Published on: December 25, 2023
যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট তৈরি করেছে এবং পুলিশ ও নেতাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে– এমন ক্যাপশনে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, পোস্টের ক্যাপশনের সাথে অপ্রাসঙ্গিক এটিএন নিউজের একটি ভিডিও প্রতিবেদন যুক্ত করে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। ক্যাপশনের দাবির সপক্ষে মূলধারার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কিছু পাওয়া যায় না। এছাড়া ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশ যুক্ত্ররাষ্ট্রের আইনে নিয়মবহির্ভূত। তাই ভিত্তিহীন ক্যাপশনের জন্য ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে “বিভ্রান্তিকর” আখ্যা দিচ্ছে। |
বিভ্রান্তির উৎস:
News Report ও চকরিয়া মিডিয়া টিভি নামক দুটি পেইজ থেকে ডিসেম্বরের ২২ তারিখ পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে। দেখুন এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান:
“ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশ করলো যুক্তরাষ্ট্র, পুলিশ ও নেতাদের ভিসা বাতিল” – পোস্টের ক্যাপশনের এই দাবি্র সত্যতা জানতে বাংলাদেশে যুক্ত্ররাষ্ট্র দূতাবাস অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে উক্ত তালিকার সন্ধান করা হয়। দেখা যাচ্ছে, এমন কোনো তালিকা প্রকাশ করে নি যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। পরবর্তীতে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিকদের ওপর আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকার সন্ধান চালানো হয়। দেখা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো তালিকা প্রকাশ করে নি।
উল্লেখ্য, এ বছর ২৪ মে মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে আরোপিত ভিসা নীতির বিবৃতিতে বলা হয়েছিলো, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার অধীনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত আছেন। মার্কিন সহকারী সচিব ডোনাল্ড লু ২২ সেপ্টেম্বর ডেইলি স্টারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির অধীনে বাংলাদেশের যারা নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন তাদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে না। কারণ, নিয়মানুযায়ী ব্যক্তিগত ভিসা বাতিলসহ ভিসার রেকর্ড মার্কিন আইনের অধীনে গোপন রাখা হয়।
নিয়মের বাইরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করে থাকতো তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মূলধারার সংবাদমাধ্যমে সেটির উল্লেখ থাকতো।
এদিকে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে সেখানে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা সম্পর্কিত কোনো সংবাদ নেই, বরং এটিএন নিউজ থেকে ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত “বাংলাদেশকে ‘অ্যালার্ট লিস্ট’ তৈরির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের” শিরোনামের একটি প্রতিবেদন (ইউটিউবে দেখুন এখানে) দিয়ে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। এই ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘কান্ট্রি টেরোরিজম রিপোর্টে’ উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নিয়ে ‘অ্যালার্ট লিস্ট’ তৈরির জন্য মার্কিন প্রকল্পের একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকার বিবেচনা করছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের সহযোগিতার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে দিয়েছে, এটি যাচাই–বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্পষ্টত, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের তালিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাবিত অ্যালার্ট লিস্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি ভিন্ন দুটো তালিকা।
সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট তৈরি করেছে এবং পুলিশ ও নেতাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে– ক্যাপশনের এ দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো সংবাদ পরিবেশন করা হয় নি ভিডিওতে। যেহেতু ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশিত হয় নি তাই কোন কোন পুলিশ সদস্য এবং নেতার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে সেটি জানাও সম্ভব নয়। তাই মিথ্যা ক্যাপশনকে বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ এ পোস্টকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ |