ইংল্যান্ডের ৫০ পাউন্ডের ব্যাংক নোটে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর ছবি আছে?

Published on: December 11, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ ব্রিটেনের ৫০ পাউন্ডের ব্যাংক নোটে বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসুর ছবি।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভাইরাল হওয়া ৫০ পাউন্ডের নোটে “REPRESENTATION ONLY” কথাটি উল্লেখ ছিল, যার মানে দাড়ায় এটা ব্রিটেনের ৫০ পাউন্ডের আসল ব্যাংক নোট না। অন্যদিকে, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড দেশটির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা যেকোনো একজন বিজ্ঞানীর ছবি দিয়ে ৫০ পাউন্ডের একটি নতুন নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই জনসাধারণের কাছ থেকে বিজ্ঞানীদের নামের মনোনয়ন চাওয়া হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে জগদীশ চন্দ্র বসু সহ ৯৮৯ জন বিজ্ঞানীর নামে মনোনয়ন দেয় জনগণ। মনোনয়নের পর ব্রিটেনের ব্যাংকনোট ক্যারেক্টার অ্যাডভাইজরি কমিটি মনোনীত বিজ্ঞানীদের মধ্য থেকে ১২ জনকে শর্টলিস্ট করে। সেখানে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নাম ছিল না। পরবর্তীতে এই ১২ জনের তালিকা থেকে অ্যালান টুরিং (Alan Turing) কে বেছে নেয়া হয়।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, ব্রিটেনের ৫০ পাউন্ডের ব্যাংক নোটে বাঙালী বৈজ্ঞানিক আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসুর ছবি ছাপানো হয়েছে। এই ক্যাপশনের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসুর ছবি যুক্ত ৫০ ইউরোর একটি নোট দেখতে পাওয়া যায়। তবে, সেই নোটে “REPRESENTATION ONLY” কথাটি উল্লেখ ছিল। অর্থাৎ এই নোটটি ব্রিটেনের আসল ব্যাংক নোট নয়।

তাই ব্রিটেনের আসল ব্যাংক নোটের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি- ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। অনুসন্ধানে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্রিটেনের বর্তমান ৫০ পাউন্ডের ব্যাংক নোটের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, সেই নোটের ডিজাইনের সাথে ভাইরাল হওয়া নোটের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে  ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১৬৯৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চালু হওয়া এবং প্রত্যাহার হ্ওয়া সমস্ত ব্যাংক নোটের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এই তালিকার ১৯৯৪ সালের ২০ এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রচলিত ই সিরিজের ৫০ পাউন্ডের ব্যাংক নোটের সাথে ভাইরাল হওয়া নোটের বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ব্যাংক নোটে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবির বিপরীতে স্যার জন হাবলন (Sir John Houblon) এর ছবি চিত্রিত ছিল। স্যার জন হাবলনের ছবি এবং স্বাক্ষরের স্থানে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর ছবি এবং স্বাক্ষর এডিট করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি “REPRESENTATION ONLY” কথাটিও যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ব্রিটেনের বর্তমান ৫০ পাউন্ডের ব্যাংক নোটটি ২০২১ সালের ২৩ জুন থেকে প্রচলন করা হয়েছিল। পলিমারে মুদ্রিত এই নোটটির সামনের দিকে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবি এবং এর বিপরীত দিকে অ্যালান টুরিং এর ছবি ছাপানো হয়েছে।

২০১৮ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ৫০ পাউন্ডের ক্যারেক্টারের ছবি পরিবর্তন সময় দেশটির ইতিহাসে অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের মধ্যে যেকোনো একজনের ছবি নোটে ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কার ছবি ছাপানো হবে এ ব্যাপারে জনগণ থেকে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছিল ছয় সপ্তাহ সময়সীমার মধ্যে। এ সময়ে ২২৭,২৯৯ জন বৃটিশ নাগরিক স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু সহ মোট ৯৮৯ জন ব্যাক্তির নামে মনোনয়ন দেন। পরবর্তিতে ইংল্যান্ডের ব্যাংকনোট ক্যারেক্টার অ্যাডভাইজরি কমিটি মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ১২ জনের নাম শর্টলিস্ট করে, যেখানে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নাম ছিল না। শেষপর্যন্ত এই ১২ জনের মধ্য থেকে ৫০ পাউন্ডের নোটে ছাপানোর জন্য অ্যালেন টুরিং-এর ছবি বাছাই করা হয়। ২০২১ সালের ২৩ জুন থেকে অ্যালেন টুরিংএর ছবি যুক্ত ৫০ পাউন্ডের নতুন ব্যাংক নোটটি চালু করা হয়।

অর্থাৎ, ভাইরাল হওয়া ৫০ পাউন্ডের নোটটি ব্রিটেনের কোনো ব্যাংক নোট নয়, এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ড  স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর ছবি সম্বলিত কোনো ব্যাংকনোট ছাপায়নি। শুধু মাত্র জগদীশ চন্দ্র বসুর ছবি যুক্ত করার জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh