এই লাশের ছবিটি আল আমিনের, মানিক সাহার নয়

Published on: October 15, 2021

সম্প্রতি কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনার একটি মৃত ব্যক্তির ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে। দাবি করা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিটি মণ্ডপ ও প্রতিমা পাহারারত চাঁদপুর হিন্দু যুব মহাজোটের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক সাহা, যাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি হাজীগঞ্জ হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত আল আমিনের। মৃতের পরিচয় এবং বিষয়বস্তু ভুলভাবে উপস্থাপন করায় ফ্যাক্টওয়াচ এমন পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ চিহ্নিত করেছে।

কুমিল্লার এক পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযোগে গত ১৩ অক্টোবর থেকে উত্তেজনা দেখা দেয়। জানা যায়, এ ঘটনায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হামলা ও সংঘর্ষে এ পর্যন্ত চার জনের প্রাণহানি ঘটে। এরই মধ্যে, একি ঘটনার একটি মৃত ব্যক্তির ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। ১৪ অক্টোবর ‘Gobinda paramanik’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি থেকে ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হয় মন্ডপ ও প্রতিমা পাহারারত মানিক সাহা নামের এই ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মানিক সাহা বলে দাবি করা ফেসবুকে এমন আরও কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এখানে এখানে

 

‘Gobinda paramanik’ তার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় একি তথ্য দিয়ে একটি টুইট করেন। এখানে বাম পাশে আরেকজন ব্যক্তির ছবি যুক্ত করে ‘Advocate Dr. Gobinda Chandra Pramanik’ লিখেছেন,

The puja mandapa is guarded
Manik Saha, publicity secretary of Chandpur district branch of Bangladesh National Hindu Youth Grand Alliance was killed.

টুইট দেখুন

 

তবে Gobinda paramanik ছাড়াও টুইটারের একাধিক অ্যাকাউন্টের বরাতে তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ে। ‘The Bite’ লিখেছে,

Two Hindu youths are killed by muslim mobs in Bangladesh during attacks on Durga Puja Pandals

বাংলাদেশে দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে মুসলিম জনতার হামলায় দু’জন হিন্দু যুবক নিহত হয়।  

 

‘Hindu Voice’ -এর টুইট

‘Hindu Voice’ এর টুইটে ‘Abid Hasan’ নামের একজন কমেন্টে লিখেছেন,

মিথ্যা কথা ওর নাম আলামিন হোসাইন। কুমিল্লা পূজা মন্ডবে কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর হাজীগঞ্জ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় তারপর পুলিশের ছোড়া বুলেটে প্রথমে আহত হয় তার পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়।

বস্তুত ফেসবুকের কিছু পোস্টে এই মৃত ব্যক্তিকে ‘কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে শহীদ’ বলে দাবি করা হলে সঙ্গত কারণেই ফ্যাক্টওয়াচ বিষয়টি যাচাই করে দেখে।

 

তথ্য যাচাই

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাজীগঞ্জে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। নিহত ব্যক্তিরা হলেন হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের আল আমিন(১৮), রান্ধুনীমুড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে ইয়াছিন হোসেন (১৫), একই এলাকার আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামীম (১৯) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাবলু (৩০)। দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে

তবে পরবর্তীতে দেশীয় একাধিক সংবাদ মাধ্যমে নিহত ব্যক্তিদের ছবি প্রকাশ করায় ভিজুয়াল ক্লু বিবেচনা করে আমরা ব্যক্তির সঠিক পরিচয় সনাক্ত করতে পারি। হাজীগঞ্জের (চাঁদপুর) স্থানীয় অনলাইন পত্রিকা ‘প্রতিদিনের সংবাদ’ উক্ত ঘটনায় নিহত ৩ এবং গুরুতর আহত ৪ জনের মোট ৭টি ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিগুলোর মধ্যে হলুদ-নীল টি-শার্ট পরা মৃত ব্যক্তির ছবিটিও ছিল। তবে প্রতিবেদন থেকে জানা যায় তার নাম আল আমিন, মণ্ডপ ও প্রতিমা পাহারারত মানিক সাহা নয়।

 

এমনকি এখানে ‘Advocate Dr. Gobinda Chandra Pramanik’ এবং ‘The Bite’ এর টুইটে বাম পাশে সাদা পোশাকে রক্তাক্ত ব্যক্তির ছবিটিও দেখা যাচ্ছে। টুইটগুলোতে তাকেও মুসলিম জনতার হাতে নিহত হিন্দু যুবক বলে দাবি করা হয় যা স্থানীয় পত্রিকার তথ্যের সাথে মানানসই নয়। উপরন্তু, ‘প্রতিদিনের সংবাদ’ তাকে কেবল আহত দাবি করেছে।

ইনকিলাব পত্রিকাতেও সাদা পোশাকে আহত ব্যক্তিটির সাথে ৩ জন নিহতের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

 

হাজীগঞ্জের আরেকটি স্থানীয় পত্রিকা ‘popularbd.news’ – ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের নামসহ ছবি প্রকাশ করলে তাদের পরিচয় আরও স্পষ্ট হয়। দেখুন

 

বিপরীতে কুমিল্লার এ ঘটনায় মানিক সাহা নামের কোন ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য বা ছবি এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত অনলাইনে পাওয়া যায়নি৷ নিশ্চিত তথ্য এলে এখানে সংশোধনী যুক্ত করা হবে।

 

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

হতাহতদের ছবিগুলো যাচাই করে এটা স্পষ্ট যে, হাজীগঞ্জ সংঘর্ষে মৃত আল আমিনের ছবি চাঁদপুর হিন্দু যুব মহাজোটের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক সাহা-র বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ফ্যাক্টওয়াচ এ ধরণের পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করেছে।

সংশোধনী

কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যমে কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত আরও দুজন ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। শুক্রবার বেগমগঞ্জ কলেজ রোড ও ডিবি রোড এলাকায় হামলায় যতন কুমার সাহা (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন এবং আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে ইসকন মন্দিরের পুকুর থেকে প্রান্ত চন্দ্র দাশ নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জানা যায় তিনি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সদস্য ছিলেন। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে। ফলে, মানিক সাহা নামে কোনো ব্যক্তি নিহত হন নি — এই দাবি থেকে ফ্যাক্টওয়াচ সরে আসছে। তবে, মানিক সাহার নামে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত মরদেহটি যে আল আমিনের, এ বিষয়ে ফ্যাক্টওয়াচ নিশ্চিত হয়েছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

 

 

Leave a Reply