বাংলাদেশ পুলিশে ভারতীয় নাগরিক নিয়োগের ভুয়া দাবি

Published on: February 6, 2024

বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগে ৮০ হাজার ভারতীয় নাগরিক চাকুরী করছে- এমন একটি দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্যসূত্র হিসেবে যমুনা টিভিকে উল্লেখ করা হচ্ছে এসব পোস্টে। তবে যমুনা টিভিতে, বা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো প্রতিবেদন খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে জনৈক মোহাম্মাদ আনামুল ইসলাম এই খবরটিকে ক্যাপশন হিসেবে রেখে বাংলাভিশন এর একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন । বাংলাভিশন এর কার্ডে লেখা ছিল, বাংলাদেশ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স যায় ভারতে।

২৭ জানুয়ারি তারিখে প্রকাশিত বাংলাভিশন এর মুল খবর থেকে জানা যাচ্ছে, অসংখ্য বাংলাদেশি বেকার থাকলেও বাংলাদেশের শ্রম বাজারে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন৷ জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলার এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এই ভারতীয় নাগরিকরা কোন সেক্টরে চাকরি করছে, কিংবা পুলিশে চাকরি করছে কিনা, অতিথিদের কাছ থেকে এমন কোনো মন্তব্য ডয়েচে ভেলেতে, (বা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে) পাওয়া যচ্ছে না।

২০২০ সালে প্রকাশিত টি আই বি’র একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম (যেমন –কালেরকণ্ঠ , জাগোনিউজ )  জানাচ্ছে, বাংলাদেশের বেসরকারি চাকরির বাজারে এখন ভারতীয়দের দাপট। বিশেষ করে তারা পোশাক, বায়িং হাউজ, আইটি এবং সেবা খাতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন। সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, কনসালটেন্সি এসব খাতেও ভারতীয়রা রয়েছেন। ভারতীয়দের পরেই শ্রীলঙ্কা ও চীনের অবস্থান। তবে মোট বিদেশির কমপক্ষে অর্ধেক ভারতীয়।

এছাড়া, ২০২৩ সালের ১৩ই জুন তারিখে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বের ১১৫টি দেশের ২০,৯৮৮ জন বিদেশি নাগরিক ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি চীনের নাগরিক। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিরা শিল্পকারখানা, উন্নয়ন প্রকল্প, এনজিও, আইএনজিও এবং বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে পুলিশ বিভাগে, বা কোনো সরকারী দপ্তরে কোনো বিদেশী নাগরিক কাজ করছেন- এমন কোনো তথ্য স্বরাষ্টমন্ত্রী দেননি।

বাংলাদেশ পুলিশ এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো লক্ষ করে দেখা গিয়েছে, এখানে  বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিকদের কাছ থেকেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হয়েছে। ফলে কোনো বিদেশী নাগরিকের এখানে আবেদন করার, বা চাকরিপ্রাপ্তির সুযোগ নেই।

জনৈক আলমগির হোসেন আলম বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগেই  ৮০,০০০ হাজার ভারতীয় হিন্দুরা চাকুরী করে  এই ক্যাপশনের সাথে একটি ইউটিউব ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওটির শিরোনাম- ভারতের লোক বাংলাদেশে পুলিশের চাকরি করছে যমুনা টেলিভিশন

মূল ভিডিওতে গিয়ে দেখা গেল, এইচ এম ক্রিয়েশন নামক একটি চ্যানেল থেকে ২০১৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি এই ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল।  ভিডিওটিতে যমুনা টিভির অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘ইনভেস্টিগেশন ৩৬০ ডিগ্রি’ এর একটি এপিসোড খণ্ডিতভাবে দেখানো হয়। ২১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটি অনিয়ম তুলে ধরা হয়। কোনো এক জেলার নাগরিককে অন্য এক জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে পুলিশ বাহিনীতে চাকরির আবেদন করলে ‘জেলা কোটা’র কারনে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পায়। এই অন্যায় সুবিধাটার ব্যাপারেই এই অনুষ্ঠানে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে যেসকল পুলিশ সদস্য এবং চাকরিপ্রার্থীকে দেখানো হয়েছে, সবাই ছিল বাংলাদেশের নাগরিক। ভারতীয় নাগরিক কেউ ছিলেন না।

একই ভিডিওর একটি ক্লিপ শেয়ার করেছেন ভারতীয় নাগরিক জনাব ಮಹಮ್ಮದ್ ಸುಬ್ಬೀರ್  , যদিও সেই ক্লিপে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশী পুলিশ বাহিনীতে চাকরির কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

যমুনা টিভির ভেরিফাইড ইউটিউব পেজ ঘেটে দেখা যাচ্ছে, মূল অনুষ্ঠানটির নাম ছিল – পুলিশ নিয়োগঃ সরিষায় ভুত। এটি ‘ইনভেস্টিগেশন ৩৬০’ নামক নিয়মিত অনুষ্ঠানের ৫০ তম এপিসোড । ২৪ মিনিট ৮ সেকেন্ডের সম্পূর্ণ ভিডিওতে কয়েকটি জেলায় পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগে অনিয়ম ( বাংলাদেশের এক জেলার নাগরিককে বাংলাদেশেরই অন্য এক জেলার নাগরিক হিসেবে দেখানো) তুলে ধরা হয়েছে। তবে ভারতীয় বা বিদেশী কোনো নাগরিকের পুলিশ বাহিনীতে চাকরিপ্রাপ্তির কোনো ঘটনা এই ভিডিওতে দেখানো হয়নি।


যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওয়েবসাইটে ‘ভারতীয় ৮০,০০০ নাগরিক বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করছে’ মর্মে কোনো প্রতিবেদন ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে খুজে পাওয়া যায়নি।

তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh