পাঠ্যপুস্তকে থাকা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ছবিটিকে বিকৃত করা হয়েছে

Published on: June 24, 2023

প্রাথমিক চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ‘কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস’ সম্পর্কিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছবিটিতে দেখা যায়, পানিতে ডুবে যাওয়া এক কিশোরীকে উদ্ধার করে মুখে মুখ লাগিয়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিচ্ছে একটি যুবক। এখানে উদ্ধারকারী এবং উদ্ধারকৃতের বিপরীত লিঙ্গের কারণে এক ধরনের যৌন ইঙ্গিতময়তা তৈরি হচ্ছে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রসিকতা করছেন অনেকে। কেউ কেউ দাবি করছেন, তাদের সময়কার ক্লাসের বইতে এসব চিত্র ছিল না, এবং চলতি বইতে নর-নারীর এমন ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে আপত্তিকর।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ মাধ্যমিকের জীববিজ্ঞান বইয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ডুবে যাওয়া মানুষকে বাঁচানোর পদ্ধতি বিষয়ে সচিত্র শিক্ষা দেয়া হচ্ছে । কিন্তু বইতে কখনোই বিপরীত লিঙ্গের দুজনকে চিত্রায়িত করা হয়নি, বরং একজন শিশু এবং একজন বয়স্ক মানুষকে এঁকে দেখানো হয়েছে । ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে শিশুটির আদল বদলে তাকে একজন নারীর রূপ দেয়া হয়েছে, যার ফলে ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে


ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বাংলাদেশে খুব অহরহ ঘটা একটি দুর্ঘটনা। ইউনিসেফ এর  গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যবরণ করে, অর্থাৎ দিনে গড়ে প্রায় ৩৮ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় । সামান্য সচেতনতা এবং সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োগে এই সংখ্যাটা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে পারে। এজন্য বাংলাদেশের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ‘প্রাথমিক চিকিৎসা’ বিষয়টা বিভিন্ন ক্লাসেই পড়ানো হয়ে থাকে।

এরই পটভূমিতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র বইয়ে পানিতে ডুবে যাওয়া মানুষকে উদ্ধারের পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে।

বাংলা মাধ্যমের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে একাধিক লেখকের লেখা পাঠ্যপুস্তক হিসেবে স্বীকৃত এবং বাজারে প্রচলিত । এদের মধ্যে অধ্যাপক গাজী আজমল এর লেখা জীববিজ্ঞান ২য় পত্রের ২০১৭ মুদ্রণের ১৮০ তম পৃষ্ঠায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কে নিম্নের বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে।

 

এখানে প্রাপ্ত চিত্র-৫ এর সাথে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির সাদৃশ্য রয়েছে ।

একই লেখকের ‘জুন ২০২০’ এ প্রকাশিত সংস্করণটিও সংগ্রহ করে সেখানে একই ছবি পাওয়া গেল। তবে এই সংস্করণে ছবিটি চার রঙে ছাপা হয়েছে।

উভয় ছবিতেই একটা ডুবন্ত শিশুকে দেখা যাচ্ছে। অপর একজন ব্যক্তি পানিতে দাড়িয়েই শিশুটির মুখে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাম পাশের বর্ণনা থেকে ‘করনীয়’ হিসেবে জানা যাচ্ছে, ডুবন্ত ব্যক্তিকে টেনে এনে উদ্ধারকারী ব্যক্তি নদী বা বিল-পুকুরের পাড়ে একটু দাঁড়ানোর জায়গা পেলে সঙ্গে সঙ্গে মুখ থেকে মুখে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে ।

এই প্রতীকী ছবিতে সেই নির্দেশিকা অনুযায়ীই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ছবিতে এই শিশুটিরই মাথায় দীর্ঘ চুল বসিয়ে এবং শরীরে মেয়েলী একটি পোষাক দিয়ে এর মধ্যে এক ধরনের যৌন ইঙ্গিতময়তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন পৃষ্ঠার মূল ছবির সাথে অল্প কিছুটা আঁকাআঁকি বা লেখালেখি করে কিছুটা কৌতুককর বানিয়ে  অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এমন ২ টা ছবি দেখুন এখানে।

কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ছবিতেও শিশুটিকে  কৌতুকবশত একটি তরুণীতে রূপান্তরের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে ২০২৩ সালে কিছু কিছু শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং এ নিয়ে বিতর্ক ওঠার পরে অনেকেই ভেবে নিচ্ছেন,বাস্তবেই নতুন পাঠ্যপুস্তকে এই ছবিটা ছাপা হয়েছে।

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত ছবিগুলোকে ‘বিকৃত’ সাব্যস্ত করছে।

পাঠ্যপুস্তক দিয়ে আরো কিছু গুজব নিয়ে আমাদের প্রতিবেদন পড়তে পারেন-

পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে থাকা চিত্রটি ধুমপানের নয়

এই পৃষ্ঠাগুলো নতুন পাঠ্যপুস্তকে নেই

ইসকন থেকে প্রকাশিত বইকে নতুন পাঠ্যপুস্তক দাবি

 

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh