তুরস্কে আটকের ভিডিও হামাসের নামে প্রচার

Published on: October 16, 2023

ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অনেক কর্মকর্তা হামাসের হাতে বন্দী হয়েছে – দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভিডিওটি ২০১৬ সালের। ভিডিওতে যাদেরকে দেখা যাচ্ছে, তারা সবাই তুরস্কের সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের দায়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভিডিও ফুটেজটি আঙ্কারার একটি পুলিশ স্টেশনে রেকর্ড করা হয়েছে। যেহেতু এরা কেউই ইসরায়েলের কোনো কর্মকর্তা নন, তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

 

১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও আপলোড করে “হামাস ইজরায়েল যুদ্ধের খবর” নামের একটি পেজ থেকে শিরোনাম দেয়া হয়েছে,

হামাসের প্রকাশিত ভিডিওতে ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা মোসাদের কর্মকর্তারা রয়েছেন যারা হামাসের হাতে বন্দী।#আল-আকসা_মিডিয়া হামাস যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে সেখানে ইসরায়েলি সামরিক ও মোসাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হামাসের কারাগারে রয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ

গুজবের উৎসঃ

জনৈক ব্যক্তির طاهر معصوم  নামের আইডি থেকে ভিডিওটি প্রথমে আপলোড করা হয়েছে। পরবর্তীতে তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

ভিডিও থেকে দেখা যাচ্ছে, আটক ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, তোমরা খুশি? এই অভ্যুত্থানে তোমরা ব্যর্থ হয়েছো। কিছুক্ষণ পরেই তাদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, তোমাদের পরিচয় বলো, বাহিনীতে তোমাদের পজিশন কি?  জবাবে আটককৃত ব্যক্তিরা পর্যায়ক্রমে তাদের নাম ও পদবি বলতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম হাসান কুলাক রিয়ার অ্যাডমিরাল (অনুদিত)।

এ পর্যায়ে এই নামটি ধরে গুগলে সার্চ করা হয়। এতে করে তুর্কি ভাষায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। প্রতিবেদনটির অনুবাদ করে যা জানা যায় তা হলো:

অভ্যুত্থানের চেষ্টার পরে শুরু হওয়া তদন্তে নৌবাহিনীর কমান্ড সরবরাহ বিভাগের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল হাসান কুলাক, জেন্ডারমেরি স্টাফ কর্নেল ওমের কুলাক এবং সুপ্রিম কোর্টের সদস্য হুসেইন কুলাক ভাইদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হুসেইন কুলাকের স্ত্রীর বড় ভাই হলেন সিহান কানসিজ, ইস্তাম্বুলের প্রাক্তন ডেপুটি চিফ পাবলিক প্রসিকিউটর। যিনি এরজেনেকন এবং ওডা টিভির মতো ষড়যন্ত্রের মামলার প্রসিকিউটর।

নেভাল ফোর্সেস কমান্ড সাপ্লাই বিভাগের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল হাসান কুলাক এবং সুপ্রিম কোর্ট অফ আপিল 15 তম সিভিল চেম্বারের সদস্য হুসেইন কুলাক আঙ্কারায় ধরা পড়েছে এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেন্ডারমেরি স্টাফ কর্নেল ওমের কুলাককে নেভেহিরে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত রিয়ার এডমিরাল হাসান কুলাক তার বিবৃতিতে বলেছেন, “ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরফান আরাবাকি বলেছেন, ‘চেইন অফ কমান্ডের মধ্যে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা হয়েছিল।’ অবিলম্বে ঐক্যে এসো বলে বার্তা পাঠালেন। আমার জন্য, ফেতুল্লা গুলেন একজন প্রচারক যিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন। আমি কর্মক্ষেত্রে নামায পড়ি না, তবে আমি যখন বাড়িতে যাই তখন প্রার্থনা করি। আমি মনে করি আকিন ওজতুর্ক এবং তার দল এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা চালিয়েছে। “তারা ফেতুল্লা গুলেন সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতে পারে।”

উক্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু দেখলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা তুরস্কের সাবেক সেনা কর্মকর্তা। অভ্যুত্থানের দায়ে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে।

এ পর্যায়ে ভাইরাল ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডেইলি মেইল থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। প্রতিবেদনটির কিছু অংশ এমন যে  তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনাকারীর অভিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের হাত বেঁধে ক্যামেরায় দেখানো হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের আগে তাদের নাম ও পদমর্যাদা উল্লেখ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফুটেজটি আঙ্কারার একটি পুলিশ স্টেশনে শুট করা হয়েছে। আদালতে হাজির করার আগে তাদের এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

উল্লেখ্য,  হামাসের হাতে ইসরাইলের নাগরিক বা সৈন্য বন্দী আছে তার প্রমাণ বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে মিলেছে। তবে এই ভাইরাল ভিডিওটিতে যাদেরকে দেখানো হয়েছে, তারা কেউই ইসরাইলের নাগরিক নন, বরং তারা তুরস্কের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের দায়ে তারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

তাই ফ্যাক্টওয়াচ সার্বিক বিবেচনায় এ সংক্রান্ত দাবিগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh