যুক্তরাষ্ট্র কি নির্বাচন বন্ধ এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করার প্রস্তাবনা দিয়েছে?

Published on: January 3, 2024

যা দাবি করা হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচন বন্ধের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি মিথ্যা। মূলধারার জাতীয় বা আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। তাছাড়া, ভাইরাল ভিডিওতে Voice of America কে দেয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যে সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করা হয়েছে, তার মূল ভিডিওতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন বা সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন সংক্রান্ত কিছুই বলতে শোনা যায় নি।

 গুজবের উৎস: ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বন্ধের জন্য কঠিন চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া ভিডিওতে বলতে আরো শোনা যায় যে সেনাবাহিনীর অধীনে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধান করার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগলে অনুসন্ধান করা দেখা হলে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক মূলধারার গণমাধ্যমে সরাসরি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

তবে, BBC Bangla একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, স্নায়ুযুদ্ধ শেষে কম্বোডিয়ার সরকারের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করেছিলো খেমাররুজসহ যুদ্ধরত তিন দল। সেই চুক্তির আওতায় জাতিসংঘের একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেদেশে নির্বাচনের আয়োজন করে, যেখানে ভোট পড়েছিল ৮৯.৫৬ শতাংশ। পরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ইন্দোনেশিয়া থেকে পৃথক হওয়ার পূর্ব তিমুরের গণভোটও আয়োজিত হয়েছিলো। সেটাও হয়েছিল আরেকটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। নামিবিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে একসময় জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু গত এক দশকে জাতিসংঘের সেই ভূমিকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সংস্থাটির নীতিমালাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। সুতরাং, বাংলাদেশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করার কোন সম্ভাবনা নেই।  

অন্যদিকে, ভাইরাল ভিডিওটিতে নিম্নোক্ত বক্তব্যটিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের Voice of America কে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারের অংশ দাবি করা হচ্ছে:  “বাংলাদেশের নির্বাচন যদি শেখ হাসিনার অধীনের সুস্থ এবং নিরপেক্ষ না হয় তাহলে এই দায় শুধু আমরা নিব না শেখ হাসিনার সরকার কেও নিতে হবে কারণ আমেরিকা আগেই বলে দিয়েছে, বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলোর সাথে কথা বলে সংলাপ করে নির্বাচন আয়োজন করতে, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার তা করে নাই, তাই এইবার তারা কঠিন থাবা দিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচনে, যদি বাংলাদেশের নির্বাচন যদি আমি সুস্থ করতে না পারি তাহলে আমি নিজেই পদত্যাগ করব ও আমেরিকার প্রস্তাবমত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে, সেনাবাহিনীর অধীনে আগামী নির্বাচন করা হবে, এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।” 

পরবর্তীতে, Voice of America কে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দেয়া মূল সাক্ষাৎকারটি পর্যালোচনা করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে দেখা যায়, তিনি কোথাও বলেন নি একথা বিশেষ করে, “আমেরিকা আগেই বলে দিয়েছে, বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলোর সাথে কথা বলে সংলাপ করে নির্বাচন আয়োজন করতে, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার তা করে নাই তাই এইবার তারা কঠিন থাবা দিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচনে” এই অংশটি।

মূল সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারেকে যখন প্রশ্ন করা হয় ৭ জানুয়ারি নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হলে তিনি পদত্যাগ করবেন কিনা, এই প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর দিতে চাননি। পুরো সাক্ষাৎকারে উপস্থাপিকা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারেকে ‘জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে, সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন’ এই কথাগুলো বলতে শোনা যায়নি।  

Voice of America কে দেয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাক্ষাৎকার টি দেখুন এখানে

সুতরাং, সকল দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh