আম খাওয়ার পর অন্য ৫ খাবার খাওয়ার ব্যাপারে ভুয়া সতর্কতা

Published on: August 29, 2022

আম খাওয়ার পর এই ৫ টি কাজ করলে আপনার মৃত্যু ও হতে পারে-এমন শিরোনামে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। এসব পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, আম খাওয়ার পর কোমল পানীয়, মশলা, দই, ভাত কিংবা করলা খেলে মৃত্যু হতে পারে। তবে ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদরা এই তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে মিথ্যা অভিহিত করছে।

গুজবের উৎস

ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে

লিখিত ফরম্যাট ছাড়া ভিডিও ফরম্যাটেও এই গুজব দেখা গিয়েছে। যেমন- এখানে , এখানে , এখানে

বাংলাদেশের বাইরেও অন্যান্য ভাষায় দেখা গিয়েছে আমের এই গুজব। যেমন এখানে

এসব পোস্টে বলা হয়েছে,

) আম খাওয়ার পর পানি কিংবা soft drinks পান করবেন না

) আম খাওয়ার পর মসলা তেল জাতীয় কোন খাবার খাবেন না

) আম খাওয়ার পর দই কিংবা দুধ আম একসাথে মিক্স করে দুধ ভাত/স্মুদি/মিল্ক শেক বানিয়ে খাবেন না

) আম খাওয়ার পর পর ভাত খাবেন না কিংবা ভাত খেয়েই আম খাবেন না। কমপক্ষে ৩০৪০ মিনিট পর খাবার খাবেন।

) আম খাওয়ার পর করলা খাবেন না

সায়েন্টিফিক্যালি প্রমাণিত যে এই কাজ গুলো করলে আপনার প্রচন্ড পেটে ব্যথা,গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা,হজম শক্তি লোপ পাওয়া,বমি হওয়া সহ বিভিন্ন রকমের পেটের অসুখ হতে পারে।।যেগুলো বারংবার করার ফলে পরবর্তীতে এর ফলাফল মৃত্যু অব্দিও গড়াতে পারে।

লক্ষনীয় এসব পোস্টে কোনো গবেশণাপত্রের রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়নি। নিদেনপক্ষে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ এর মতামত ও জানানো হয়নি এসব পোস্টে।

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান 

এই দাবিগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা যাক।

দাবি ১- আম খাওয়ার পর পানি কিংবা soft drinks পান করবেন না

ফ্যাক্ট চেক : কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমান চিনি থাকে এটা সত্য। ডায়বেটিস রোগীকে ডাক্তাররা কোমল পানীয় খেতে নিষেধ করেন। তবে আমে তুলনামূলক কম চিনি থাকে। এমনকি ডাক্তাররা ডায়াবেটিক রোগীকে প্রতিদিন এক স্লাইস আম খাওয়ার অনুমোদন দেন।

শুধুমাত্র ডায়বেটিক রোগী যদি নিয়ম ভেঙে একইসাথে আম এবং কোমল পানীয় বেশি করে খান, তাহলে সেটা বিপজ্জনক হতে পারে । অন্য সাধারন মানুষদের জন্য এটা মোটেই বিপজ্জনক নয়। তাই ঢালাওভাবে ‘আম খাওয়ার পর কোমল পানীয় খেলে মৃত্যুও হতে পারে’ এমন উক্তি সঠিক নয়।

ভারতে এই আম এবং কোমল পানীয় সম্পর্কিত গুজব অনেক ভাইরাল হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ভারতে একাধিক ফ্যাক্ট চেকিং আর্টিকেল দেখা যাচ্ছে, যেখানে বিশেষজ্ঞরা এই দাবিকে নাকচ করে দিচ্ছেন।

যেমন- The quint এর এই নিবন্ধে ভারতের এ্যাপোলো হাসপাতালের চিফ ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান Dr Priyanka Rohatgi এবং ম্যাক্স হাসপাতালের সিনিয়র গ্যাস্ট্রো এনটারোলজিস্ট Dr Ashwani Setya জানাচ্ছেন, কোক এবং আম খেলে অসূস্থ হওয়ার কোনো নজির নেই। এর সপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাও নেই।

The logical Indian এর এই নিবন্ধে  অন্য দুজন বিশেষজ্ঞ Naznin Hussain, a national executive member of the India Dietic Association (IDA) এবং Jai Singh Chhibbar, associate Chandigarh in charge of Punjabi Jagran এই দাবিকে গুজব হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন।

দাবি ২ – আম খাওয়ার পর মসলা তেল জাতীয় কোন খাবার খাবেন না

ফ্যাক্ট চেক –আম মাখানি কিংবা আম ভর্তা এদেশে খুবই জনপ্রিয় খাবার। এসব খাবারে প্রচুর মশলা এবং সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। কাচা-পাকা আমের সাথে  একসাথে এসব তেল-মশলা খেলে যেহেতু কারো কোনো সমস্যা হয়না, তাই আম খাওয়ার পরে এসব খেলেও সমস্যা হওয়ার দাবি অবান্তর।

দাবি ৩-  আম খাওয়ার পর দই কিংবা দুধ আম একসাথে মিক্স করে দুধ ভাত/স্মুদি/মিল্ক শেক বানিয়ে খাবেন না

ফ্যাক্টচেক – ভাতের সাথে আম এবং দুধ মিশিয়ে একসাথে খাওয়া এদেশে বেশ প্রচলিত। আমের সাথে দুধ মিশিয়ে জুস/লাচ্ছি/মিল্কশেক বানিয়ে খাওয়াও খুব জনপ্রিয়।  এভাবে খাদ্য গ্রহণে কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। কাজেই আম খাওয়ার পরে আলাদাভাবে দুধভাত খেলে কি সমস্যা, সেটা বোধগম্য নয়।

 

দাবি ৪- আম খাওয়ার পরপর ই ভাত খাবেন না কিংবা ভাত খেয়েই আম খাবেন না। কমপক্ষে ৩০-৪০ মিনিট পর খাবার খাবেন।

ফ্যাক্টচেক- একই যুক্তিতে, ভাত এর সাথে আম খেলে যদি সমস্যা না হয় , তাহলে আলাদা খেলে কেন সমস্যা হবে সেটা বোধগম্য নয়।

দাবি ৫- আম খাওয়ার পর করলা খাবেন না ।

ফ্যাক্টচেক- এই দাবির সপক্ষেও ইন্টারনেটে কোনো গবেষণা বা কারো মতামত খুজে পাওয়া যায়নি। বরং কাচা আম এর সাথে করলার তরকারির বেশ কিছু রেসিপি পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। ( যেমন- এখানে , এখানে)

সম্ভবত ,আনারস-দুধ খাওয়ার মতই এটি একটি প্রচলিত কুসংস্কার, যার কোনো ভিত্তি নেই।

খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানের ছাত্র ও গবেষক সৃজনী মন্ডল ফ্যাক্ট ওয়াচ কে জানিয়েছেন , আমে মূলত কিছু carbohydrates, proteins, amino acids, lipids, fatty, vitamins, minerals এবং organic acid । এছাড়াও কিছু phytochemicals (phenolic, polyphenol, pigments, and volatile constituents)

হালকা টক আমে malic এবং citric acids একটু বেশী থাকে। এগুলোর মধ্যে কোন উপাদানের সাথে কারবোনেটেড বেভারেজ/পানি/ দইয়ে থাকা কোন উপাদান বিক্রিয়া করে অ্যাসিডিটি ইন্ডিউস করার মতো কোন নতুন উপাদান সৃষ্টি করার কথা না। করলায় যে সকল ফাইটোক্যমিকাল থাকে তার সাথে বিক্রিয়া করেও এরকম কোন উপাদান সৃষ্টি করতে পারার কথা না।

যদি হতো তাহলে ম্যঙ্গো মিল্কশেক/লাচ্ছি/জুস/ আমদুধভাত খেয়ে মানুষ অহরহ মরতো। উলটো দুধের সাথে আম খাওয়ার উপকারিতা আছে। এদের উভয়ের মধ্যে আছে ট্রিপ্টোফ্যান অ্যামাইনো এসিড যা সেরোটোনিন হরমোন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। এই হরমোন খাওয়ার রুচি ঠিক রাখে, হজমে সহায়তা করে আর ঘুম আনতে সাহায্য করে।

আর পানি খাওয়াটাও জরুরি। আমে যেসকল কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট থাকে তন্মধ্যে অন্যতম দুটি হচ্ছে পেক্টিন ও সেলুলোজ। এর মধ্যে পেক্টিন পানি শোষণ করে জেল তৈরি করে যা গাট হেলথের জন্য ভালো।

সারমর্ম 

যেহেতু এসব দাবির সপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যাচ্ছেনা, তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে ।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply