বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের বিপক্ষে নৌ-বাহিনী পাঠাচ্ছে?

Published on: October 16, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের বিরূদ্ধে নৌ-বাহিনী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। এই দাবিটির সাথে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর একটি ভিডিও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি মিথ্যা। ভিডিওটি হচ্ছে ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল) এ অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ৭৫ সদস্যের একটি দলের চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ত্যাগ করার সময়ের। বাংলাদেশ নৌবাহিনী কন্টিনজেন্ট ‘ব্যানকন-১৪’ এর আওতায় লেবাননে মোতায়েন করা ‘সংগ্রাম’ নামের যুদ্ধজাহাজে এই নৌ-সদস্যরা যোগদান করবেন। ভূমধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বর্তমানে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘সংগ্রাম’ ইউনিফিলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রয়েছে। জাহাজটি লেবাননের ভূখণ্ডে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে কাজ করছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ 

ভাইরাল ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের বিরূদ্ধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। কিন্তু, ভিডিওর কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সদস্যরা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। সেখানে মূলত বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ৭৫ জন সদস্য ‘ইউনিফিল’ এ অংশ নিতে লেবাননের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে। ফিলিস্তিনের বিরূদ্ধে অবস্থান করা নয় বরং, লেবাননের সমুদ্রসীমা নিরাপদ রাখা এবং মূল ভূখণ্ডে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ অনুপ্রবেশ ঠেকানোই হচ্ছে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়াও এই ভিডিওতে সময় টিভির লোগো দেখতে পাওয়া যায়।

তাই, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির উৎস খুঁজে পাওয়ার জন্য সময় টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে গত ১৩ অক্টোবর আপলোড করা ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও প্রতিবেদন সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ৭৫ সদস্যকে যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়। নৌবাহিনীর এই সদস্যরা লেবাননে মোতায়েনকৃত বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ এ যোগদান করবেন। এই প্রতিবেদনেও ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর অবস্থান সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের আন্ত-বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

উল্লেখ্য, ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল) হচ্ছে লেবাননে জাতিসংঘের একটি শান্তিরক্ষা মিশন। এটা লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরূদ্ধার এবং তা বহাল রাখার জন্য ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল । পরবর্তীতে, ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের পরে এর কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হয়েছিল। বর্তমানে, ইউনিফিল লেবাননে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, লেবাননের সৈন্যদের সমর্থন এবং যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত লোকদের নিরাপদ পুনর্বাসনে সহায়তা করে থাকে।

২০২০ সালের ৯ আগস্ট ইউনিফিলে যোগ দিতে লেবাননের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল বাংলাদেশের যুদ্ধজাহাজ ‘সংগ্রাম’। তখন থেকে যুদ্ধজাহাজটি ‘ইউনিফিল’ এর  অংশ হিসেবে সেখানে নিয়োজিত আছে এবং, লেবাননের ভূখন্ডে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে দক্ষতার সাথে অংশ নিয়ে আসছে। পাশাপাশি লেবানিজ জলসীমায় মেরিটাইম ইন্টারডিকশন অপারেশন পরিচালনা, সন্দেহজনক জাহাজ ও এয়ার ক্রাফটের উপর নজরদারি, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজে উদ্ধার তৎপরতা এবং লেবাননের সামরিক সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ লেবাননে বসবাসরত বাংলাদেশীদের নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছে।

অর্থাৎ, ভাইরাল ভিডিওতে দেখানো নৌ-সদস্যদের মূলত এই যুদ্ধজাহাজে যোগদান করার জন্য পাঠানো হয়েছিল, ফিলিস্তিনের বিরোধিতা করার জন্য নয়।

সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করে ভাইরাল পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh