বাংলাদেশকে কি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র?

Published on: December 11, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ “বাংলাদেশে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র” এমন শিরোনামে ফেসবুকে কিছু ভিডিও শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্তঃ দাবিটি মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বাণিজ্যে কিংবা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট সত্যতা পাওয়া যায় নি। জাতীয় ও আন্তজার্তিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেও কোনো ধরনের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। এছাড়া আমেরিকার দেয়া বানিজ্য নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত যেসব দেশের নাম পাওয়া যায় সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। তাই শেয়ারকৃত ভিডিওতে যে দাবি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

গুজবের উৎস:

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বাণিজ্যে কিংবা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়ার শেয়ারকৃত ভিডিওটির উল্লেখিত দাবির সত্যতা যাচাই করতে কিছু প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। প্রাথমিক অনুসন্ধান থেকে এমন কোনো ধরনের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি যার পরিপ্রেক্ষিতে দাবিটিকে সত্য বলা যেতে পারে।

ভিডিওটি সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে অনুসন্ধান করা হয়। সেখানে বাংলাদেশকে বাণিজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ব্যাপারে কোন ধরণের তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে ভিডিও এর উল্লেখিত দাবি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া না গেলেও শ্রম ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে এমন কিছু সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাঠানো একটি চিঠিতে বাংলাদেশের শ্রম ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় সংবাদ প্রতিবেদনগুলোতে। মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে শ্রম ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধে সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক করার কথা বলা হলেও এখনি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ব্যাপারে কিছু উল্লেখ নেই।

অন্যদিকে, ২০২২ এর নভেম্বর পর্যন্ত আমেরিকার দেয়া বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে যেসব দেশের নাম পাওয়া যায় তার মধ্যে বাংলাদেশ নেই। এ সংক্রান্ত একটি তালিকা দেখুন এখানে

তবে অনুসন্ধানে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমেরিকার “মাইনর স্যাংশন” দেখতে পাওয়া যায়। তবে তা সম্পূর্ণ দেশের কিংবা এর বাণিজ্যের উপরে নয়। এসব নিষেধাজ্ঞার ভিত্তি বাণিজ্য নয়, বরং গুরুতর মানবাধিকার লংঘন।

উল্লেখ্য, ভিডিওটিতে ইলিয়াস হোসেনের বক্তব্যের যে অংশটুকু ব্যবহার করা হয়েছে সেটি সাম্প্রতিক সময়ের কিনা জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে ইউটিউবে সার্চ করা হয়। সেখানে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলের ১লা ডিসেম্বরের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। যেখানে তিনি বাংলাদেশে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বললেও কোনো নির্ভরযোগ্য উৎসের কথা উল্লেখ করেন নি।

সুতরাং, ফেসবুকে যে ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়েছে তার দাবিগুলোর সপক্ষে কোনো ধরনের যথার্থ ও সুনির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ভিডিও এর দাবিটি “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh