Published on: October 17, 2023
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ৯ম পর্যায়” – শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি শেয়ার হতে দেখা গেছে। উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে “কেন্দ্র শিক্ষক” পদের জন্য মাসিক ১৪,৫০০/- টাকা বেতনক্রমে দরখাস্ত চাওয়া হয়েছে। এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা, যারা মাসিক ৫,০০০/- টাকা বেতনে চাকরি করছেন, তাদের কেউ কেউ উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি শেয়ার করে মসজিদভিত্তিক এবং মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের মাঝে বেতনবৈষম্যের জন্য নিন্দা জানিয়েছেন। তবে, বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে এই মর্মে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প কার্যক্রম ৯ম পর্যায়” নামে কোন প্রকল্প নেই এবং বর্তমানে উক্ত প্রকল্পের ৬ষ্ঠ পর্যায় চলমান রয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে, “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম – ৬ষ্ঠ পর্যায়” – শীর্ষক প্রকল্পের সম্মানী মাসিক ৫,০০০/- টাকা। অতএব, মসজিদভিত্তিক এবং মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে মাসিক বেতনের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে। |
এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
Example of the Fake Job Circular
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ৯ম পর্যায়” – শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিটি পড়ে দেখা গেছে সেখানে প্রাক–প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র এবং ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র এর জন্য “কেন্দ্র শিক্ষক” পদে যথাক্রমে ২৭২ জন এবং ২২৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। উক্ত পদগুলোর জন্য মাসিক বেতন দেখানো হয়েছে ১৪,৫০০ টাকা। আবেদনের শর্তগুলো পড়ে দেখা গেছে যে, পদপ্রার্থীকে অবশ্যই সনাতন ধর্মাবলম্বী হতে হবে এবং সনাতন ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। প্রার্থীর আবেদনপত্র এবং জীবন–বৃত্তান্ত সরাসরি (hindutrusts@gmail.com) নামক একটি ই–মেইল ঠিকানায় প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। একটু খেয়াল করলে লক্ষ্য করা যাবে যে, প্রার্থীকে সশরীরে এসে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ বিভিন্ন সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থী অনলাইন থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে তা পূরণ করে ডাক মারফত বা সশরীরে এসে নিয়োগকারীর প্রদত্ত অফিসের ঠিকানায় জমা দিতে পারে। শর্তাবলীতে আরও বলা হয়েছে, লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদেরকে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রজেক্ট এর অনুকূলে নগদ একাউন্টের মাধ্যমে ২২৫/- টাকা প্রেরণ করতে হবে। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির বেশকিছু জায়গায় “প্রকল্প” এবং “প্রজেক্ট” দুটো শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিজ্ঞপ্তিটির যথাযথতা নিয়ে সন্দেহ জাগায়। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি আদতে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট দিয়েছে কিনা তা যাচাই করতে আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সরকারি ওয়েবসাইটটি ঘেঁটে দেখেছি। উক্ত ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ডে গিয়ে দেখা গেছে, গত ১ অক্টোবর ২০২৩ এ হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এই মর্মে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে যে, “একটি প্রতারক চক্র মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে মর্মে অনলাইনে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই বিজ্ঞপ্তিটি অত্র প্রকল্পের নয়।” সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৯ম পর্যায় প্রকল্প নামে কোন প্রকল্প নেই এবং বর্তমানে উক্ত প্রকল্পের ৬ষ্ঠ পর্যায় চলমান রয়েছে। অর্থাৎ, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া।
Warning Notice published by the Hindu Religious Welfare Trust
আবার, যারা মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে মাসিক ৫,০০০/- টাকা বেতনে চাকরি করছেন তারা এই বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকের মাসিক বেতন ১৪৫০০ টাকা দেখে সামাজিক মাধ্যমে মন্দিরভিত্তিক এবং মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের বেতনবৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। কিন্তু, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, “মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম – ৬ষ্ঠ পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের সম্মানী মাসিক ৫,০০০/- টাকা।” অর্থাৎ, মসজিদভিত্তিক এবং মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের মাঝে কোন বেতনবৈষম্য নেই।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ |