বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানো ড্রাইভার ১৫ দিন সময় পাবেন লাইসেন্স দেখানোর জন্য?

Published on: June 18, 2023

সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরে একটি পোস্ট দেখা যাচ্ছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কারও যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজপত্র সঙ্গে না থাকে এবং সেই কারণে যদি কাউকে ট্রাফিক সার্জেন্ট জরিমানা করেন তাহলে ঐ ব্যক্তি পরবর্তীতে লাইসেন্স বা কাগজ দেখানোর জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন। ফলে ঐ পোস্টে জরিমানা প্রদান করতে বারণ করা হয়। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে উক্ত দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ খুঁজে পায়নি। প্রথমত, ঐ পোস্টে সংবলিত ছবির নিচে ব্যবহৃত সিলটিতে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহরের নাম পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ তে উক্ত দাবির অনুরূপ কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বরং, লাইসেন্স সঙ্গে না থাকলে কেউ মোটরযান চালাতে পারবেন না এবং এই বিধান কেউ লঙ্ঘন করলে জরিমানা বা কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গেও ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে না থাকলে জরিমানা বিধানের নিয়ম রয়েছে। তাছাড়া, বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যমেও উক্ত দাবি সম্পর্কিত কোন সংবাদ কিংবা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সাামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।

এরকম কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

Image: Example of a viral Facebook post

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ড্রাইভিং লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজপত্র সঙ্গে না থাকলে এবং সেই হেতু সার্জেন্ট জরিমানা করলে লাইসেন্স বা কাগজ প্রদর্শনের জন্য ১৫ দিন সময় পাওয়া যাবে – এই দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি যে, উক্ত দাবি সংবলিত পোস্টটির উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহর থেকে। ঐ পোস্টে ব্যবহৃত একটি ছবির নিচে দৃশ্যমান সিল থেকে জানা গেছে, সেটা একটি Pollution Under Control (PUC) পরীক্ষা কেন্দ্র এর সিল, যার নাম “Bharat P.U.C. Testing Centre” এবং ঠিকানা হিসেবে ডাকবাংলা, বাহাদুরপুর এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতের প্রত্যেক মোটরযান মালিকের “Pollution Under Control” সার্টিফিকেট থাকা আবশ্যক, যা থেকে জানা যাবে একজন ব্যক্তি সকল পরিবেশগত মান (Environmental Standards) মেনে বৈধভাবে মোটরযান চালাচ্ছেন কিনা। 

 

২৬ জানুয়ারি ২০২২ এ প্রকাশিত Hindustan Times বাংলা এর একটি প্রতিবেদন মারফত জানা গেছে, নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী কলকাতা বা রাজ্যের যেকোন রাস্তায় ট্রাফিক আইন অমান্য করলে বেশি জরিমানা গুনতে হবে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে প্রথম দফায় চালককে ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে এবং একই ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটলে ১৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তবে, পশ্চিমবঙ্গের ট্রাফিক পুলিশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট মারফত জানা গেছে যে, দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন গাড়ির কাগজপত্র জব্দ করার পর আইন অমান্যকারীকে কম্পাউন্ড স্লিপ প্রদান করা হলে তাকে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যাংকে জরিমানার অর্থ প্রদান করতে হবে এবং ঐ কম্পাউন্ড স্লিপ ও ব্যাংকে টাকা জমার রশিদ দায়িত্বরত অফিসারকে দেখিয়ে জব্দকৃত কাগজপত্র ফেরত নিতে হবে।

 

বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন আইনে কি বলা হয়েছে?

লাইসেন্স সঙ্গে না থাকলে জরিমানা করা হলে ঐ লাইসেন্স দেখানোর জন্য ১৫ দিন সময় পাওয়া যাবে – এই রকম কোন সংবাদ বাংলাদেশের কোন মূলধারার সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি এবং এইরকম কোন নির্দেশনা সুপ্রিম কোর্ট দেয়নি। পরবর্তীতে আমরা বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পড়ে দেখেছি এবং জানতে পেরেছি যে, উক্ত আইনের চার (৪) নং ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত পাবলিক প্লেসে গাড়ি চালাতে পারবেন না। তাছাড়া, চার (৪) নং ধারার দুই (২) নং উপধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যে শ্রেণীর গাড়ি (ভারি, মধ্যম, হালকা) চালানোর জন্য লাইসেন্স পেয়েছেন, সেই শ্রেণী ছাড়া অন্য কোন শ্রেণীর গাড়ি চালাতে পারবেন না। তবে, ভারী শ্রেণীর গাড়ি চালানের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলে কোন ব্যক্তি হালকা বা মধ্যম শ্রেণীর গাড়ি চালাতে পারবেন৷

 

ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর অপরাধ এবং এর বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৬৬ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি উক্ত আইনের চার (৪) এবং পাঁচ (৫) নং ধারা এর বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, এবং সেজন্য তিনি অনধিক ছয় (৬) মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক পঁচিশ (২৫) হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয়দণ্ডেণ্ডিত হবেন। 

 

অতএব, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজপত্র সঙ্গে না থাকলে এবং সেইজন্য জরিমানা করা হলে লাইসেন্স বা কাগজপত্র দেখানোর জন্য ১৫ দিন সময় পাওয়া যাবে – এই দাবিটির কোন ভিত্তি নেই।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh