স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন?

Published on: January 6, 2024

যা দাবি করা হচ্ছেঃ এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার ভিডিও।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি মিথ্যা। ভাইরাল ভিডিওতে এই দাবিটির সমর্থনে প্রমাণ হিসেবে যে আলাদা আলাদা ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে মূলত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচন উপলক্ষে ২৯ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি, এরপর ৩ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর মাঠে নামার ব্যাপারে বলছিলেন। সরাসরি সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন সংক্রান্ত কিছুই তিনি বলেননি।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সত্যিই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা সংক্রান্ত কি না — এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। ভিডিওতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্য এবং বিভিন্ন সময়ে  সেনা বাহিনী, র‍্যাব এবং বিজিবির  টহলের ভিডিও ফুটেজ এবং ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা দাবিতে একটি ভয়েসওভার শুনতে পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয় যে, দেশে অস্থিরতা এড়াতে ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে নির্বাচনের সকল দায়িত্ব  হস্তান্তর করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নির্বাচন পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি  বিজিবি এবং র‌্যাব কাজ করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দুঃসাহসিক  সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে রাগন্বিত করেছে এবং অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কোনো নির্বাচনী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত না হলেও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ না করার উদ্দেশ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন ঘোষণা দিয়েছেন।

পরবর্তিতে ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ভিডিও ফুটেজগুলোর উৎস খুঁজে পায় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে দেখা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন সংবাদমাধ্যমের আলাদা আলাদা প্রতিবেদনের ছবি এবং ভিডিও ফুটেজের সাথে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের কিছু ছবি জোড়া লাগিয়েই আলোচিত ভিডিওটি বানানো হয়েছে।

ভাইরাল ভিডিওর শুরুতেই যেই ফুটেজটি দেখতে পাওয়া যায় সেটা সময় টিভির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ ডিসেম্বর আপলোড করা  “২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামছে বিজিবি, আসবে আর্মিও: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী” শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদনের অংশ।  মূলত সেখানে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি এবং ৩ জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনীর মাঠে নামার ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

পরবর্তি ফুটেজটি হচ্ছে যমুনা টেলিভিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গত ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের অংশ। এই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল,  “নির্বাচনে সেনাবাহিনী নামানোর সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই”। এই ভিডিওতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায় যে,  বাংলাদেশের বেশিরভাগ নির্বাচনেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়ে থাকে। এবারের নির্বাচনেও এর ভিন্নতা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন ভোটের আগে এবং পরে মিলিয়ে ১৩ দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। তবে এই ঘটনার সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই বরং নির্বাচন চলাকালীন নিরাপত্তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ, এই দুইটি ভিডিওর কোথাও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি যে সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এছাড়াও, এই ফুটেজগুলোর সাথে আলাদা আলাদা যেই ছবিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে একটি ছবি গত ১২ জুন  বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটি ছিল আড়াইহাজার পৌর নির্বাচনে  দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সংঘর্ষ সম্পর্কিত।  অন্য ছবিটি হচ্ছে সময় টিভির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গত ১১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিং এর সময়কার। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছিলেন, “এদেশে সরকার বদল করতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে সরকার বদল করার কোনো উপায় নেই।”  এই ছবি দুইটিও ভাইরাল দাবিটির সাথে কোনো ভাবে সম্পর্কিত নয়।


অন্যদিকে নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে ফ্যাক্ট ওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh