সৌদি আরবে প্রচলিত চুরির শাস্তির বিধান নিয়ে মেসি কিছু বলেননি

Published on: June 12, 2023

ফুটবল তারকা লিয়নেল মেসি’র দলবদল এর কারন সম্পর্কে একটু ভুয়া উদ্ধৃতি ভাইরাল হয়েছে। এই উদ্ধৃতিতে দাবি করা হচ্ছে, সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ না দিয়ে আমেরিকার ক্লাবে যোগ দেওয়ার কারন হিসেবে মেসি সৌদি আরবের প্রচলিত আইন এবং সেই আইনে চুরির শাস্তির কথা উল্লেখ করছেন। তবে আদতে মেসি এমন ধরনের কোনো কারন উল্লেখ করেননি। পুরু উদ্ধৃতিটাই মেসিবিরোধী ফুটবল সমর্থকদের মাঝে ট্রল/রসিকতা হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে। সঙ্গত কারনে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টকে ‘স্যাটায়ার’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

 

গুজবের উৎস:

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে  , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

 

এসব পোস্টে মেসির ছবি এবং সময় টিভির মনোগ্রামসহ একটি ফটোকার্ড শেয়ার করা হচ্ছে। ফটোকার্ডে লেখা রয়েছে, ‘’সৌদিতে যাইনি কারন, সেখানে চুরির শাস্তি হাত পা কেটে দেওয়া হয়। নাহলে আমি যেতাম ( সৌদি আরব সম্পর্কে : মেসি ) ‘’

ফটোকার্ডের মাঝামাঝি অংশে ‘আর্জেন্টিনার খামার থেকে ছাগল বলছি । যারা ব্রাজিল ফ্যান Follow my page’’ এই কথাগুলো দেখা যায়।

অনুসন্ধানে ‘আর্জেন্টিনার খামার থেকে ছাগল বলছি’ শিরোনামে কোনো ফেসবুক পেজ খুজে পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক ফুটবল ভক্তের মাধ্যমে জানা যায়, এই নামে একটি পেজের অস্তিত্ত্ব ছিল। বর্তমান ফটোকার্ডটি ভাইরাল হওয়ার পরে উক্ত পেজ আর দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত পেজটি বর্তমানে আনপাবলিশড অবস্থায় আছে।

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান:

গত ৮ই জুন সকাল ৭ টা ১২ মিনিটে সময় টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দলবদল নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছেন মেসি  ক্যাপশন দিয়ে  একটি ফটোকার্ড আপলোড করা হয়। এখানে মেসির উদ্ধৃতিতে বলা হয়, অর্থের বিষয় হলে আমি সৌদি আরবকে বেছে নিতাম।



সময় টিভির এই ফটোকার্ডটিই এডিট করে আলোচ্য ফটোকার্ড ( ’সৌদিতে যাইনি কারন, সেখানে চুরির শাস্তি হাত পা কেটে দেওয়া হয়। নাহলে আমি যেতাম) তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। উভয় ছবিতেই মেসি সাদা রঙের একটি জার্সি পরে একই ভঙ্গিতে বসে আছেন এবং ছবির খুটিনাটি অন্য সব আঙ্গিকও একই রয়েছে।

সময় টিভির পেজ থেকে প্রকাশিত ফটোকার্ডের সাথে সংযুক্ত মূল খবরের লিংকে লিওনেল মেসির বিস্তারিত উক্তিটি পাওয়া যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, দলবদলের কারণ হিসেবে মেসি বলছেন,সত্য হচ্ছে, অর্থ আমার জন্য কখনো সমস্যা বা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আমরা (বার্সেলানার সঙ্গে) এখন পর্যন্ত ‍চুক্তির বিষয়েও কথা বলিনি। একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু সেটা আনুষ্ঠানিক ছিল না। লিখিত বা স্বাক্ষরিত ছিল না। আমরা এখনো অর্থ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলিনি। যদি এটা অর্থের বিষয় হতো, তাহলে আমি সৌদি আরব অথবা অন্য কোনো জায়গাকে বেছে নিতাম। আমার জন্য বিশাল অর্থের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সত্য হচ্ছে মায়ামিকে বেছে নেয়ার পেছনে অন্য কারণ আছে, অর্থ নয়।’

অর্থাৎ, আমেরিকার ক্লাব বেছে নেওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ মেসি উল্লেখ না করলেও , সৌদি আরবের প্রচলিত আইন সম্পর্কে মেসি কোনো মন্তব্য করেননি।

আন্তর্জাতিক কিছু সংবাদমাধ্যম অনুসন্ধান করেও মেসির জবানীতে সৌদি আরবের ক্লাব বেছে না নেওয়ার কারণ হিসেবে সৌদি আরবের প্রচলিত আইন সম্পর্কিত কোনো বক্তব্য খুজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়ে মেসির বিভিন্ন অর্জনকে চুরি বা দুর্নীতির দায়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে কতিপয় মহলে । সেই পরিপ্রেক্ষিতেই মেসির সৌদি আরবে গমন, কিংবা সৌদি আরবের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মেসির চুরির শাস্তি কার্যকর নিয়ে বিভিন্ন সময়েই ফুটবল মহলে ট্রলিং চলছিল। সময় টিভির ফটোকার্ডের বিকৃত রূপটি এমনই একটি ট্রল হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তবে, ফেসবুকে কিছু ব্যবহারকারীর পোস্ট থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, তারা এই ট্রলের ব্যাপারটা না বুঝে মেসির উদ্ধৃতিকে সত্য ভাবছেন ।


এ কারণে , বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘স্যাটায়ার’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh