“আওয়ামী লীগের মনোনয়ন হারাতে পারে যে সকল সংসদ সদস্য” — ভুয়া ফটোকার্ড

Published on: October 17, 2023

যা দাবি করা হচ্ছেঃ “আওয়ামী লীগের মনোনয়ন হারাতে পারে যে সকল সংসদ সদস্য” শিরোনামে একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ফটোকার্ডে মূলধারার গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। এটিতে ছয়জন রাজনীতিবিদের নাম উল্লেখ করা হয়: মুরাদ হাসান, আনোয়ারুল আজিম আনার, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, শওকত হাসানুর রহমান রিমন এবং ওমর ফারুক চৌধুরী। দাবি করা হচ্ছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই রাজনীতিবিদরা মনোনয়ন হারাতে পারেন।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্তঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। মূল ফটোকার্ডে ডিবিসি নিউজের লোগো ব্যবহার করা হলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিবিসি এ ধরণের কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করে নি। বরং তারা এটি নিশ্চিত করেছে যে, ভাইরাল ফটোকার্ডটি ভুয়া। এ বিষয়ে ছোট একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে ডিবিসি। অন্যদিকে, উক্ত রাজনীতিবিদদের কে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন কিংবা হারাচ্ছেন — এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল কোনো সূত্র থেকে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।

 

ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

ভাইরাল এই ফটোকার্ডে ছয়জন রাজনীতিবিদের মনোনয়ন হারানোর বিষয়ে একটি আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। উক্ত দাবিটি অনুসন্ধান করতে ফটোকার্ডে উল্লেখিত প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। অনুসন্ধানে, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ এ  ‘দ্য ডেইলি স্টার’ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। “আগামী নির্বাচনে আ. লীগ প্রার্থী: বাদ পড়তে পারেন ৯০ এমপি”- শিরোনামে এই প্রতিবেদনটি তাদের নিজস্ব সূত্রের উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছিলো। উক্ত সূত্রে একটি জরিপের উপর ভিত্তি করে দাবি করা হয় যে, প্রায় ৯০ জন বর্তমান সংসদ সদস্য তৃণমূলের সমর্থন হারিয়েছেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ৯০ জন সংসদ সদস্য বাদ পড়তে পারেন বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

তবে উক্ত প্রতিবেদনে কোনো সংসদ সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয় নি।

এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল কোনো মাধ্যম থেকে উক্ত রাজনীতিবিদদের মনোনয়ন পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।

সুতরাং, ভাইরাল এই দাবিটি এই মূহুর্তে যাচাইযোগ্য নয়।

অন্যদিকে, ভাইরাল ফটোকার্ডটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেখানে মূলধারার একটি গণমাধ্যমের পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে। ডিবিসি নিউজের লোগো ব্যবহার করায় এটি প্রতীয়মান হচ্ছে যে, উক্ত খবরটি ডিবিসি প্রকাশ করেছে কিংবা ডিবিসির বরাতে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, সচরাচর ডিবিসি নিউজ যে ধরণের ফটোকার্ড প্রকাশ করে তার সাথে ভাইরাল এই ফটোকার্ডের কোনো মিল নেই।

 

নিচে দুইটি ছবির সাহায্যে বিষয়টি তুলে ধরা হলোঃ


উপরোক্ত ছবিগুলোর মধ্যে প্রথমটি ডিবিসি নিউজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে এবং দ্বিতীয়টি ডিবিসির নাম ব্যবহার করে প্রকাশিত ফটোকার্ড। পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, লোগো ছাড়া ডিবিসির মূল ফটোকার্ডের সাথে ভাইরাল এই ফটোকার্ডের তেমন কোনো মিল নেই।

পুনরায় অনুসন্ধানে, ডিবিসির ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে আরেকটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উপরোক্ত ভাইরাল ফটোকার্ডটিকে ভুয়া চিহ্নিত করে গত ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ এ ডিবিসি নিউজ এই ফটোকার্ডটি প্রকাশ করে। সেখানে ভুয়া এই ফটোকার্ডের তাদের লোগো ব্যবহার করার বিষয়টিও উঠে আসে।

এছাড়া একই দিনে ডিবিসি নিউজ একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়,”ডিবিসি নিউজ এ ধরণের কোনো কার্ড প্রকাশ করেনি। ভাইরাল হওয়া কার্ডটি ভুয়া”।

অর্থ্যাৎ, নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডের সাথে ডিবিসি নিউজের কোনো সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ্য, মূলধারার গণমাধ্যমের পরিচয় ব্যবহার করে ভুয়া এসব ফটোকার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একটি নিবন্ধ পড়ুন এখানে

সুতরাং, ভাইরাল এই ফটোকার্ড নিয়ে কমপক্ষে দুইটি অসংগতি চিহ্নিত করা গিয়েছে। প্রথমত, সেখানে মনোনয়ন হারানোর যে দাবিটি করা হয়েছে তার পক্ষে বা বিপক্ষে এই মূহুর্তে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। অর্থ্যাৎ, দাবিটি এই মূহুর্তে যাচাইযোগ্য না। দ্বিতীয়ত, উক্ত ফটোকার্ডটি বিকৃত করে সেখানে ডিবিসি নিউজের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত, ডিবিসি এ ধরণের কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করে নি।

অযাচাইযোগ্য একটি দাবির সাথে ডিবিসির লোগো ব্যবহার করায় অনেকেই তথ্যটিকে মূলধারার গণমাধ্যম প্রকাশিত সংবাদ ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। যেহেতু, ডিবিসি নিশ্চিত করেছে যে এটি তাদের প্রকাশিত কোনো ফটোকার্ড নয়, তাই ফ্যাক্টওয়াচের সার্বিক বিবেচনায় এই ফটোকার্ডটিকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh