এই ছবিটির দিকে তাকিয়ে কেউ নিজের মানসিক চাপ বুঝতে পারবে?

Published on: February 27, 2023

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে দৃষ্টিভ্রম (Optical illusion) হয় এমন একটি ছবি আপলোড করে ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে এক জাপানি স্নায়ুবিজ্ঞানী এটি বানিয়েছেন। বলা হচ্ছে, আপনি যদি এই ছবির দিকে তাকান, এবং ছবিটি যদি না নড়ে,তাহলে আপনি মানসিকভাবে শান্ত। যদি এটা ধীরে ধীরে চলে সেক্ষেত্রে আপনি একটু চাপে আছেন। আর যদি এটা দ্রুত চলতে থাকে, আপনি খুব ক্লান্ত। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে কোন জাপানি স্নায়ুবিজ্ঞানী এমন মন্তব্য করেনি এবং এ ধরনের অপটিক্যাল ইল্যুশনের ছবি মানসিক চাপ নির্ণয় করতে পারে না। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে। 

গুজবের উৎস 

কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায় ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই ছবিটির অবিকল একটি ছবি yuryfrom নামক ইন্সটাগ্রাম আইডি থেকে ২০১৮ সালের ১৯শে নভেম্বর আপলোড করা হয়। আপলোড করা ছবিতে ইংরেজি এবং ইউক্রেনীয়  উভয় ভাষায় ক্যাপশন পাওয়া যায়।

উক্ত ক্যাপশন পড়ে জানা যায়, yuryfrom এডোবি ইলাস্ট্রেটর নামক সফটওয়ার ব্যবহার করে ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ছবিটি বানিয়েছেন।ছবিটি আকাঁর সময় তিনি “আকিওশি কিতাওকা” ইফেক্ট ব্যবহার করেছেন। ছবিটিতে রঙিন ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর সাদা কালো স্ট্রোক ব্যবহার ব্যবহার করা হয়েছে। একারণে ছবিটি দেখলে মনে হয় গতিশীল। কিন্তু এই ছবির সাথে জাপানি মনোবিদ ইয়ামামোতো হাশিমার কোন যোগসূত্র নেই।

আন্তর্জাতিকভাবে ভাইরাল হওয়া এই ছবিটির সত্যতা যাচাই করে ২০১৮ সালের ২২শে নভেম্বর বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায় yuryfrom ইন্সটাগ্রাম আইডির মালিকের নাম ইউরি পেরেপেডিয়া। তার বয়স প্রতিবেদন প্রকাশের সময় ছিল ৫১ বছর এবং তিনি ইউক্রেনের অলেকসান্দ্রিয়া শহরের অধিবাসী। বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন, এই ছবিগুলোর সাথে মানসিক চাপ নির্ণয়ের কোন সম্পর্ক নেই।

৫ই আগস্ট, ২০১৪ সালে গার্ডিয়ান প্রকাশিত একটা সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে আকিওশি কিতাওকা জাপানের কিয়োটো শহরের রিটসুমেইকান ইউনিভার্সিটির (Ritsumeikan University)  একজন প্রফেসর। তিনি দশ বছর যাবৎ অপটিক্যাল ইল্যুশনের ছবি নিয়ে কাজ করছেন। তার কাজগুলো রিটসুমেইকান ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটেও দেওয়া আছে। “রোটেটিং স্নেক” তার অন্যতম সফল একটি কাজ।

“দৃষ্টিবিভ্রমের ছবি কি মানসিক চাপ নির্ণয় করতে পারে?” এই শিরোনামে ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে Boom India একটা ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে রিটসেমেইকান ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আকিওশি কিতাওকা (যার ইফেক্ট ব্যবহার করে ইউরি পেরিপেডিয়া ভাইরাল ছবিগুলো একেঁছিলেন) বলেন “দৃষ্টিবিভ্রমের ছবি ব্যবহার করে মানসিক চাপ নির্ণয় করা যায় না। এটার সাথে মানসিক চাপ নির্ণয়ের কোন সম্পর্ক নেই।”

একইভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা যেমন Reuters, USA TODAY, NDTV এই দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধান করে এর পক্ষে কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি।

Reuters, USA TODAY, NDTV এর প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

সুতরাং এটি নিশ্চিত যে, অপটিক্যাল ইল্যুশন বা দৃষ্টিভ্রম তৈরি করা ছবি মানসিক চাপ নির্ণয় করতে পারে না। কোন জাপানি মনোবিজ্ঞানী এমন কোন দাবিও করেন নি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh