হামাস ইসরায়েলের “পরমাণু কেন্দ্র” দখল করেনি

Published on: October 17, 2023

এইমাত্র – হামাসের দ’খ’লে ইসরায়েলের পরমানু কেন্দ্র  এমন একটি খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে । তবে অনুসদন্ধানে দেখা যাচ্ছে , হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলের পরমাণু [গবেষণা] কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি পৌছাতে পারেনি।  এছাড়া, এমন কোনো হামলার খবর কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। সঙ্গত কারনে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

৯ই অক্টোবর এমন দাবি সম্পর্কিত ৩ মিনিট ২২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে


ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওর প্রথম ৪০ সেকেন্ডে বলা হয়েছে,

ইসরায়েলের পরমাণু কেন্দ্র ঘেরাও করার পরিকল্পনা করেছে হামাস। জলে, স্থলে, আকাশে- সব পথেই ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এখন এরই সাথে নতুন করে যোগ হচ্ছে ইসরাইলের পরমানু কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞরা ধারনা করেছেন যেকোনো মুহুর্তে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রে ঢুকে যেতে পারে হামাসের যোদ্ধারা । হামাসের যোদ্ধাদের এখন যে পরিমান শক্তি রয়েছে, সেই শক্তি দিয়ে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রে ঢুকে যাওয়া হামাসের আর কিছুই নয়। যেভাবে ইসরাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হামাস ধোকা দিয়েছে, এতে পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও ধোকা দেওয়া হামাসের কাছে কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র।

অর্থাৎ, ক্যাপশনের সাথে ভিতরের বক্তব্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে না । ভেতরের বক্তব্যে কেবলমাত্র পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ক্যাপশনে ইতিমধ্যে পরমাণু কেন্দ্র দখলের দাবি করা হয়েছে।

এছাড়া ইসরাইলের কোন পরমানু কেন্দ্রটি হামাস দখল করেছে, বা দখলের পরিকল্পনা করছে, সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য ক্যাপশনে বা ভিডিওতে নাই।

ইসরায়েল এর এ্যাটমিক এনার্জি কমিশন এর ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলের ৩ টা নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি রয়েছে, যেগুলা হচ্ছে ইসরায়েলের এ্যাটমিক এনার্জি কমিশন ,  সোরেক নিউক্লিয়ার নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার (Soreq Nuclear Research Center) এবং তিরোশ (Tirosh) .

১৯৫২ সালে ইসরায়েলের এ্যাটমিক এনার্জি কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে নেগেভ মরুভূমিতে নেগেভ নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার (Negev Nuclear Research Center) এর কাজ শুরু হয় । ১৯৫৬ সালে ইয়াভনে (Yavne) তে সোরেক নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার ( Soreq Nuclear Research Center) এর কাজ শুরু হয়। গুগল ম্যাপ থেকে দেখা যাচ্ছে, গাজা থেকে সোরেক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট এর দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার, এবং নেগেভ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট এর দূরত্ব ১০৬ কিলোমিটার।

ইসরায়েল এর তৃতীয় নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি, তিরোশ ( Tirosh) কে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র মজুদাগার হিসেবে ধারণা করা হয়। এটি গাজা থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

অন্যদিকে  Federation of American Scientists, Center for Non-Proliferation Studies এবং Carnegie Endowment for International Peace এর বরাত দিয়ে এ্যাটমিক আর্কাইভ ডট কম ইসরায়েলের আরো কয়েকটা সম্ভাব্য নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিজ এর কথা জানাচ্ছে। এগুলো কোনোটাতেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি হয় না, বরং মজুদ করে রাখা হয়। এগুলো হল-

১। এইলাবান ( Eilabun) , গাজা থেকে ১৯৫ কিলোমিটার দূরে
২। কেফার যেখারিয়া ( Kfar Zekharya ), গাজা থেলে ৫৩ কিলোমিটার দূরে
৩। ইয়োদেফাত ( Yodefat), গাজা থেকে ১৮৩ কিলোমিটার দূরে
৪। রাফায়েল ( Rafael) গাজা থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে

এই সকল নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিজ গুলো একটি মানচিত্রে স্থাপন করলে নিম্নরূপ দেখায় । (সবুজ চিহ্নিত আইকনগুলো নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটির অবস্থান বুঝাচ্ছে)

গত ৭ ই অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলের মূল ভূ-খন্ডে ঢুকে পড়ে এবং ইসরাইলী নাগরিক ও সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফ্রান্সভিত্তিক লা মন্ড সংবাদমাধ্যম নিম্নের মানচিত্রের মাধ্যমে ৯ই অক্টোবর পর্যন্ত হামাস সদস্যদের অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষের স্থান চিহ্নিত করেছে। হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলের অভ্যন্তরের সর্বোচ্চ যে স্থনে প্রবেশ করেছে, সেটার নাম ওফাকিম (Ofakim) , যে স্থান থেকে নেগেভ নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার ৮১ কিলোমিটার দূরে এবংসোরেক নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার ৮১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

এই স্থানগুলো আমাদের পূর্বের মানচিত্রে স্থাপন করে হামাস সদস্যদের অবস্থান , এবং ইসরাইলের পরমাণু স্থাপনাগুলোর অবস্থান দেখানোর চেষ্টা করা হল ( লাল চিহ্নিত আইকনগুলো হামাস যোদ্ধাদের অবস্থান , এবং সবুজ চিহ্নিত আইকনগুলো পরমাণু স্থাপনার অবস্থান নির্দেশ করছে) ।

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে যে হামাস যোদ্ধাদের থেকে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। এছাড়া, হামাস যোদ্ধাদের ইসরাইলের কোনো পরমাণু স্থাপনায় আক্রমণ চালানোর কোনো খবরও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই ধরনের ক্যাপশনযুক্ত পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh