারীদের ডিভাইস মন্ত্রণালয় সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হবে। এছাড়াও বলা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানোর পর তিনটি নীল টিকচিহ্ন প্রদর্শিত হবার অর্থ হলো সরকার বার্তা নোট করেছে, দুটি নীল এবং একটি লাল টিকচিহ্নের অর্থ হলো সরকার বার্তা প্রেরণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, একটি নীল এবং দুটি লাল টিকচিহ্নের অর্থ হলো সরকার বার্তা প্রেরণকারীর তথ্য পরীক্ষা করছে, তিনটি লাল টিকচিহ্নের অর্থ হলো সরকার বার্তা প্রেরণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। 

 

সরকার কর্তৃক হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি  এবং উল্লেখিত দাবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে মূলধারার মিডিয়ায় সন্ধান করে এমন কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। হোয়াটসঅ্যাপের ওয়েবসাইট ভিজিট করে জানা যাচ্ছে তারা বার্তা প্রেরণের ক্ষেত্রে এন্ডটুএন্ড এনক্রিপশন সার্ভিস দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত মেসেজগুলি প্রেরক প্রাপকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। 

বার্তা প্রেরণের ক্ষেত্রে টিকচিহ্নের বিষয়ে নিম্নোক্ত ছবির তথ্যগুলো দেখানো হচ্ছে, যেখানে সর্বোচ্চ দুটি নীল টিকচিহ্নের বাইরে দুটোর বেশি এবং নীল ব্যতীত অন্য কোনো রঙের টিকচিহ্নের ফিচারের অস্তিত্ব নেই। 

এদিকে ইন্টারনেট থেকে জানা যাচ্ছে গতবছরের মাঝামাঝি সময় ভারতের সোশাল মিডিয়ায় একই পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছিলো। সেসব পোস্টে বলা হয়েছিলো ভারতীয় সরকার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারির একটি গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে যেখানে টিকচিহ্নের ব্যাপারে আমাদের প্রাসঙ্গিক ভাইরাল পোস্টের অনুরূপ তথ্য প্রদান করা হয়েছে। একাধিক ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং মিডিয়া পোস্টকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। এরকম কিছু ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুনহিন্দুস্তান টাইমস, দি ইকোনোমিক টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, বুম লাইভ, নিউজচেকার  ভারতীয় সরকারের সংবাদ সংস্থার ফ্যাক্টচেক   থেকে (PIB – Press Information Bureau) এই পোস্টকে মিথ্যা দাবি করা হয়। 

 

এছাড়াও ইউক্রেনীয় একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে গতবছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনে একই গুজব ছড়িয়েছিলো যাকে তারা মিথ্যা প্রমাণ করেছে।

 

সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে এটি একটি পুরোনো অনলাইন গুজব যা বিভিন্ন সময়ে ভারত ইউক্রেনে ভাইরাল হয়েছিলো। গুজবের ধরনে মিল থাকায় এবং কোনো তথ্যসূত্র না থাকায় ফ্যাক্টওয়াচ পোস্টকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh