খালি পায়ে খেলার অনুমতি পায়নি বলে ভারত ১৯৫০ বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি – মিথ্যা

Published on: December 1, 2022

সম্প্রতি “১৯৫০ সালে ব্রাজিলে আয়োজিত ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েও ভারত তাতে অংশ নেয়নি কারণ তারা চেয়েছিল খালি পায়ে খেলতে, কিন্তু ফিফা তাদের খালি পায়ে খেলার অনুমতি দেয়নি” – এরকম একটি পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হচ্ছে। উল্লেখ্য, উক্ত দাবিটি বেশ কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যমে তোলা হচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে যে, খালি পায়ে খেলার অনুমতি না পাওয়ায় ভারত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি – এই দাবিটি সঠিক নয় কারণ ১৯৫৩ সালের আগ পর্যন্ত ফিফার ইকুইপমেন্ট রেগুলেশনস এ বুট পায়ে পরে খেলা বাধ্যতামূলক ছিলো না। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত পোস্টগুলোর দাবিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।

 

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হওয়া এরকম কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখ, এখ, এখ, এখ, এখ, এবং এখ

শেয়ারকৃত পোস্টগুলোতে ভারত ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে আয়োজিত বিশ্বকাপে অংশ না নেওয়া সম্পর্কিত যে দাবিটি করা হয়েছিলো তার সত্যতা যাচাই করতে আমরা বেশকিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চ করি এবং ভারত ১৯৫০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি এই সংক্রান্ত কিছু সংবাদ খুঁজে পাই যেগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদগুলো দেখুন এখ, এখ, এখ, এখ, এবং এখ

শেয়ারকৃত পোস্টগুলোর দাবিটি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে আমরা উক্ত সংবাদগুলো পড়ে দেখি। আমাদের অনুসন্ধানে কোথাও এমন কোন তথ্য খুঁজে পাইনি যা খালি পায়ে খেলার অনুমতি না পাওয়ায় ভারত ১৯৫০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি – এই দাবিটির পক্ষে যায় বরং ১৯৫৩ সালের আগ পর্যন্ত ফিফার ইকুইপমেন্ট রেগুলেশনস এ বুট পরে খেলার কোন বাধ্যবাধকতা ছিলো না এবং ১৯৫২ সালে হেলসিংকি অলিম্পিকস এ যুগোস্লাভিয়ার কাছে ১-১০ গোলে পরাজিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভারতীয় ফুটবলে বুট পায়ে পরা বাধ্যতামূলক ছিলো না। দেখুন এখ এবং এখ

উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে ৩৪ টি দেশ অংশগ্রহণের জন্য রাজি হলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৩ টি দেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে। ফিফা ১৯৫০ বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, বার্মা (বর্তমান মায়ানমার), এবং ভারতকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায় কিন্তু এর মধ্যে তিনটি দেশই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা থেকে সরে দাঁড়ায়। যার ফলে, ভারতের সামনে আর কোন বাধা ছিলো না বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের। পরবর্তীতে ভারত ঐ বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি। ১৯৫০ বিশ্বকাপে ভারতের অংশগ্রহণ না করা নিয়ে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) যে বক্তব্যগুলো দিয়েছিলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ব্রাজিলে যাওয়ার খরচ, দল নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ, এবং অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত সময় না পাওয়া। যদিও খেলোয়াড়দের ব্রাজিলে যাওয়ার খরচ মেটাতে ফিফা সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো এবং কলকাতাতে তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি ক্যাম্পেইন এর আয়োজন করা হয়েছিলো। , যার কিনা ১৯৫০ বিশ্বকাপে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিলো, বলেন যে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) অলিম্পিকস কে যেরকম গুরুত্বের সাথে দেখতো বিশ্বকাপকে সেরকম গুরুত্বের সাথে নেয়নি। শৈলেন মান্নার বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে যে তৎকালীন সময়ে অলিম্পিকস এর চেয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের আবেদনটা কম ছিলো ভারতের ফুটবল ফেডারেশনের কাছে। তাই তারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি এবং খালি পায়ে খেলার অনুমতি না পাওয়ার তত্ত্বটি আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। মূলত, ভারতীয় খেলোয়াড়রা বুট পায়ে না পরে খেলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।

অতএব, এ বিষয়টি স্পষ্ট যে খালি পায়ে খেলার অনুমতি না পাওয়ায় ভারত ১৯৫০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি – এই দাবিটি সঠিক নয় এবং এর পক্ষে দুটি যুক্তি উপস্থাপন করা গেলো। প্রথমত, ১৯৫০ বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে চারটি দেশের মধ্যে তিনটি দেশই বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ায় এবং যেহেতু একমাত্র দেশ হিসেবে ভারতকে ব্রাজিলে যাওয়ার খরচ মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো ফিফা, তাই খালি পায়ে খেলার অনুমতি না পাওয়ার তত্ত্বটা যুক্তিসঙ্গত নয়। দ্বিতীয়ত, ১৯৫৩ সালের আগ পর্যন্ত ফিফার ইকুইপমেন্ট রেগুলেশনস এ বুট পায়ে পরে খেলার বাধ্যবাধকতা ছিলো না এবং ১৯৫২ সালে ভারতের অনেক খেলোয়াড় যখন বুট না পরে হেলসিংকি অলিম্পিকস এ অংশগ্রহণ করে তখন ফিফা কোন আপত্তি জানায়নি।

 

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোর দাবি “মিথ্যা।”

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh