Published on: October 14, 2021
”কুমিল্লায় এক মসজিদে ঢুকে হিন্দুরা কুরআন শরীফ ছিড়ে মলমূত্র ত্যাগ করে আসলো”- শিরোনামে একটি খবর এবং ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এটি প্রকৃতপক্ষে ২০১৬ সালের ঘটনা। তখন মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকে এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তার নাম জাহাঙ্গীর এবং তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন না। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।‘
|
গুজবের উৎস
১৪ই অক্টোবর সকাল থেকেই বিভিন্ন ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে এই গুজবটি দেখা যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ,এখানে , এখানে ।
এই পোস্টে বলা হচ্ছে, কুমিল্লায় এক মসজিদে ঢুকে হিন্দুরা কুরআন শরীফ ছিড়ে মলমূত্র ত্যাগ করে আসলো কাদের ছায়াতলে?
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের একটি জামে মসজিদে মল-মূত্র ত্যাগ, ২৫/৩০ টি কোরআন শরীফ ছিড়ে ফেলা, কোরআন রাখার রেল ও মসজিদের ৪ টি জানালার গ্লাস ভাংচুর করার খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যদৌল গ্রামের বাজারের জামে মসজিদে মঙ্গলবার গভীর রাতে হিন্দুরা মূল দরজার তালা খুলে প্রবেশ করে। পরে মসজিদের ৪টি জানালার গ্লাস, কোরআন শরীফ রাখার বেশ কিছু রেল ভাংচুর, ২৫/৩০টি পবিত্র কোরআন শরীফ ছিড়ে ফেলে এবং মসজিদের মেহরাব সংলগ্নস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করে পূণরায় দরজায় তালা আটকিয়ে পালিয়ে যায়।
তথ্যসূত্র হিসেবে এখানে একটি শর্ট লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে ( (http://bit.ly/2e8fCTd, http://bit.ly/2enFIxC)) কিন্তু ক্লিক করে দেখা গেল, সেই লিঙ্ক কার্যকরী নয়।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের ১৮ই অক্টোবর এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেসময় মানসিক বিকারগ্রস্থ জনৈক ‘জাহাঙ্গীর আলম’ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার একটি মসজিদে একজন লোক তালা ভেঙে প্রবেশ করে, সেখানে মলত্যাগ করে এবং মসজিদে থাকা কয়েকটি কুরআনের কপি ছিঁড়ে ফেলে। এসময় মসজিদে কেউ না থাকলেও পরদিন সকালে মুসল্লিরা এসে এটা দেখতে পায় , এবং অনুসন্ধানে জাহাঙ্গীর আলম এর সম্পৃক্ততা ধরা পড়ে।
এ সম্পর্কে ২০১৯ সালে নতুন করে গুজব ভাইরাল হলে বিডিফ্যাক্টচেক এ সংক্রান্ত ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল।
বিডিফ্যাক্টচেকে কুমিল্লার একটি স্থানীয় পত্রিকা, (কুমিল্লার কাগজ) কে উদ্ধৃত করে বলা হয়,
পুলিশ সুপার মো: শাহ আবিদ হোসেন বলেছেন, ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত আসামী মো: জাহাঙ্গীর আলম(৩৫) কে গত ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মো: জাহাঙ্গীর আলম কুমিল্লার আমলী আদালত-২ এর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: তারিক আজিজের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি দেয়ার সময় তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। ঐ ঘটনা ঘটানোর জন্য তাকে অনুতপ্ত হতে দেখা যায়।”
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত
যেহেতু এই ঘটনাটি ৫ বছরের পুরনো ঘটনা, এবং এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কারো সংযোগ ছিল না, তাই সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |